চট্টগ্রামের বায়েজিদ থানার অন্তর্গত কুলগাঁও অঞ্চলে ১৯৩৮ সনের ২৭ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন পীরে তরীকৃত ফক্বীহে বাঙ্গাল আল্লামা কাযী মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম হাশেমী। আল্লামা আহসানুজ্জামান হাশেমী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি আর মাতা হাশেমী বংশের এক মহীয়সী রমনী। পিতার তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তিনি চট্টলার প্রাচীন ঐতিহ্যে শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ওয়াজেদিয়া আলিয়া থেকে ফাযিল স্তর অনন্য কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ১৯৬২ ইংরেজি সনে ফিক্হ (ইসলামী আইন) বিষয়ে কামিল ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি মুফতী সৈয়দ আমীমুল ইহসান মোজাদ্দেদী বরকাতী রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি, প্রসিদ্ধ আরবী সাহিত্যিক আল্লামা আবদুর রহমান কাশগরী ও আল্লামা মুফতী মুসা মুজাদ্দেদী প্রমুখের মতো দেশবরেণ্য, যুগশ্রেষ্ঠ ও স্বনামধন্য মনীষীদের শিক্ষাগুরু হিসেবে পেয়েছিলেন।
দ্বীনি শিক্ষার খেদমতে আত্মনিয়োগ করে একজন কীর্তিমান শিক্ষক হিসেবে তিনি কর্মজীবনের সূচনা করেন। প্রিয় নবী ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে কোরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে তা শেখায়।’ সুতরাং আল্লামা আমিনুল ইসলাম হাশেমী নবীর পবিত্র আমানত ইলম’র নূর আহরণ করে তা মানুষের বুকে বিলানোর ব্রতে শিক্ষকতার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন গাউসুল আযম বড়পীর হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রাদ্বি.) অন্তপ্রাণ। তাঁর জীবদ্দশায় নিজের ব্যবস্থাপনায় তিনি যত অনুষ্ঠানাদি করে গেছেন তন্মধ্যে গাউসে পাকের জন্য নিবেদিত ‘গাউসুল আযম সম্মেলন’ ছিল সবচেয়ে বর্ণাঢ্য, অতি সমারোহের আয়োজন। দেশের বাইরে থেকেও ওলামা মাশায়েখকে আমন্ত্রণ জানাতেন সেখানে। প্রতিটি সম্মেলনের স্মারক ম্যাগাজিন প্রকাশনাও থাকত সেই সঙ্গে। এভাবে কলমের খেদমতকে তিনি অত্যধিক পছন্দ করতেন। তিনি ছিলেন সেই আ’লা হযরত (রহমাতুল্লাহি তায়ালা আলাইহি)’র সিলসিলার একজন খলীফা ও ভাবশিষ্য, যিনি মসির অসিতে কুপোকাত ও ধরাশায়ী করেছিলেন সমূহ বাতিল অপশক্তিকে। সেই কলম সম্রাট এর যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে অল্প বিস্তর তিনি করে গেছেন লিখনির খেদমত। বাস্তবিকই, আমিনে মিল্লাত ফকীহে বাংগাল পীরে কামেল আল্লামা শাহসুফী মুফতী কাযী মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম হাশেমী (রহমতুল্লাহি তায়ালা আলাইহি) যবানে, কলমে দ্বীনে হক তথা ইসলামের মৌলিক রূপরেখা আহলে সুন্নাতের যে অপরিমেয় খেদমত করে গেছেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর মর্যাদাকে আরো উন্নত করুন। এ মহান কর্মবীর সাধক পুরুষ সুন্নী জনতার অভিভাবক মুক্তিকামী মানুষের দিশারী পরম শ্রদ্ধাস্পদ হুজুর কেবলা আল্লামা কাযী মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম হাশেমী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ৫ এপ্রিল ২০০৬ নগরীর হলি–ক্রিসেন্ট হাসপাতালে তাঁর মওলায়ে হাকিকীর আহবানে সাড়া দিয়ে ইন্তেকাল করেন। উল্লেখ্য যে, আধ্যাত্মিক মানবসেবামূলক অরাজনৈতিক সংস্থা আঞ্জুমানে আশেকানে মোস্তফা (দ.) ট্রাস্ট বাংলাদেশ ও আশেকানে মোস্তফা (দ.) তরুণ পরিষদের ব্যবস্থাপনায় এবং আল আমিন হাশেমী দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন পীরে তরিতক্ব আল্লামা কাযী মুহাম্মদ ছাদেকুর রহমান হাশেমীর নেতৃত্বে বৃহৎ সুন্নিয়ত প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রায় ২২টি দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাধারণ জনগণের সার্বিক সহযোগিতায় চলমান রয়েছে। তাছাড়া অসহায় ও দরিদ্রদের সহযোগিতা, চিকিৎসাসেবা, গরীব পরিবারের মেয়েদের বিবাহের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সেবামূলক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সবসময় নিয়োজিত আছে আঞ্জুমানে আশেকানে মোস্তফা (দ.) ট্রাস্ট বাংলাদেশ।
লেখক: আরবি প্রভাষক, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা. খতিব, হযরত খাজা গরীব উল্লাহ শাহ্ (রহ.) জামে মসজিদ।