আসছে ১১ কার্গো এলএনজি

দুয়েকদিনের মধ্যে দুটি, আগামী মাসে নয়টি গ্যাস প্রবাহ স্বাভাবিক থাকবে

হাসান আকবর | বুধবার , ২৬ মার্চ, ২০২৫ at ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ

দুয়েকদিনের মধ্যে দুটি এবং আগামী মাসে নয়টি, মোট ১১ কার্গো এলএনজি দেশে পৌঁছাবে। এই এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) দেশের গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে মহেশখালী থেকে প্রতিদিন ৯৮০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে গ্যাসের সংকট অনেকটা কেটে গেছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যে গ্যাস আসছে তাতে আগামী দুই মাসের বেশি সময় দেশে গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে এবং কোনো সংকটের আশঙ্কা নেই। দেশের এলএনজি সরবরাহের ইতিহাসে এর আগে কখনো একসাথে এত বেশি যোগান ছিল না বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে গ্যাসের সংকট পুরনো। চাহিদা ও যোগানের মধ্যে সবসময় ফারাক থাকায় গ্যাসের সংকট লেগে থাকে। এলএনজি আমদানি ব্যাহত হলে চট্টগ্রামের গ্যাস সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে আশুগঞ্জবাখরাবাদ পাইপলাইনকে ওয়ানওয়ে করে চট্টগ্রামকে পুরোপুরি এলএনজি নির্ভর করে ফেলায় এই অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়। এলএনজি আমদানিতে গতি আসায় চট্টগ্রামে গ্যাসের যোগান ও প্রবাহ বেড়েছে। আগামী অন্তত দুই মাস এই সরবরাহ অব্যাহত থাকবে জানিয়ে সূত্র বলেছে, কয়েকদিনের মধ্যে দুটি এবং আগামী মাসে ৯ কার্গো এলএনজি দেশে পৌঁছাবে; যা দেশের গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দেশে এলএনজি সরবরাহ শুরু হয় ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট। ওইদিন প্রথমবারের মতো কঙবাজারের মহেশখালীতে ভাসমান টার্মিনালের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ করা হয়। কিন্তু প্রায় ৭ বছরে এর আগে কখনো একসাথে ১১ কার্গো গ্যাসের যোগান ছিল না। চলতি মাসের বাকি সময়কালে দুটি এবং আগামী মাসে ৯ কার্গো এলএনজি সরবরাহ হবে।

একটি কার্গোর ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৪০ হাজার ঘনমিটার থেকে ১ লাখ ৬৬ হাজার ঘনমিটার লিকুইড গ্যাস, যা গ্যাসিফিকেশনের পর ৬০০ গুণ বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন ৯৮০ মিলিয়ন ঘনফুট করে গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হলে ১১ কার্গো গ্যাস দেশের অন্তত ৪০ দিনের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে। ফলে আগামী অন্তত দুই মাসের এলএনজি পাইপলাইনে রয়েছে। এটা দেশের এলএনজির প্রবাহ স্বাভাবিক রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

বর্তমানে দেশের দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩,২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে স্থানীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে প্রায় ২,২০০,৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বাকি ঘাটতি মেটাতে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। নতুন ১১ কার্গো এলএনজি দেশের গ্যাস সরবরাহে স্থিতিশীলতা আনবে এবং শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও আবাসিক খাতে গ্যাস সংকটের সমস্যা থাকবে না বলে আশা করা হচ্ছে। তাছাড়া শীত চলে যাওয়ায় পাইপলাইনে গ্যাসের স্বাভাবিক প্রবাহে কোনো সমস্যা হবে না।

গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে শিল্প ও বিদ্যুৎ খাতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে। বিশেষ করে দেশের রপ্তানিমুখী শিল্পখাত, যেমন বস্ত্র ও পোশাক খাতে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে উৎপাদন ব্যাহত হবে না। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত হলে লোডশেডিং কমে আসবে, যা শিল্প উৎপাদন ও সাধারণ জনজীবনে স্বস্তি আনবে।

বাংলাদেশের নিজস্ব গ্যাসক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন ধীরে ধীরে কমছে। ফলে চাহিদা পূরণে আমদানি নির্ভরতা বাড়ছে। সরকার দীর্ঘমেয়াদে এলএনজি আমদানির জন্য বিভিন্ন উৎসের সঙ্গে চুক্তি করছে এবং আন্তর্জাতিক বাজার থেকে স্পট কার্গো সংগ্রহ করছে। এলএনজির দাম ও বৈশ্বিক সরবরাহ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে ভবিষ্যৎ গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি নির্ধারিত হবে। তবে আপাতত নতুন ১১ এলএনজি কার্গোর আগমনে দেশের গ্যাস সেক্টরে স্বস্তি দেখা দিয়েছে।

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির একজন কর্মকর্তা জানান, গ্যাসের যোগান ঠিকমতো রয়েছে। প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। গ্যাসের প্রেসারও স্বাভাবিক রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাঁটার চেষ্টা করেছেন তামিম
পরবর্তী নিবন্ধসন্‌জীদা খাতুনের চিরপ্রস্থান