আশানুরূপ উৎপাদন, বদলে গিয়েছে স্থানীয় অর্থনীতি

চন্দনাইশের লেবু

মুহাম্মদ এরশাদ, চন্দনাইশ | রবিবার , ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৭:২৪ পূর্বাহ্ণ

চন্দনাইশ উপজেলার পাহাড়গুলোতে থেকে এখন ঐতিহ্যবাহী কাঞ্চন পেয়ারার পাশাপাশি বাজারে আসছে প্রচুর পরিমাণ রসালু লেবু। পুরো চট্টগ্রামজুড়ে এখানকার লেবুর চাহিদা রয়েছে। চন্দনাইশের পাহাড়গুলোতে একইসাথে পেয়ারা ও লেবু বাগান করা হয়। আবার পৃথকভাবেও বাগান সৃজন করা হয়। শুধু লেবু উৎপাদন ও বিপণনে যুক্ত হয়ে স্বাবলম্বী হয়েছে এই উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার। বদলে গিয়েছে স্থানীয় জীবনযাত্রা ও অর্থনীতি।

জানা যায়, উপজেলার কাঞ্চননগর লট এলাহাবাদ, দোহাজারী লালুটিয়া, হাতিয়াখোলা, হাশিমপুর, জঙ্গল হাশিমপুর, ধোপাছড়িসহ বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলের বাগানগুলোতে এ বছর আশানুরূপ লেবু উৎপাদন হয়েছে। লেবুর ভাল দামও পেয়েছেন বাগানিরা। পাহাড়ে লেবু বাগান করে ইতমোধ্যে অনেক পরিবার তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে নিয়েছেন।

বর্তমানে বাজারে হাইব্রিড জাতীয় বড় সাইজের প্রতি বার (ঝুঁড়ি) লেবু ৮০০ টাকা এবং দেশীয় ছোট আকারের প্রতি বার লেবু ১৮০০ থেকে ২০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে ৩ হাজারের বেশি লেবু বাগান রয়েছে বলে জানান বাগানিরা। এসব বাগানে লেবু চাষিরা সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে লেবু চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন বলে জানালেন চন্দনাইশের রওশনহাট এলাকার লেবু বাগানি মো. নাসির উদ্দীন। তিনি জানান, যুগ যুগ ধরে চাষিরা এখানকার নিজস্ব পদ্ধতিতে পাহাড়ে লেবু বাগান করে আসছে। এখানে উৎপাদিত লেবুতে প্রচুর রস এবং গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ লেবুর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ফলে প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকারি লেবু ব্যবসায়ীরা দোহাজারী, হাশিমপুর, বাগিচাহাট, কাঞ্চননগর, কাঞ্চননগর রেল স্টেশন, বাদামতল, ধোপাছড়ি বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা পাইকারি লেবু বাজারগুলো থেকে লেবু সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম নগরীসহ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন।

পাহাড়ি অঞ্চলের লেবু বাগানগুলোতে বর্তমানে থোকায় থোকায় ধরে আছে লেবু। লেবুর ভারে নুয়ে পড়ছে বাগানের গাছগুলো। পুরো পাহাড়জুড়ে লেবুর ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে শত শত লেবু চাষিরা বাগান থেকে লেবু তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এখানকার অধিকাংশ পরিবারের সদস্যরা লেবু চাষ কিংবা লেবু ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েছে। পাহাড়ি অঞ্চলের মাটি লেবু চাষের উপযুক্ত হওয়ায় এখানকার শত শত চাষি লেবু চাষ করে নিজেদেরকে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন।

লেবু উৎপাদনে জড়িতরা বলেন, চন্দনাইশের পাহাড়ি অঞ্চল ও সমতল ভূমিতে যে পরিমাণ লেবু উৎপাদন হয় তা হিমাগারের অভাবে অনেক সময় পঁচে নষ্ট হয়ে যায়। এ অঞ্চলে একটি হিমাগার স্থাপিত হলে এখানকার লেবু চাষিরা উৎপাদিত লেবু সংরক্ষণ করা যেত। এতে পেয়ারা চাষিরা উপকৃত হবে।

চন্দনাইশ কৃষি সমপ্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, চন্দনাইশের পাহাড়ি অঞ্চলের মাটি লেবু ও পেয়ারা চাষের জন্য আদর্শ। এখানকার মাটিতে লেবু উৎপাদনে তেমন পরিচর্যা করতে হয় না এবং কীটনাশকও ব্যবহার করতে হয় না। তাছাড়া চন্দনাইশে উৎপাদিত লেবুর প্রচুর চাহিদার কারণে পাহাড়ি অঞ্চলের লোকজন লেবু চাষে অধিক আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের একটি বাড়তি আয়ের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে লেবু চাষ। লেবু চাষের করণীয় সম্পর্কে বাগানি এবং চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় বলে জানা যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত ‘বিশ্ব পল্লী উন্নয়ন দিবস’ রেজুলেশন গৃহীত
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে সাক্ষরতার হার ৮০.৮৫% বাড়াতে দরকার জনসচেতনতা