পার্বত্য জেলা রাঙামাটির আসামবস্তি–কাপ্তাই সড়কের ১৮ কি. মি. সড়ক যেন মুগ্ধতার হাতছানি। সড়কটির এক পাশে কাপ্তাই হ্রদের নীল জলরাশি অন্যদিকে সবুজ পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য যে কাউকেই বিমোহিত করে তুলে। দেশের বিভিন্নস্থান থেকে যেসব পর্যটক রাঙামাটি ঘুরতে আসেন এক পলকেই তাদের সকলেরই দৃষ্টি কেড়ে নেয় এই সড়কটি।
রাঙামাটিতে ঘুরতে আসা বেশিরভাগ পর্যটক এবং স্থানীয়রা এই সড়কটি দিয়ে অতি অল্প সময়ের মধ্যে কাপ্তাই উপজেলায় যাতায়াত করেন। সড়কটিকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে বেসরকারী পর্যটন স্পট বড়গাঙ, রাইন্যা টুগুন, বেরান্নে লেক এবং বাগী লেক ভ্যালী। এছাড়া এই সড়কে পাশে রয়েছে বৌদ্ধদের ধর্মীয় গুরু ও পরিনির্বান প্রাপ্ত মহাসাধক সাধনানন্দ মহাস্থবির (বনভান্তের) জন্ম স্থানে স্মৃতি মন্দির। এছাড়াও রয়েছে ক্ষুদ্র–নৃ গোষ্ঠীদের গ্রাম ও তাদের জীবনযাত্রা। প্রতিদিন এই মন্দির দেখতে শত শত পর্যটক ভিড় জমান। এছাড়াও সড়কের পাশে তৈরি করা হয়েছে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) রাঙামাটির সদর উপজেলা অফিস সূত্রে জানা যায়, বিগত ২০১৭ সালে ১৩ জুন ভয়াবহ পাহাড় ধসের ফলে সড়কটিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়। পরবর্তীতে আকর্ষণীয় করে তুলতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই সড়কে তিনটি নতুন সেতুসহ প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ লেইনে উন্নিত করা হয়েছে। রাঙামাটি সদর উপজেলা এলজিইডি অফিস জানিয়েছেন, আগামী জুন মাসের মধ্যে সড়কটির কাজ পুরোপুরি শেষ হবে। এদিকে, কুমিল্লা থেকে রাঙামাটি ঘুরতে আসা পর্যটক শাফিন বলেন, আমি এর আগেও রাঙামাটি এসেছি। এই সড়কে আসলে লেক পাহাড় দেখলে মনের বিষণ্নতা কেটে যায়। ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে আসামবস্তি–কাপ্তাই সড়কে ঘুরতে আসা পর্যটক সালেহ হোসাইন বলেন, রাঙামাটি থেকে কাপ্তাই যাওয়ার আসামবস্তি সড়কটি খুবই সুন্দর। একপাশে পাহাড় এবং একপাশে কাপ্তাই হ্রদের সৌন্দর্য এটা সত্যিই উপভোগ করার মতো।
রাঙামাটি শহরের বাসিন্দা রুপেন ত্রিপুরা বলেন, আসামবস্তি হয়ে যে সড়কটি কাপ্তাই পর্যন্ত গেছে তা আমাদের জন্য খুবই উপকৃত হয়েছে। এই সড়কটি মাঝ খানে কিছুদিন চলাচলের অনুপযোগী ছিল। কিন্তু বর্তমানে সড়কটি নতুন করে উন্নীত করা হয়েছে। এর ফলে আমরা প্রতিদিন বিকেলে আসামবস্তি হয়ে মোটরবাইক নিয়ে চলাচল করি।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের রাঙামাটি সদর উপজেলা প্রকৌশলী প্রনব রায় চৌধুরী বলেন, কাপ্তাই– আসামবস্তি সড়কের ১৮ কি. মি. সড়কটি বর্তমানে দুই লেইনে উন্নীত হয়েছে। রাঙামাটি এলজিইডির জন্য এই সড়কটি একটি ট্রেড মার্ক। এই সড়কটি রাঙামাটিতে আগত ট্যুরিস্টদের জন্য খুবই আকর্ষণীয় একটি স্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। তিনি আরো বলেন, এই সড়কের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বরাদম এলাকায় নতুনভাবে নির্মিত করা হয়েছে লাভ পয়েন্ট। যা ইতিমধ্যে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দু হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
রাঙামাটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইিডি) নির্বাহী প্রকৌশলী আহামদ শফি বলেন, রাঙামাটি থেকে কাপ্তাই যাওয়ার জন্য এটি হচ্ছে একটি বিকল্প সড়ক। এই সড়কটির ফলে রাঙামাটি থেকে কাপ্তাইয়ের দূরত্ব প্রায় ২০ কি. মি. কমে গেছে।
তিনি বলেন, রাঙামাটিতে আগত পর্যটকরা এই সড়ক দিয়ে ভ্রমণ করলে লেক এবং পাহাড়ের সৌন্দর্য একসাথে উপভোগ করতে পারে। এই রাস্তার গুরুত্ব অপরিসীম। পর্যটক যতই বেশি হবে দৃষ্টিনন্দন এই সড়কের পাশ ঘেঁষে গড়ে উঠবে নতুন নতুন পর্যটন স্পট। পর্যটন স্পট গড়ে উঠলে রাঙামাটির অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এই সড়ক।