গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ আয়োজিত ‘গাউসে জামান, আল্লামা তৈয়্যব শাহ্ স্মারক আলোচনা’ অনুষ্ঠানে বক্তাগণ বলেন, চলতি হিজরি শতাব্দীতে আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (রা.) দ্বীন ইসলামের পুনর্জাগরণের জন্য যে বহুমুখী সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন, তা ইসলামের নামে আবির্ভূত ভ্রান্ত উগ্র মতবাদগুলোকে অসার প্রমাণিত করেছে। বিশেষ করে, ইসলামের মূল ধারা সুন্নি মতাদর্শ এবং পরিশীলিত সুফীবাদ চর্চার ব্যাপক প্রসার ঘটাতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন হাজার হাজার ‘সাচ্চা আলেম’ এবং শত শত মাদ্রাসা–খানকাহ্। তাঁর হাতে সূচিত হওয়া ‘জশনে জুলুছ’ এ শতাব্দীর সেরা একটি সংস্কার নিঃসন্দেহে। তাঁর প্রচেষ্টায় আজ ঘরে ঘরে হযরত গাউসুল আযম জিলানী (রা) এর সিলসিলাহর অনুসারী এবং কার্যক্রম পৌঁছে গেছে। বিশেষত, তাঁর প্রতিষ্ঠিত গাউসিয়া কমিটি আজ বিশ্বব্যাপী মানবতার অনন্য এক উদাহরণ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। কারণ, তারা হুজুর কেবলা তৈয়্যব শাহ্ এর প্রেরণায় সৃষ্টির সেবাকেই দ্বীন এবং ত্বরিকতের প্রধান কাজ বলে মনে করছেন এবং ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য সেবা এই ব্রত নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তাঁর নির্দেশে প্রকাশিত মাসিক পত্রিকা তরজুমান এ আহলে সুন্নাত আজ ৪৭ বছর ধরে আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা‘আত তথা সুফী অঙ্গনে প্রধান মুখপত্র হিসেবে অবদান রাখছে এবং যুগজিজ্ঞাসার সঠিক সমাধান দিয়ে মুসলমানদের নানা রকম ফেতনা ফাসাদ থেকে রক্ষা করে যাচ্ছে। গতকাল ৪ জুলাই, বৃহস্পতিবার বিকালে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় পরিষদ নগরীর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবস্থ বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজন করে এ স্মারক আলোচনা সভার। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড মোহাম্মদ আবু তাহের। অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ছিলেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক, একুশে পদকপ্রাপ্ত এম. এ. মালেক। প্রধান আলোচক ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজের প্রিন্সিপাল প্রফেসর মোহাম্মদ মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরী। সংগঠনের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব পেয়ার মোহাম্মদ কমিশনারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহাসচিব শাহজাদ ইবনে দিদার। আলেচনায় অংশগ্রহণ করেন, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল্লামা কাজী আবদুল আলিম রজভী, হালিশহর তৈয়্যবীয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল্লামা বদিউল আলম রিজভী, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মহিলা মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা ড. সাইফুল আলম। সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব এড. মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত স্মারক আলোচনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, আনজুমান এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের জয়েন্ট সেক্রটারি সিরাজুল হক, গাউসিয়া কমিটি কেন্দ্রীয় পরিষদের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল হামিদ, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবুল হক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব এলাহী সিকদার, আনজুমান সদস্য সাদেক হোসেন পাপ্পু, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আহ্বায়ক কমিটির, আহ্বায়ক আবদুল হাই মাসুম, সদস্য সচিব আশেক রসুল খান বাবু। যুগ্মসচিব অধ্যক্ষ আবু তালেব বেলাল।
স্মারক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন, আল্লামা তৈয়্যব শাহ যুগের ধর্ম সংস্কারক ছিলেন, গাউসিয়া কমিটি, জশনে জুলুস, মাসিক তরজুমানের মত প্রকাশনাসহ মাদ্রাসা মসজিদ প্রতিষ্ঠা করে সমাজের একটি নৈতিক সংস্কার সাধন করেছেন। তিনি গাউসিয়া কমিটির সাংগঠনিক কার্যক্রমের মানবিক দিকগুলো তুলে ধরে বলেন, এ সংগঠনকে আন্তর্জাতিকীকরণ করতে হবে। নেতৃত্বের সততা, দক্ষতা, পরিশুদ্ধতার মাধ্যমে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে হবে। তিনি কুরআনের বিজ্ঞান ভিত্তিক গবেষণার উপর জোর দিয়ে বলেন, নাসায় মুসলমানরা গবেষণা করে না, জজ বার্ণাডশ অমুসলিম হয়েও ইসলামের ভাবধারা ও সার্বজনীনতা তুলে ধরেছেন, আমরা পারছি না, এ দৈন্যতা থেকে মুক্ত হতে হলে গবেষণায় মনোযোগী হতে হবে। আল্লামা সিরিকোটি ও তৈয়্যব শাহ জামেয়া প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষা ও গবেষণার প্রতি জোর দিয়েছেন। উপাচার্য বলেন, আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ শরীয়ত ও তরিকতের সমন্বয় করে ইসলামের মূল দর্শনের প্রচার করেছেন।
স্মারক আলোচনায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধক দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম. এ. মালেক বলেন, আমার বাবা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক রেঙ্গুনে হুজুর সৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোটি রহমাতুল্লাহি আলাইহির হাতে বায়াত গ্রহণ করেন। তিনি উদ্যোগী হয়ে ১৯৪৬ সালে সিরিকোটি হুজুরকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসেন। জামেয়াসহ জশনে জুলুস আমরা এ দরবারের মাধ্যমে পেয়েছি। তিনি বলেন, আল্লামা তৈয়্যব শাহ প্রতিষ্ঠিত জশনে জুলুছ বিশ্বের অদ্বিতীয় ধর্মীয় র্যালি। এটি অবশ্যই গিনিস বুকে স্থান পাবে। তিনি বলেন, সুফি দরবেশদের মাধ্যমে আমরা ইসলাম পেয়েছি, এটি সঠিকভাবে অনুসরণ করলে পৃথিবীতে কোনো অশান্তি থাকবে না। সংঘাত হানাহানি থাকবে না। তিনি পবিত্র কুরআনকে অনুবাদসহ পাঠ করে অনুধাবন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আল্লামা তৈয়্যব শাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রতিদিন কুরআনের শিক্ষা দিতেন তাফসির ও অনুবাদের মাধ্যমে। সৈয়দ আহমদ সিরিকোটি ও আল্লামা তৈয়্যব শাহ‘র মত মহাপুরুষদের রেখে যাওয়া পথ ও আদর্শকে ধারণ করে সে পথে চলতে পারাটাই হবে আমাদের স্বার্থকতা।
স্মারক আলোচনায় প্রধান বক্তা চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আল্লামা তৈয়্যব শাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি একজন শুধু তরিকতের পীর ছিলেন না, শুধু হাফেজ ছিলেন না, তিনি ছিলেন একাধারে শরীয়তের আলেম, যুগশ্রেষ্ঠ মুফাসসির, মুহাদ্দিস ও ফকিহ। তাঁর বক্তব্য ও অসিয়তগুলো ছিল আল্লাহ ও রাসুলের প্রেমাসক্ত। ফলে সাধারণ মানুষ মুগ্ধ হতেন। তিনি গাউসিয়া কমিটি প্রতিষ্ঠা করে এদেশের জন্য বড় করুণা করেছেন। করোনাকালে গাউসিয়া কমিটির মানবিক কার্যক্রম হাজার হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে, দাফন করেছে। জশনে জুলুছ নবীজির প্রেমের এক মহাস্মারক। সমকালীন শিয়াসহ বিভিন্ন বাতিলদের বিরুদ্ধে এক দ্রোহ। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।