আসছে নতুন শিক্ষাক্রম সবার মনে আশার সঞ্চার

| বৃহস্পতিবার , ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ

আগামী ২০২৫ সাল থেকে পুরোপুরি নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হচ্ছে। এতে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কোনো পরীক্ষা দিতে হবে না। আর নবম ও দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক কিংবা বাণিজ্যের মতো বিভাগ থাকবে না। ২০২৩ সাল থেকে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা থাকবে না। কথাগুলো জানালেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে গত সোমবার জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা উপস্থাপনের পর সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
১৪ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা অনুযায়ী পাবলিক পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দশম শ্রেণির পাঠ্যক্রম অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষা হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে দুটি পরীক্ষা নিয়ে সেই দুই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসির ফল দেওয়া হবে। অন্য শ্রেণিতে হবে সমাপনী পরীক্ষা, সমাপনীতে ধারাবাহিক মূল্যায়নের সঙ্গে সামষ্টিক মূল্যায়ন করা হবে। শিখন সময় কতটা হবে, তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। সামষ্টিক মূল্যায়নের পাশাপাশি ধারাবাহিক মূল্যায়নেও গুরুত্ব দিয়েছি।
গত কয়েক বছর ধরে এই দুটো পরীক্ষার পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা চলছে। অনেকেই বলছেন, এত ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে এরকম পরীক্ষায় বসিয়ে তাদেরকে চাপের মুখে ফেলে দেওয়া হচ্ছে যা তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। অভিভাবকদের পক্ষে বলা হয়েছে, ‘এসএসসি পরীক্ষার ফল দিয়ে বাচ্চারা কলেজে ভর্তি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে যায় এইচএসসির সার্টিফিকেট দিয়ে – বুঝলাম। কিন্তু ক্লাস ফাইভের পিইসি আর এইটের জেএসসি সার্টিফিকেট দিয়ে ওরা কী করবে? আমাদের মনে হয় বাচ্চাদেরকে ডিপ্রেশনে আর বাবা-মাকে চাপের মধ্যে রাখার জন্যেই এতো সব পরীক্ষা। আমরাও তো পড়াশোনা করে এসেছি। আমাদের তো এতো পরীক্ষা দিতে হয়নি।’
এসব সমাপনী পরীক্ষা উঠিয়ে দেওয়ার জন্যে অভিভাবকদের একটি অংশের দাবি বহুদিনের। কিন্তু সরকার এগুলো রেখে দেওয়ার পক্ষে ছিল। বলা হয়েছে, ‘এ দুটো পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। এসব পরীক্ষা শিশুদেরকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলছে’।
অভিভাবকদের মতো শিক্ষাবিদদেরও একটি অংশ এই দুটো সমাপনী পরীক্ষার বিরোধিতা করেছেন। তাঁরা বলছেন, এসব পরীক্ষা শিশুদেরকে অপ্রয়োজনীয় প্রতিযোগিতার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।
পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) এবং অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা স্থায়ীভাবে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস উপলক্ষে সম্প্রতি রাজধানীতে বাংলাদেশ ইউনেসকো জাতীয় কমিশন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এই সুপারিশ করেন মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘একটি কথা বলতে চাই, আমার এই কথাটি সরকারি মহলে প্রিয় নয়, জানি। সেটা হলো পঞ্চম শ্রেণির ও অষ্টম শ্রেণির পাবলিক পরীক্ষা নিয়ে কিন্তু অভিযোগ আছে। আমার মনে হয় যাঁরা দেশ চালাচ্ছেন, নীতি নির্ধারণ করছেন, তাঁদের সামনে গিয়ে যাঁরা কথা বলেন, তাঁরা সত্যি কথাটি হয়তোবা প্রকাশ করেন না। অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা এভাবে খুব অসহায় বোধ করেন। কিন্তু যারা প্রাইভেট পড়ায় ও নোট-গাইড প্রকাশের অভিপ্রায় আছে, তারা কিন্তু মহাখুশি। তাই দৃঢ়ভাবে সুপারিশ হবে, এই কোভিড-১৯-এর কারণে এবার এই দুই পরীক্ষা হয়নি। একে স্থায়ীভাবে বাদ দেওয়া যায় কি না, সেই চিন্তা বোধ হয় করা দরকার।’ ২০০৯ সালে হঠাৎ করেই জাতীয়ভাবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে সরকার। প্রথমে শুধু সাধারণ ধারার শিক্ষায় এটি সীমাবদ্ধ ছিল। পরে মাদ্রাসার ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী (পঞ্চম শ্রেণির সমমান) পরীক্ষাও চালু করা হয়। ২০১০ সালে জেএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। এসব পরীক্ষা নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শিশুদের ওপর অতিরিক্ত চাপের সৃষ্টি করছে। তাই এই পরীক্ষা বাদ দিতে শিক্ষাবিদ, শিক্ষাবিষয়ক গবেষক ও অভিভাবকদের বিভিন্ন সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন। এমন অবস্থায় মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এই দুটি পরীক্ষা স্থায়ীভাবে বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিলেন। আলোচনায় মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন শিক্ষার বিভিন্ন সংস্কার নিয়েও কথা বলেন।
শিক্ষা গবেষকরা বলছেন, ‘এতো অল্প বয়সের বাচ্চাদের পাবলিক পরীক্ষা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। পড়াশোনা হতে হবে খেলাধুলার মতো আনন্দময়। কিন্তু এসব পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ পাওয়ার জন্যে শিশুদের ওপর স্কুল এবং তাদের অভিভাবকদের পক্ষ থেকে যে চাপ দেওয়া হচ্ছে সেটা তাদের বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।’ তাঁরা বলেন, ‘শিশুদের ওপর যখন তাদের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি চাপ দেওয়া হয় তখন সেটা তাদের জন্যে অসহনীয় হয়ে ওঠে। এটা নিয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন আছে কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি যে এতো সব পরীক্ষার কারণে ছেলেমেয়েরা ভবিষ্যতে তাদের লেখাপড়ার ব্যাপারে অনীহ হয়ে পড়ছে।’ এ অবস্থায় নতুন শিক্ষাক্রম সবার মনে আশার সঞ্চার করতে পারে বলে অভিজ্ঞমহল মনে করেন। ২০২৩ সাল থেকে ধাপে ধাপে নতুন এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হোক সুষ্ঠুভাবে-সেই প্রত্যাশা সবার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে