আগামী ৬ জুন ২০২৪–২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব সংসদে পেশ করা হবে। এদিন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় বাজেট উত্থাপন করবেন। জানা গেছে, ২০২৪–২৫ অর্থবছরের বাজেট হবে প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকার, যা হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আকারের বাজেট। এবারের বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে।
তবে শিক্ষাখাতে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর ব্যাপারে শিক্ষাবিদরা দাবি উত্থাপন করেছেন। বলেছেন, বিগত দশ বছর ধরে এ খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলে আসা হচ্ছে। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়, টাকা খরচ করার জায়গা নেই। একথা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও উন্নত নয়। এমন একটি বাজেট প্রণয়ন করা উচিত এবং এমন কিছু উদ্যোগ নেওয়া উচিত, যাতে করে শিক্ষাখাতে বাজেটের বরাদ্দ ও ব্যবহার দুটিই নিশ্চিত করা যায়।
আসন্ন ২০২৪–২০২৫ অর্থবছরের বাজেটে দুই মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বরাদ্দ কমপক্ষে ১৫ শতাংশ দাবি করা হয়েছে গণসাক্ষরতা অভিযানের মতবিনিময় সভায়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বাজেট বিষয়ক আলোচনাপত্র উপস্থাপন করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের উপ–পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি আলোচনাপত্রে বলেন, টাকার অঙ্কে বরাদ্দ বৃদ্ধি হলেও শতাংশে বরাদ্দ কমেছে। আবার যে অর্থ বরাদ্দ হয় তাও আবার শতভাগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। উল্টোদিকে সময়মত অর্থছাড় না হওয়াকেও কেউ কেউ দুষছেন। গত কয়েকদিন আগেও আমরা দেখেছি সংশোধিত বাজেটে শিক্ষা খাত থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা ফেরত নেওয়া হয়েছে। আমাদের দাবি অন্ততপক্ষে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। অর্থ সংস্থানের জন্য প্রয়োজনে এডুকেশন সারচার্জ চালু করা এবং বিভিন্ন ব্যাংক ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সিএসআর ফান্ডের অর্থ ব্যবহার করা যেতে পারে।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষার মানোন্নয়নে সমন্বিতভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষায় প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি পেয়েছে, এবার গুণগত মান নিশ্চিতে আমাদের কাজ করতে হবে। সরকার অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে, ভবন দিচ্ছে– এখন শুধু সমন্বয় করে বাস্তবায়ন প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বাস্তবায়নের দায়িত্বে যারা আছেন তাদের অদক্ষতার জন্য যদি টাকা ফেরত যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। শিক্ষকতায় তরুণদের আকর্ষিত করতে হলে সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধিসহ প্রশিক্ষণ, চাকরির পরিবেশ ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে নইলে তারা অন্য পেশায় চলে যাবেন। শিক্ষা আইনের খসড়া কেন আলোর মুখ দেখছে না এ ব্যাপারে আমি উদ্যোগ নেবো। উপবৃত্তির অর্থবৃদ্ধির দাবিও যৌক্তিক। আমি এর সঙ্গে একমত এবং এই সুপারিশটিও যথাযথ জায়গায় পৌঁছানোর চেষ্টা করবো।’
অন্যদিকে, ‘বাজেট: গণমানুষের ভাবনা’ শীর্ষক সিপিবি আয়োজিত এক সভায় বক্তারা বলেন, আসন্ন বাজেটে খাদ্য, কর্মসংস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ও বাসস্থানের নিশ্চয়তার জন্য বরাদ্দ সুনিশ্চিত করতে হবে। ওই বরাদ্দ যাতে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি ছাড়াই খরচ হয়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁরা বলেন, বাজেটে কর্মসংস্থান ও শিক্ষায় জোর দিতে হবে।
এছাড়া শিক্ষাবিদরা বলেন, ‘এদেশের শিক্ষাখাতে সংকটের একটি বড় কারণ হচ্ছে আর্থিক বিনিয়োগে দীনতা। কুদরত–ই–খুদা শিক্ষা কমিশনে বলা হয়েছিল, শিক্ষাখাতে জিডিপির বরাদ্দ করা অর্থের পরিমাণ হবে ৫ থেকে ৭ শতাংশ; কিন্তু আমরা পাচ্ছি ২ শতাংশের কম–বেশি। এতে শিক্ষকদের আমরা এতটাই দরিদ্র অবস্থায় রেখেছি যে, তাদের থেকে আমরা মেধাবৃত্তিক শিক্ষাদানের আশা করতে পারি না। আমরা যদি প্রত্যাশা করি, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণি পাওয়া একজন শিক্ষার্থী প্রাইমারিতে শিক্ষকতা করতে যাবে–এটা তার প্রতি অন্যায় করা হবে। কেননা, সে শিক্ষাই নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষক হবে–এমন প্রত্যাশা মাথায় রেখে।
তাঁরা বলেন, শিক্ষাখাতে আমাদের একটি সুশৃঙ্খল নীতি দরকার। ২০১০ সালের যে শিক্ষানীতি, এটাও কিন্তু বাস্তবায়ন হলো না। যা আছে সব কাগজে–কলমে, বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ কিংবা ব্যবহার নেই। সংকট মোচনের সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সদিচ্ছা। শিক্ষাখাতকে বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় মাধ্যম হিসেবে স্বীকার করতে হবে রাষ্ট্রকে এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে।