অবশেষে আলোর মুখ দেখছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) কূলগাঁও বাস–ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে ২৯৫ কোটি টাকার প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সিটি মেয়র। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রস্তাবনাও পাঠানো হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় প্রকল্পটি দীর্ঘ চার বছর ধরে আটকে ছিল।
জানা গেছে, প্রতিদিন শহরে তিন পার্বত্য জেলা, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কয়েকশ বাস নগরে প্রবেশ করে। এছাড়া বন্দরকেন্দ্রিক আরো আট থেকে ১০ হাজারের বেশি ছোট–বড় ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরিসহ অন্যান্য পণ্যবাহী গাড়ি আসা–যাওয়া করে। টার্মিনাল না থাকায় যত্রতত্র যানবাহনগুলো দাঁড়িয়ে থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। অথচ পরিবহনের চাপ বাড়লেও গত ২৯ বছরে নগরে কোনো বাস–ট্রাক টার্মিনাল গড়ে উঠেনি। সর্বশেষ ১৯৯৩ সালে শহরে বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। এ অবস্থায় বাস–ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণসহ সড়ক অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রকল্প নেয় চসিক।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর ‘ম্যাচিং ফান্ড’র শর্ত ছাড়াই বাস–ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণসহ সড়ক উন্নয়নে এক হাজার ২২৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়।
তখন প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত। সর্বশেষ গত বছর প্রকল্প ব্যয় ও মেয়াদ দুটোই বাড়িয়ে সংশোধন করা হয়। সংশোধিত প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ২৬৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। সর্বশেষ আরো এক বছর বৃদ্ধি করে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।
মূলত প্রকল্পটির উপ–প্রকল্প হিসেবে কূলগাঁওয়ের বালুছড়ায় ২৯৫ কোটি টাকায় ৮ দশমিক ১০ একর জায়গায় বাস–ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি অর্ন্তভুক্ত। এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণে ২৬০ কোটি পাঁচ লাখ পাঁচ হাজার টাকা, ভূমি উন্নয়নে তিন কোটি ৩৭ লাখ টাকা, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ ইয়ার্ড নির্মাণে ২৫ কোটি টাকা এবং সাড়ে সাত কোটি টাকায় টার্মিনালের অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।
জানা গেছে, টার্মিনালের মুখে দ্বিতল একটি ভবন নির্মাণ করা হবে। ভবনটির প্রথম তলায় সিটি বাস টার্মিনাল, আন্তঃনগর বাস টার্মিনালে একটি যাত্রী নামার লেন, ২৫টি যাত্রী উঠার লেন, ১৪টি অতিরিক্ত নামার–অপেক্ষমাণ লেন, ছাদযুক্ত বৃহদাকার খোলা হল রুম এবং তথ্য কেন্দ্র থাকবে। এছাড়া প্রতিটি ফ্লোরে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক পৃথক বৃহদাকার ওয়াশ রুম (টয়লেট), ২২টি টিকেট কাউন্টার, ওয়াইফাই সুবিধাসহ যাত্রীদের বসার জায়গা, লাগেজ রুম, ট্যাঙি বুকিং রুম, প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র থাকবে। এছাড়া রেস্তোরাঁ, এসি বাস যাত্রীদের বসার জায়গা, বাস–ট্রাক মালিকদের অফিস, প্যানোরোমা রেস্টুরেন্ট, বাস কর্মচারীদের আবাসন রুম, কমনরুম ও ওয়াসরুমসহ থাকার ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ৩০টি কার এবং ট্যাঙি পার্ক, পেট্রোলপাম্প, ৬৯টি বাস ডিপো, ১৭টি ওয়ার্কসপ ও সার্ভিসিং সেন্টার, চারটি সার্ভিসিং লাইন, আটটি রক্ষণাবেক্ষণ ওয়ার্কশপ লাইন, সাব স্টেশন এবং অন্যান্য টেকনিক্যাল সাপোর্ট স্টেশন থাকবে।
এদিকে কেবল বাস–ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ ছাড়া পুরো প্রকল্পের কাজ ৮২ দশমিক ৬৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। মূলত ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় টার্মিনাল নির্মাণ কাজ শুরু করা যায়নি। ২০২০ সালের ২০ জানুযারি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কাছে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সংস্থা নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর ও সিডিএ’র অনাপত্তিপত্রসহ ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ১৩০ কোটি টাকা জমা দেয় চসিক। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়।
তবে ভূমি মালিকদের আপত্তিতে থমকে যায় অধিগ্রহণ কার্যক্রম। ক্ষতিপূরণ দেয়ার সময় ভূমি মালিকরা দাবি করেন, জমিগুলো নাল শ্রেণির। তবে জেলা প্রশাসনের সার্ভেতে নির্ধারণ করা হয় ডোবা বা খাই শ্রেণির। পরবর্তীতে স্থানীয়দের দাবির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়। সম্প্রতি মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, বর্তমানে যে অবস্থায় রয়েছে সে আলোকেই ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। অর্থাৎ ডোবা শ্রেণি হিসেবে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।
এ বিষয়ে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ভূমি মালিকরা আপত্তি তুলেছিল। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। যেন তাদের আবেদনটি আমলে নেয়া হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে সেটা গ্রহণ করিনি। এখন ৮ ধারার নোটিশ দেয়া হবে। নোটিশটি হল ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝে নেয়ার জন্য।
প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, আাগামী ৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী পলোগ্রাউন্ডে জনসমাবেশের পূর্বে অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কর্মসূচি আছে। সেখানে আমাদের প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের তালিকায় রাখার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। প্রকল্প পরিচালক চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবু সালেহ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ হলে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে বেশি দিন লাগবে না। জুনের মধ্যেই শেষ করে ফেলতে পারব।