আলোর মুখ দেখছে চসিকের আলোকায়ন প্রকল্প

২৬০ কোটি টাকায় ৪১ ওয়ার্ডে স্থাপন করা হবে ২০ হাজার ৬শ এলইডি বাতি । ২১৪ কোটি কাটা ঋণ দিচ্ছে ভারত, শনিবার চুক্তি । চসিকের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ আলোকায়ন প্রকল্প : মেয়র

মোরশেদ তালুকদার | বৃহস্পতিবার , ৪ জুলাই, ২০২৪ at ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ

দীর্ঘসূত্রতা পেরিয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখছে সড়ক আলোকায়নে গৃহীত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ২৬০ কোটি ৮৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকার একটি প্রকল্প। প্রকল্পটির আওতায় নগরের ৪১ ওয়ার্ডে ৪৬৬ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার সড়কে ২০ হাজার ৬০০টি এলইডি বাতি স্থাপন করা হবে। ২০১৯ সালের ৯ জুলাই একনেকে অনুমোদন হয় ‘মডার্নাইজেশন অব সিটি স্ট্রিট লাইট সিস্টেম অ্যাট ডিফারেন্স এরিয়া আন্ডার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন’ শীর্ষক প্রকল্পটি। প্রকল্পে ঋণ হিসেবে ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ অর্থের যোগান দিবে ভারত। তাই ঠিকাদার নিয়োগসহ বিভিন্ন ধাপে দেশটির চূড়ান্ত অনুমোদন না পাওয়ায় এতদিন আটকে ছিল প্রকল্পটি।

সর্বশেষ চলতি বছর ভারতের চূড়ান্ত অনুমোদন মিলেছে। এরপর গত ২১ মে বাংলাদেশের সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ সভায়ও অনুমোদন হয়। এর প্রেক্ষিতে আগামী শনিবার নগরের একটি হোটেলে প্রকল্পের জন্য বাছাই করা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘শাপার্জি পালনজি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড’ এর সাথে চসিকের চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে। আনুষ্ঠানিকতা শেষেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হবে এবং দ্রুত প্রকল্পের ভৌত কাজ শুরু হবে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত তিনবার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। ২০২৬ সালের ৩০ জন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। চলতি অর্থবছরে প্রকল্পের আওতায় প্রতি ওয়ার্ডে আনুমানিক পাঁচ কিলোমিটার করে ২০৫ কিলোমিটার সড়কে আলোকায়নের কাজ সম্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত শুধু মাত্র আলোকায়নের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেনি। এটা চসিকের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ আলোকায়ন প্রকল্প। এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করব সেটা তো চট্টগ্রামের মানুষেরও প্রত্যাশা ছিল না। এ প্রকল্পের আওতায় প্রতি ওয়ার্ডে ১০ কিলোমিটার সড়কে আধুনিক এলইডি বাতি দ্বারা আলোকায়ন করব। থাকবে স্মার্ট কন্ট্রোল সুইচ সিস্টেম। জিআই পোল বসানো হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে শহরের প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি পর্যন্ত আলোকিত হবে এবং ট্রাফিক ও পথচারীদের জন্য কার্যকর ও টেকসই সড়কবাতির সুবিধা নিশ্চিত হবে।

মেয়র বলেন, নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেছে। এখন এটা বাস্তবায়নের পথে। বৈদেশিক অর্থায়নের এ প্রকল্পের ‘নোয়া’ প্রদান করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় স্থাপন করা বাতিসমূহ ৫ বছর মেরামত খরচ সংশ্লিষ্ট স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান বহন করবে বিধায় কর্পোরেশনের রক্ষণাবেক্ষণ খাতে কোনো অর্থ ব্যয় হবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, উন্নত বিশ্বের আলোকে স্মার্ট সিটি গড়ে তোলার লক্ষ্যে পূর্বে স্থাপিত এলইডি বাতির ধারাবাহিকতায় শহরের প্রধান প্রধান ৩০টি সড়ক ও আবাসিক এলাকায় জাইকার অর্থায়নে নতুন ৭৬ কিলোমিটার এলইডি বাতি স্থাপন করা হয় যা সেন্ট্রাল কন্ট্রোল মনিটরিং সিস্টেম সফটওয়্যারএর মাধ্যমে অনঅফ এবং মনিটরিং সুবিধা সংবলিত। এছাড়াও রাজস্ব বাজেট থেকে ১০ কিলোমিটার সড়কে আধুনিক এলইডি বাতি দ্বারা আলোকায়ন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে পূর্বের তুলনায় বিদ্যুৎ ব্যবহার বিল অর্ধেকে নেমে এসেছে এবং বিদ্যুৎ বিল বাবদ অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। পাশাপাশি পাঁচ বছর ওয়ারেন্টিযুক্ত এলইডি বাতির কারণে বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ অনেক কমেছে। সড়ক বাতি সংক্রান্ত আমাদের কার্যক্রমসমূহ সম্পন্ন হলে নগরের ৪১টি ওয়ার্ড এলাকায় শতভাগ এলইডি বাতি স্থাপন কার্যক্রম অনেকাংশে বাস্তবায়িত হবে।

প্রকল্প পরিচালক ও চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) ঝুলন কুমার দাশ আজাদীকে বলেন, প্রকল্প অনুমোদনের পর দুই বছর করোনা মহামারীর কারণে সবকিছু থমকে ছিল। এরপর অনুমোদন প্রক্রিয়ায় কিছুটা দীর্ঘসূত্রিতা হয়েছে। যেহেতু এটা দুই দেশের প্রকল্প, তাই প্রতিটি কাজই দুই দেশেই অনুমোদন হয়ে এসেছে। এখানে দুই দেশের সরকারের অনুমোদনের বিষয় জড়িত। সেই হিসেবে অনুমোদন প্রক্রিয়ায় সময় একটু বেশি লেগেছে।

প্রকল্পের আওতায় যা হবে : প্রকল্পের আওতায় শহরের ৪১ ওয়ার্ডে ৪০, ৬০, ১০০ ও ২৫০ ওয়াটের ২০ হাজার ৬০০টি এলইডি বাতি, ২০ হাজার ২৬৭টি জিআই পোল এবং ৫০৭টি কন্ট্রোল সুইচ বঙ বসানো হবে। পাঁচ মিটারের বেশি প্রশস্ত সড়কগুলোতে এসব বাতি লাগানো হবে। এছাড়া হাইড্রোলিক বিম লিফটার ও ইলেকট্রিক্যাল ইক্যুপমেন্ট সংগ্রহ করা হবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গৃহীত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করে ট্রাফিক এবং পথচারীদের জন্য কার্যকর ও টেকসই সড়ক বাতির আলোক সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে। রাত্রিকালীন শহরের সৌন্দর্য, ব্যবসায়িক সুবিধা ও সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে। একইসঙ্গে কমবে কার্বন নির্গমন। এছাড়া শক্তি শোষণ সম্পর্কিত পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ট্রাফিক ও পথচারীর জন্য রাস্তায় আলোর সুবিধা নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি স্মার্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে সড়ক বাতির আলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, জ্বালানি দক্ষতা উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে বাংলাদেশের ‘টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ এবং ভারতের ‘এনার্জি ইফিসিয়েন্সি সার্ভিস লিমিটেড (ইইসিএল)’ এর সঙ্গে ২০১৭ সালে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়। এর প্রেক্ষিতেই প্রকল্পটি গ্রহণ করে চসিক। প্রকল্পটিতে বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে এলওসি(লাইন অব ক্রেডিট) এর আওতায় ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ অর্থের যোগান দিবে ভারত। ঋণ হিসেবে দেয়া এ অর্থের পরিমাণ ২১৪ কোটি ৪৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা। অবশিষ্ট ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ বা ৪৬ কোটি ৪৩ লাখ ৫ হাজার টাকা দিবে বাংলাদেশ সরকার।

জানা গেছে, চুক্তি অনুযায়ী ভারতের এঙ্মি ব্যাংক তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শর্ট লিস্ট পাঠায়। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে– ‘এনার্জি ইফিসিয়েন্সি সার্ভিসেস লিমিটেড’, ‘সিগনিফাই ইনোভেশন্স ইন্ডিয়া লিমিটেড’ এবং ‘শাপর্জি পালনজি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড’। শর্ট লিস্টের প্রতিষ্ঠানগুলোয় দরপত্রে অংশ নেয়। বাছাই শেষে ‘শাপার্জি পালনজি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড’কে চূড়ান্ত করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভারতকে ট্রানজিট দিয়ে ক্ষতি কী, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর
পরবর্তী নিবন্ধবৃষ্টিতে সরছে মাটি, পাহাড় ধসের শঙ্কা