আল-জাজিরার প্রতিবেদন নিয়ে যা বললেন সেনাপ্রধান

| বুধবার , ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরায় প্রকাশিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি নিয়ে প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনি বলেছেন, সেনাবাহিনীকে নিয়ে নানা ধরনের ‘অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে, যাতে একটি বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। সেনাবাহিনী এসব অপচেষ্টাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শিরোনামে আল-জাজিরার ওই প্রতিবেদন প্রচারিত হওয়ার পর আইএসপিআরের মাধ্যমে দুই দফা বিবৃতি দিয়ে তার প্রতিবাদ জানিয়েছে সেনা সদর। যখন ওই প্রতিবেদন আল-জাজিরা প্রচার করে, জেনারেল আজিজ আহমেদ তখন সরকারি সফরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন। খবর বিডিনিউজের।
১২ ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরার পর গতকাল মঙ্গলবার সকালে তেজগাঁওয়ে আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের অনুষ্ঠান শেষে তিনি প্রথমবারের মতো এ বিষয়ে কয়েকটি টেলিভিশনের সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন। চ্যানেল টোয়েন্টিফোর, সময় টেলিভিশনসহ কয়েকটি টিভি ইতোমধ্যে সেনাপ্রধানের ওই বক্তব্য সমপ্রচার করেছে।
সেখানে আল-জাজিরা প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে জেনারেল আজিজ বলেন, আইএসপিআরের মাধ্যমে যে রিজয়েন্ডার দেওয়া হয়েছে, সেটা সেনাবাহিনীর অফিসিয়াল বক্তব্য। ইতোমধ্যে আমি নিশ্চিত, আপনারাও জানেন যে, যে ধরনের অপচেষ্টাগুলো হচ্ছে, এগুলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মতো একটা প্রতিষ্ঠান, যেটা জাতির গর্ব, দেশের গর্ব, এই প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে তারা নানান ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে, যাতে করে একটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, আপনাদেরকে আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, সেনাবাহিনী অত্যন্ত প্রশিক্ষিত এবং ওয়েল মোটিভেটেড একটা ফোর্স, আগের থেকে অনেক বেশি সুসংহত, সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ড অত্যন্ত ইফেকটিভ এবং সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য ঘৃণাভরে এ ধরনের অপচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করেছে অতীতে, এখনো করছে এবং বর্তমানে যা আছে, তাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে যাচ্ছে। এবং আমাদের চেইন অব কমান্ডে যারা আছে, এ ব্যাপারে তারা সবাই আমরা সতর্ক আছি।
সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, আমি আশ্বাস দিতে চাই আপনাদেরকে, সেনাবাহিনীতে, এই ধরনের অপপ্রচার বিন্দুমাত্র আঁচ আনতে পারবে না তারা আমাদের চেইন অব কমান্ডে। সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, বাংলাদেশের সংবিধানকে সমুন্নত রাখার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ, বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুগত এবং বাংলাদেশ সরকারের, বর্তমান সরকারের যে কোনো আদেশ-নির্দেশ পালনে সদা প্রস্তুত এবং বাংলাদেশের সেটা অভ্যন্তরীণ হোক বহির্বিশ্বের হোক, যে কোনো সমস্যার মোকাবিলার জন্য আমরা সাংবিধানিকভাবে শপথবদ্ধ। তো এটা নিয়ে আমার মনে হয় যে দুশ্চিন্তা করার তেমন কিছু নাই।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে সেনাপ্রধানের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যেসব প্রশ্ন তোলা হয়েছে এবং বিভিন্ন দেশে যেভাবে সেনাপ্রধানের চলাফেরার ভিডিও করা হয়েছে, সে বিষয়ে সাংবাদিকরা তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। উত্তরে তিনি বলেন, প্রথম কথা হলো, আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যে কথাটা বলা হয়েছে, আমি আপনাকে প্রশ্ন করি, আপনার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সাজা আছে, কিন্তু, আপনি যদি গতকাল সে সাজা থেকে অব্যাহতি পেয়ে থাকেন, আপনার বিরুদ্ধে যদি আর কোনো মামলা রানিং না থাকে, আপনাকে কি ফিউজিটিভ বলা যাবে আজকে? আপনাকে কি বলা যাবে যে, আপনি সাজাপ্রাপ্ত? কারণ, যখন আপনি অব্যাহতি পেয়ে যান কোনো একটা চার্জ থেকে, তার পরের দিন থেকে আপনি যে কোনো মুক্ত একজন নাগরিকের মতো। আমার ভাইদের সম্পর্কে যে অপপ্রচারগুলো এসেছে, সেটার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া আছে। খুব শিগগিরই আমার পরিবারের পক্ষ থেকেও সংবাদ সম্মেলন করে আপনাদেরকে সব জানানো হবে।
সেনাপ্রধান বলেন, এতটুকু আমি আপনাদেরকে বলতে পারি, আমি সেনাপ্রধান হিসেবে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি, আমার অবস্থান, আমার দায়িত্ব সম্পর্কে আমি সম্পূর্ণ সচেতন। কী করলে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে, কী করলে সেনাবাহিনীতে আমার যে দায়িত্ববোধ, আমাকে যে দায়িত্ব দেওয়াটা হয়েছে, সেটা খর্ব হতে পারে, আমি সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল।
সেনাপ্রধান বলেন, আপনারা প্রশ্ন করেছেন, বারবার কেন আমাকে টার্গেট করা হয়। আমার মনে হয় সেটার দায়িত্ব আমি আপনাদের ওপর ছেড়ে দিলাম। আপনারাই বুঝে নেন, খুঁজে নেন, কেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনাপ্রধানকে টার্গেট করা হচ্ছে। কারণ, এই সেনাপ্রধানকে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন। সেনাপ্রধানকে হেয় প্রতিপন্ন করা মানে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হেয় প্রতিপন্ন করা। আপনাদেরকে এই জিনিসটা বুঝতে হবে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনের সঙ্গে বাংলাদেশের যারা যুক্ত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কিছু কিছু ব্যাপার আছে যেটা হয়তো যে, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তেমন কিছু করার হয়ত থাকবে না তাদের বিরুদ্ধে। আমি নিশ্চিত, সেটা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যারা আছে বা সংস্থা যারা আছে, তারা হয়তো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাথা গোঁজার ঠাঁই হারাল ৪৭ পরিবার
পরবর্তী নিবন্ধ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়