আসুন গরিব দুখী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই

আ ব ম খোরশিদ আলম খান | বৃহস্পতিবার , ৭ নভেম্বর, ২০২৪ at ৮:৩২ পূর্বাহ্ণ

সপ্তাহের জুমার দিন শুক্রবারকে বলা হয় মুসলমানদের জন্য হজের দিন। এই পবিত্র দিনে জুমার নামাজ ও ইবাদত বন্দেগিতে পবিত্র হজের সওয়াব মেলে। জুমার দিনে শহর গ্রামের প্রতিটি মসজিদের বাইরে বহু ভিক্ষুক গরিব মানুষ আর্থিক সাহায্য বা সামান্য ভিক্ষার আশায় জড়ো হয়। শহরের মসজিদে মুসল্লি বেশি। ভিক্ষুকের সংখ্যাও বেশি। গ্রামে মুসল্লি কম, ভিক্ষুকও কম চোখে পড়ে। আবার শহরে বিভিন্ন ওয়াক্তে নামাজের সময়ও কিছু ফকির মিসকিন দেখা যায়। শহরের প্রায় প্রতিটি মসজিদে জুমার দিনে হাজার দুই হাজার মুসল্লির সমাগম হয়। এমনকি চার পাঁচ হাজার মুসল্লির সমাগম হয় এমন মসজিদও বহু রয়েছে এই শহরে। বড় আশা নিয়ে প্রতিটি মসজিদের বাইরে গরিব অসহায় ভিক্ষুকরা জড়ো হয়। তাদের সংখ্যা ১০/১৫/২০ কিংবা ৩০ জন হতে পারে। কিন্তু কয়জন মুসল্লিই বা এই গরিবদের হাতে টাকাপয়সা তুলে দেন। গরিবদের দান খয়রাত করাই ইসলামের নির্দেশনা এবং প্রিয় নবীর () খাস সুন্নাত। এতে অশেষ পুণ্য মেলে। দেখা যায় জুমার নামাজ শেষে হাজার খানেক মুসল্লি মসজিদ থেকে শূন্য হাতে বের হন, শ’তে দুই চারজন হয়তো দুই চার পাঁচদশ টাকা করে গরিবদের মাঝে দেন। কিন্তু কেন? আপনি ১০০/২০০ টাকা সপ্তাহে একদিন গরিবদের মাঝে দেয়ার কথা ভাবতে পারেন না? শতকরা ২০ বা ৩০ ভাগ সচ্ছল মুসল্লি যদি ঐ গরিবদের প্রতি ১০/২০ টাকা করে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন তাহলে এই গরিব লোকেরা পুরো এক সপ্তাহ সচ্ছলভাবে দিন যাপনে সক্ষম হবে। তারা অন্তত একটি সপ্তাহ দিব্যি হাসি খুশিতে কাটাতে পারবে। আপনাদের এই সম্মিলিত সামান্য আর্থিক সহায়তা তাদের জন্য বড় পাওয়া, বড় কিছু। এভাবে আপনি মানবিক দায়িত্ব পালন করে যেতে পারেন। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে মানবিক, দরদী ও দায়িত্বশীল হলে এই দেশে ‘গরিব’ নামে কেউ থাকবে না। তখন দেশের চেহারাই পাল্টে যাবে। আমাদের সবার মাঝে এ বোধোদয় হোক।

কুরআন মজিদে মহান আল্লাহ পাকের শাশ্বত নির্দেশনা-‘ওয়া’তে জাল কুরবা হাক্কাহু’ ‘তোমরা আত্মীয়স্বজনের হক আদায় করো।’ গরিব আত্মীয়স্বজনের হক তথা অধিকারের প্রতি আল্লাহ পাকের এই বিশেষ নির্দেশনার তাৎপর্য আমরা কতোটা উপলব্ধি করছি তা ভেবে দেখা দরকার। ধনী বিত্তবানরা কতোভাবে টাকা পয়সা খরচ করেন নিজের জন্য ও পরিবারের জন্য। এই খরচ কিছুটা কমিয়ে এনে তাঁরা গরিব অসচ্ছল অসহায় আত্মীয়স্বজনকে নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করতে পারেন। গরিব আত্মীয়দের প্রতি দয়াদানের হাত তাঁরা প্রসারিত করতে পারেন। দরকার শুধু সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা। প্রতিটি ধনী সচ্ছল ব্যক্তির চারপাশে বহু গরিব অসচ্ছল অসহায় আত্মীয়স্বজন থাকে। গরিব বলে তাদেরকে অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করা যাবে না। গরিব আত্মীয় কোনো পরিবারের ছেলেমেয়ে টাকার অভাবে ঠিকমতো পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পারছে না, কিংবা পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে পারছে না তখন খোঁজ নিয়ে এই অসহায় আত্মীয়ের পাশে দাঁড়াতে হবে ধনী আত্মীয়কে। গরিব পরিবারের সন্তানদের কিনে দিতে হবে বই খাতা শিক্ষা সামগ্রী। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে কেউ টাকা পয়সার সংকটে পড়লে তখন এই দুঃসময়ে তাদেরকে সহযোগিতা করে যেতে হবে। কোনো আত্মীয়ের মেয়ের বিবাহ টাকার অভাবে বিঘ্ন ঘটছে তখনো এই ধনী আত্মীয়কে ওদের পাশে দাঁড়াতে হবে। কেউ ঋণগ্রস্ত বা ধার দেনায় বিপর্যস্ত হয়ে আপনি ধনী আত্মীয়ের সাহায্য চায়, তখন তাকে ঋণমুক্তির সুযোগ করে দিতে পারলে মহান আল্লাহ পাক নিশ্চয়ই আপনার ওপর খুশি, সদয় ও সন্তুষ্ট হবেন। জাকাতের টাকায় কিংবা দান অনুদান কর্জে হাসানা দিয়ে ঋণগ্রস্তকে ঋণমুক্তির সুযোগ করে দেয়া আপনার ওপর কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। সারা বছর দেয়া আর্থিক সহায়তা, দানঅনুদান জাকাতের টাকা মনে করে দেয়া যায়। কাকে কতো টাকা দানঅনুদান দেয়া হলো বছর শেষে হিসাব করে জাকাতের টাকা থেকে সমন্বয় করা যেতে পারে। বিজ্ঞ ফকিহ ও উলামায়ে কেরাম এ পদ্ধতিগুলো অনুসরণ উত্তম পন্থা এবং কুরআনহাদিসসম্মত বলে অভিমত ব্যক্ত করে আসছেন। একজন মানুষ কেবল নিজের পরিবারের জন্য টাকা পয়সা রুজি রোজগার করে না। এই রোজগারে অনেকের হক থাকে। যার যা হক তা তাকে দিতে পারার মধ্যেই জীবনের সার্থকতা ও আনন্দ নিহিতএটা যেন আমরা মনে রাখি। কোনো পরিবারে সব ভাইয়ের সমান ধন সম্পদ টাকা পয়সা থাকে না। অসচ্ছল দরিদ্র ভাইকে ধার কর্জ সাহায্য দিয়ে তুলে আনা ধনী ভাইয়েরা যেন কর্তব্য হিসেবে মনে করেন। এই হক প্রদানে গাফিলতি করলে মহান আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবেএটা যেন আমরা ভুলে না যাই। কারো বিপদে ধার দেয়া এবং জাকাতের টাকায় বিপদগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা করার মহত্তম ইসলামী ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সংস্কৃতি চালু করা আজ অনিবার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন অনেক গরিব আত্মীয়স্বজন আছেন যারা চক্ষুলজ্জায় কারো কাছে হাত পাতেন না। এদেরকে খুঁজে খুঁজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। এই জীবনে সচ্ছলতার সঙ্গে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে কতো টাকাই বা দরকার!

অসচ্ছল অসহায় আত্মীয়স্বজন গরিব দুখীর হক না দিয়ে কার জন্য আপনি শত কোটি হাজার কোটি টাকা রেখে যাচ্ছেন! এই অঢেল ধন সম্পদ এই বিপুল টাকা তো দুনিয়াআখিরাতে আপনার জন্য সমূহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তা কী ভেবে দেখেছেন? এই জগতে ভোগীরা মৃত্যুর পর আর স্মরণীয় থাকেন না। কেউ তাদের মনে রাখেন না। কিন্তু যারা স্বার্থত্যাগী ও মানুষের সেবায় উৎসর্গীত হন তারাই যুগে যুগে অমর হয়ে থাকেন। মহান আল্লাহ পাক সবাইকে দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর, গরিব নিকটাত্মীয় এবং পাড়া প্রতিবেশীর হক উপলব্ধির তৌফিক দিন। আমিন।

লেখক : সাংবাদিক

পূর্ববর্তী নিবন্ধহৈমন্তী প্রজ্ঞা
পরবর্তী নিবন্ধউকিল মুন্সী : একজন বিরহী বাউল