আমরা চোখ দিয়ে দেখি। অথচ কখনো কখনো দেখার জন্য আমাদের চোখ দুটো বন্ধ করতে হয়। আমরা ঘুমালে স্বপ্ন দেখি। অথচ কখনো কখনো স্বপ্ন দেখার জন্য আমাদের জেগে থাকতে হয়, চোখ দুটোও খোলা রাখতে হয়।
চোখ বন্ধ করে দেখার এবং চোখ খোলা রেখে স্বপ্ন দেখার এই অসীম ক্ষমতা কেবল সসীম কিছু মানুষ নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে পেরেছেন।
ক্ষণজন্মা সেইসব স্বপ্নবাজ মানুষগুলোকে আমরা অনেকেই চিনি। জেফ বেজোস, বিল গেটস, ওয়ারেন বাফেট, মার্ক জুকারবার্গ, জ্যাক মা, এলন মাস, রতন টাটা, মুকেশ আম্বানী সহ আরও কিছু মানুষ আছেন, যারা গোটা পৃথিবীর অর্থনৈতিক অবকাঠামো বদলে দিয়েছেন। যেহেতু আজকের
আমরা আসলে কী স্বপ্ন দেখবো, সেটা ছোট বেলায় আমাদের বাবা–মা অথবা আমাদের শিক্ষক মহোদয়গণই ঠিক করে দেন। আমরা ঠিক করি না। দুই একটা ব্যতিক্রম হয়তো থাকবে। আমার জানা নেই।
ছাট বেলায় একজন শিশু অথবা কিশোরের মনে যে স্বপ্ন দানা বাঁধে, পরিণত জীবনে সে স্বপ্নই মহীরূহে পরিণত হয়। অথচ ওই বয়সে নিজের ইচ্ছায় স্বপ্ন লালন করা, নিজের অপিনিয়ন স্টাবলিশ করা রীতিমতো দুঃসাহস অথবা তার চেয়ে বেশি কিছু। ওই বয়সে আমরা নিজের ইচ্ছায় স্বপ্নও দেখিনি।
একটা শিশুর জন্মের পর পরই ৯৯.৯৯% বাবা–মা আশা করতে থাকেন যে, তাদের সন্তান বড় হয়ে ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হবে। বাকী প্রফেশনগুলো তো মানুষ ঠেকায় পড়ে, নিরুপায় হয়ে বেছে নেয়। আর অনেকের মতে উদ্যোক্তা হবার চিন্তাতো আমাদের দেশে অসুস্থ মস্তিষ্কের অলীক কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে আশার কথা, অতি সমপ্রতি ‘উদ্যোক্তা হবার চিন্তা’ নিয়ে কিছু প্রগতিশীল মানুষ লজিক্যাল ওয়েতে চিন্তা ভাবনা করছেন এবং কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছেন। আমি সাধুবাদ জানাই তাদের।
যে দেশে প্রজন্মের পর প্রজন্ম একই ফর্মেটে, একই মানসিকতায় বেড়ে ওঠে, যে দেশে অফ ট্রেকের চিন্তাচেতনাকে প্রচণ্ডভাবে ভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়, যে দেশে ব্যাংক ঋণের সুদের হার আকাশচুম্বী। সে দেশে জেফ বেজোস, বিল গেটস এর মতো স্বপ্নবাজ মানুষগুলো কী করে জন্মাবে!
আমার মনে হয়, সময় এসেছে। আর সময় নষ্ট না করার। কাউকে না কাউকে তো এগিয়ে আসতেই হবে। শুরু করতে হবে। গতানুগতিক ধারার বাইরে চিন্তা করতে হবে।
প্রথা ভাঙার লড়াইয়ে শুরুতে কাউকেই পাওয়া যায় না। একাই লড়তে হয়। একাই শুরু করতে হয়। প্রথা ভাঙার জন্য স্রোতের বিপরীতে দাঁড়াতে হয়। ঠিক তেমনি কিছু কিছু মানুষ আপনার আমার অফ ট্রেকের চিন্তা চেতনা দেখে ভ্রু কুঁচকাবে! হু কেয়ার!
চলুন আমি আর আপনি মিলে শুরু করি। আসুন আমাদের সন্তানদের বলি ‘তুমি চাইলে ডাক্তার হতে পারো, সমস্যা নেই। কিন্তু এমন একজন ডাক্তার হবে.. যেন পৃথিবীর বুকে তোমার নামের একটা মাইলফলক রেখে যেতে পারো। তুমি নিজেই যেন হাজার হাজার ডাক্তার তৈরির কোনো স্কিম নিয়ে কাজ করতে পার।
তুমি চাইলে ইঞ্জিনিয়ার হতে পারো, সমস্যা নেই। কিন্তু তুমি এমন একজন ইঞ্জিনিয়ার হবে. গোটা বিশ্বের অবকাঠামো যেন তোমার হাত ধরে বদলে যায়। তোমার প্রতিষ্ঠান যেন লক্ষ লক্ষ ইঞ্জিনিয়ারের স্বপ্নের চারণভূমি হয়।
তোমার জীবনটা চাকরি করে ৯টা–৬টা ফর্মেটে কাটিয়ে দেবার জন্য নয়। তোমার জন্ম শুধু তুমি আর তোমার পরিবার কেন্দ্রিক চিন্তা চেতনার জন্য হয়নি। তোমাকে আরও অনেক বড় পরিসরে চিন্তা করতে হবে। তুমি এমন কিছু করবে, যাতে তুমি নিজেই হাজার হাজার মানুষের জীবন স্বপ্নের মতো বদলে দিতে পারো।
আসুন, পৃথিবীর সেরা স্বপ্নবাজ মানুষদের দেখানো পথে হাঁটি। আসুন, আমাদের সন্তানদের মাথায় ঢুকিয়ে দিই এমনই কিছু স্বপ্নের বীজ। আর সেই বীজকে মহীরুহে পরিণত করার মিশনে আসুন তাদের পাশে থাকি সবসময়।
বিশ্বাস করুন, এই দেশ বদলে যাবে। যাবেই।












