কারাবন্দি বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর মুক্তি দাবি করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া কোনো মামলায় সাজা হয় নি। অথচ সাজার চেয়েও তিনি বেশি সময় কারাগারে আছেন। জেল আইনে ছয় বছর সাজা এরই মধ্যে ভোগ করে ফেলেছেন। যদি সাজাও হতো, তাহলেও তো তাকে এতদিন কারাগারে থাকতে হতো না। বাংলাদেশে আইনের শাসনের নামে যে অপশাসন চলছে আসলাম চৌধুরী তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এটা সরকারের প্রতিহিংসার প্রকৃত উদাহরণ। তাকে নিয়ে যে অন্যায় চলছে, সেটা একদিন আল-জাজিরার মতো বিশ্বের সব সংবাদ মাধ্যমে খবর হয়ে উঠে আসবে। এজন্য সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে।
গতকাল শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন আমীর খসরু। আসলাম চৌধুরী মুক্তির দাবিতে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, নগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, সদস্য সচিব মোস্তাক আহম্মেদ খান, বিএনপি নেতা এম এ আজিজ, মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, এসএম সাইফুল আলম, কাজী বেলাল উদ্দিন। প্রসঙ্গত, ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ কানেকশন’র অভিযোগে ২০১৬ সালের ১৫ মে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আসলাম চৌধুরীকে।
আমীর খসরু আরো বলেন, জজ কোর্ট, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট থেকে পাঁচ বছর পর সে (আসলাম চৌধুরী) সব মামলায় জামিন পেল। সবশেষ মামলায় জামিন পাওয়ার পরও গত ৩ জানুয়ারি তাকে আবার আট বছর আগের ঢাকার শাহবাগ থানার একটি নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। ওই মামলায় সে আসামিও ছিল না। আদালতে আবেদন করে পুলিশ তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখায়। তিন দিনের রিমান্ডে নেয়। কিন্তু একদিন জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকি দুই দিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একমাসের সময় চেয়ে আদালতে আবেদন করে। যার শুনানি আগামী ৯ মার্চ তারিখ নির্ধারণ করেছে আদালত।
খসরু বলেন, যারা আসলাম চৌধুরীকে মামলা দিয়ে, আদালতে সময়ের আবেদন করে, নানা কৌশলে জেলে রাখছেন, তারা এই প্রক্রিয়া থেকে সরে আসুন। আসলাম চৌধুরীকে নিয়ে যা হচ্ছে, আল-জাজিরার মতো বিশ্বের সব জায়গা থেকে একদিন সেটা খবর হয়ে উঠে আসবে। সুতরাং তার নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিন। তাকে মুক্তি দিন। বিশ্ব খুব ছোট হয়ে গেছে। বিশ্বের দৃষ্টিগোচরের বাইরে খুব বেশিদিন থাকা সম্ভব না। আজ না হয় কাল দায়ভার ভোগ করতেই হবে। বাংলাদেশে অনেকেই এভাবে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেছে, শেষ রক্ষা হয়নি। জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ক্ষমতা দখল করে টিকে থাকা যায় না।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের পর তার বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছিল, তাতে ছয় মাসের মধ্যেই জামিন পেয়ে গেছেন। কিন্তু তাকে মুক্তি না দিয়ে শতাধিক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। জামিন নিতে গেলে সরকার বারবার সময়ের আবেদন করে। এর অর্থ হচ্ছে তাকে জেলে আটকে রাখা। এভাবে শুধু সময়ের আবেদন করে তাকে অন্যায়ভাবে পাঁচ বছর ধরে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। এতে বুঝা যায় দেশে কি চলছে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতা-অর্থের ভাগাভাগির মহোৎসব চলছে। দেশে কোনো সরকার নাই, আইনের শাসন নাই, মানুষের অধিকার নাই। আদালত ও পুলিশ সবাইকে সম্পৃক্ত করে প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
খসরু বলেন, আসলাম চৌধুরী একজন সিনিয়র রাজনীতিবিদ, একজন চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, শিক্ষিত ভদ্রলোক। তিনি বাংলাদেশের একজন সিনিয়র রাজনৈতিক নেতা। দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম উত্তর জেলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। উনার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম উত্তর জেলায় বিএনপি অনেক শক্তিশালী হয়েছে। এর পরিণামে তিনি ক্ষমতা দখলকারীদের আইনের অপশাসনের শিকার হয়েছেন। তার সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক, নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, মাফিয়া রাষ্ট্রের যে সংজ্ঞা সেটা আজ বেশি পরিচিতি পেয়েছে। আল-জাজিরাতে মানুষ দেখেছে কিভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা হচ্ছে। ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য, পরিবারতন্ত্র ধরে রাখার জন্য, দুর্নীতি-লুটপাট চালানোর জন্য কিভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা হচ্ছে এটা আল-জাজিরার প্রতিবেদনে প্রমাণ হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশের জনগণ সবসময় নিজের পথ বেছে নিয়েছে। ১৯৭১ সালে নিয়েছে, ভাষা আন্দোলনের সময় নিয়েছে, এরশাদের বিরুদ্ধে নিয়েছে, ওয়ান-ইলেভেনের সময়ও নিয়েছে। ওয়ান-ইলেভেনে যারা ছিল, জনগণ যখন সংগঠিত হয়ে আন্দোলন শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন তারা লেজ গুটিয়ে পালিয়েছিল। সুতরাং জনগণ এবারও পথ বেছে নেবে, এই সরকারের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী কর্মসূচি শুরু হয়ে গেছে। জেলায় জেলায় কর্মসূচি শুরু করে দিয়েছি। যখন যা প্রয়োজন আমরা সময়মতো করব। রাজনৈতিক দল আর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই এক না। আমরা তো কোনো রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি না, আমাদের তো রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, আইনের শাসন বলে আর কিছু নেই। যখন জনগণের ভোট নির্বাচিত হয় তখন সেটা সরকার। কিছু লোকের মাধ্যমে দখল করে যখন ক্ষমতায় আসে তখন সেটা রিজিম। দখল করে ক্ষমতায় থাকা রিজিম দেশটা দখলের জন্য তারা এমন পর্যায়ে চলে গেছে। কোর্ট, পুলিশ সবাইকে সম্পৃক্ত করে প্রজেক্ট করেছে। এ প্রজেক্টের মাধ্যমে বেআইনিভাবে ক্ষমতায় থাকবে।