আল্লামা তৈয়্যব শাহ্’র ৩৩ তম বার্ষিক ওরস শরীফ উপলক্ষে গত ১২ জুন সন্ধ্যায় জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসা ময়দানে আয়োজিত মাহফিলে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে আওলাদে রাসুল পীরে বাঙাল আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ ছাবের শাহ্ (মা জি আ) বলেন, হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি (রহ.) ও আল্লামা তৈয়্যব শাহ্ (রহ.) যে সিলসিলা আমাদের দিয়েছেন, এর মাধ্যমে আমরা আজ ইসলামের সঠিক আক্বিদায় ঐক্যবদ্ধ। তিনি এ সিলসিলার কার্যক্রম প্রচারে যারা অবদান রেখেছেন তাদের বিশেষভাবে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, আজ তৈয়্যব শাহ্ (রহ.)-এর ওরশ মোবারক উদযাপন করছি। আমাদের অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে আল্লামা তৈয়্যব শাহ্ (রহ.)-এর অবদানকে, তিনি হুজুর কেবলার যে মকসুদ আল্লাহ্ ও রাসুলের সন্তুষ্টি তাতে আমরা ওয়াদা করেছি তা যথাযথ পালন করাই ওরশের সার্থকতা। তিনি বলেন, হুজুর কেবলার মাধ্যমে যে আদর্শ, দর্শন ও পথ দেখিয়েছেন সেই সিরাতুল মুসতাকিমের পথে চলতে হবে। এ পথ রাসুলেপাক (দ.)-এর নির্দেশিত হযরত গাউসুল আযম দস্তগীর, আবদুর রহমান চৌহরভী ও সিরিকোটি (রহ.) অনুসৃত। তিনি বলেন, সিরিকোটি (রহ.) বাংলাদেশ তশরিফ রেখে এমন একটি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেছেন যা সারা বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছে। তেমনিভাবে আল্লামা তৈয়্যব শাহ্ (রহ.) ঢাকায় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন, জশনে জুলুস ও গাউসিয়া কমিটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি জামেয়া আনজুমান, গাউসিয়া কমিটিকে হযরাতে কেরামের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য এহসান উল্লেখ করে এ প্রতিষ্ঠানসমূহ আহলে সুন্নাত আক্বিদা ও আদর্শ প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক অবদান রাখছে। তিনি জীবনের সর্বক্ষেত্রে কোরআন–হাদীস ও মহানবী (দ.)-এর আদর্শ অনুসরণ করা এবং জামেয়া, আনজুমান ও গাউসিয়া কমিটির সাথে সম্পর্ক অটুট রাখার আহ্বান জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আল্লাম তৈয়্যব শাহ্ (রহ.) ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশে ব্যাপক অবদান রেখেছেন। তিনি ১৯৭৪ সালে নির্দেশ দিয়েছিলেন জশনে জুলুস বের করার জন্য, সেই জুলুস আজ বাংলাদেশ নয় বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় পালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, আল্লামা সিরিকোটি (রা.) ও আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রহ.) এদেশে এসে ইসলামের যে শাশ্বত বাণী প্রচার করেছেন এবং এ এলাকায় এসে ইসলামী শিক্ষার জন্য জামেয়া প্রতিষ্ঠা করেছেন তা আমাদের জন্য এহসান। তিনি বলেন, নবীর আওলাদগণ এদেশে এসে নবীজির সুন্নাতকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। আল্লামা তৈয়্যব শাহ্ (রহ.) সুন্নাতে রাসুলের অনুসরণের শিক্ষা দিয়েছেন।
স্বাগত বক্তব্যে আনজুমান ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন আমাদেরই একজন। তিনি গেস্ট নন বরং হোস্ট। আনজুমান সংশ্লিষ্ট যে কোনো কার্যক্রমে তাঁর আন্তরিক সহযোগিতার শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে ভবিষ্যতেও সহযোগিতা কামনা করেন। ওরস মোবারক সফল করায় গাউসিয়া কমিটিসহ সর্বস্তরের পীরভাইদের প্রতি মোবারকবাদ জ্ঞাপন করে তিনি বলেন, আমরা শরীয়তসম্মতভাবে জশনে জুলুছ থেকে শুরু করে সকল ওরস মোবারক উদযাপন করি। কিন্তু ওরস আনজুমানের মূখ্য উদ্দেশ্য নয়, আনজুমানের মূখ্য উদ্দেশ্য হলো দ্বীনি শিক্ষার বিস্তার, যার উপর ভিত্তি করে শাহানশাহ্–এ সিরিকোট এ জামেয়া প্রতিষ্ঠা করেন। যে কোনো মসিবতে জামেয়ার জন্য মান্নত করবেন, পূরণ হলে সাথে সাথে তা আদায় করবেন।
সভাপতির বক্তব্যে আনজুমান ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মনজুর আলম (মনজু) বলেন, বিশ্বব্যাপী ইসলাম ও ইসলামী আদর্শের প্রচার–প্রসারে আউলিয়া–কেরামদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তিনি বলেন, আল্লামা তৈয়্যব শাহ্ (রহ.) এদেশে এসে আহলে সুন্নাতের আদর্শভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে যে রূপরেখা দিয়েছেন, তা আমাদের জন্য পাথেয়। তিনি জশনে জুলুস, গাউসিয়া কমিটি, মাসিক তরজুমানসহ আনজুমান কর্তৃক প্রকাশনা কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হুজুর কেবলা আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি (রহ.) ও আল্লামা তৈয়্যব শাহ্ (রহ.)-এর সাথে থেকে ত্বরিকতের কার্যক্রম, আনজুমান ও জামেয়াকে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর যারা প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি তাঁদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি আরও বলেন, আহলে সুন্নাতের প্রচার–প্রসারে জামেয়া আপসহীন। জামেয়ার প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি বলিষ্ঠ কমিটি করতে চাই, যারা জামেয়াকে আরও সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে সহযোগিতা করবে। আমাদের অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে। জামেয়ার সম্পর্ক মদিনার সাথে, হুজুর কেবলার মাধ্যমে আমারা এ সম্পর্ক পেয়েছি। সুতরাং আমাদের মদিনামুখী হতে হবে। জামেয়া ঈমান–আমল শিক্ষা দেয়। তিনি আনজুমানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বলেন, ৬৪ জেলায় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। হযরত তৈয়্যব শাহ (রহ.)-এর নির্দেশে প্রকাশিত মাসিক তরজুমান ৫০ বছরের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হতে চলেছে। এ পত্রিকাকে আরো উন্নত ও সমৃদ্ধ করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আনজুমান রিসার্চ সেন্টারের প্রকাশনাকে ডিজিটালাইজড ও দাওয়াতে খাইর কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে। একটি প্রফেশনাল মিডিয়া টিম গঠন করা হবে। তিনি একটি সুশৃঙ্খল সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলার উপর জোর দেন। তিনি জামেয়াসহ আনজুমান পরিচালিত মাদ্রাসাসমূহের শিক্ষকদের দক্ষতা ও সততার উপর অবিচল থাকার আহ্বান জানান।
ওরস মাহফিলে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, আনজুমান রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার ফকিহ মাওলানা আবুল হাসান মুহাম্মদ ওমাইর রজভী ও ঢাকা গাউসুল আযম রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী কাশেমী। সঞ্চালনা করেন ট্রাস্টের জয়েন্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ সিরাজুল হক ও জামেয়ার আরবি প্রভাষক হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আনিসুজ্জামান আল–কাদেরী।
এতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আনজুমান ট্রাস্টের এডিশনাল সেক্রেটারি মোহাম্মদ সামশুদ্দীন, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি এস এম গিয়াস উদ্দীন (শাকের), ফাইন্যান্স সেক্রেটারি মোহাম্মদ কমর উদ্দীন (সবুর), পেয়ার মোহাম্মদ, জামেয়ার সাবেক অধ্যক্ষ মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান, হাফেজ মুহাম্মদ সোলাইমান আনসারি, মুফতি কাজী আবদুল ওয়াজেদ, মুহাম্মদ শাহাজাদ ইবনে দিদার, মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক, মুহাম্মদ তৈয়বুর রহমান, মুহাম্মদ আবদুল হামিদ, শেখ নাসির উদ্দিন আহমেদ, লোকমান হাকিম মো. ইব্রাহিম, নূর মোহাম্মদ কন্ট্রাক্টর, মুহাম্মদ আবদুল হাই (মাসুম), মুহাম্মদ সাদেক হোসেন (পাপ্পু), মুহাম্মদ নুরুল আমিন, মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম, মুহাম্মদ মাহাবুব ছফা, মোহাম্মদ ইলিয়াছ, মহানগর বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক আর ইউ চৌধুরী শাহীনসহ অসংখ্য ওলামায়ে কেরাম।
মাহফিলে বক্তারা বলেন, মাতৃগর্ভের অলি হিসেবে পরিচিত আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব, আল্লামা হাফেজ সৈয়্যদ মুহাম্মাদ তৈয়্যব শাহ্ (রহ.) ছিলেন বর্তমান হিজরি শতাব্দীর একজন সমধিক পরিচিত সংস্কারক। তিনি ইসলামের সঠিক পথে মানুষকে দাওয়াত দিতে ‘সাচ্চ আলেম’ তৈরির উপর এতো বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন যে, আজ তাঁর দিকনির্দেশনা অনুসারে তাঁর মুরীদ–অনুসারীরা প্রতিষ্ঠা করেছে শত শত মাদ্রাসা। সুন্নি মতাদর্শ এবং তাসাউফ ভিত্তিক পঠন পাঠন, তা’লীম–তারবিয়াতের সমন্বিত এই সব মাদ্রাসা আজ সত্যিকারের দ্বীনি শিক্ষায় পথপ্রদর্শক হিসেবে গণ্য হচ্ছে। বিশেষত, তাঁর খেদমতের ব্যাপক প্রভাবে সুন্নি মতাদর্শ এবং কাদেরিয়া ত্বরিকা নতুন জীবন লাভ করেছে। বিগত শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আ’লা হযরতের চিন্তাধারা বিকাশেও তাঁর ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। বিশেষত, জসনে জুলুস ‘প্রতিষ্ঠার মতো শতাব্দী সেরা সাংস্কৃতিক অবদানের জন্য তাঁকে মানুষ হাজার বছর মনে রাখবে। আর, তাঁর হাতে প্রতিষ্ঠিত গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের মানবিক কাজে অনন্য অবদানের জন্যও তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। মাহফিল শেষে সালাতুস সালাম, কিয়াম ও মোনাজাতের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলমানদের শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করেন জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ ড. আ ত ম লিয়াকত আলী। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।