টেকনাফের আলোচিত মাদক ও মানব পাচারকারী গ্যাং লিডার শাকের মাঝিকে (৪০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তার ভাইদের হামলায় আহত হন অভিযান পরিচালনাকারী টেকনাফ মডেল থানার এএসআই শাখাওয়াত হোসেন। গত রোববার রাত সোয়া ১টার দিকে উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড মুন্ডার ডেইল গ্রামের নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। শাকের কবির আহমেদের ছেলে। তার বিরুদ্ধে মাদক, মানব পাচার ও অস্ত্রসহ ৪টি মামলা রয়েছে।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হালিম জানান, রোববার রাতে টেকনাফ মডেল থানার একটি দল অভিযান চালিয়ে ২০১২ সালের মানব পাচার আইনের ৭/৮-এর ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি এবং আত্মস্বীকৃত আত্মসমর্পণকারী মাদক কারবারি মো. শাকের মিয়া প্রকাশ শাকের মাঝিকে গ্রেপ্তার করে।
এ সময় শাকের মাঝি এএসআই মো. সাখাওয়াতকে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। এতে সাখাওয়াতের ঠোঁট কেটে যায়। এ সময় আসামির ভাই মনু মিয়া (৪০) ও রফিকুল ইসলাম (২৯) পাশের রুম থেকে বের হয়ে পুলিশকে আঘাত করে। তারপরও অভিযানকারী টিম শাকের মাঝিকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
তিনি জানান, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ও তার দুই ভাইসহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। আহত এএসআইকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তার ঠোঁটে ৩টি সেলাই দেয়া হয়।
মানুষ বন্ধক রেখে মাদক পাচার করতেন শাকের মাঝি : মাদকের উৎসস্থল মিয়ানমারে মাদক কারবারিরা মানুষকে জিম্মি রেখে বাকিতে এদেশের কারবারিদের কাছে মাদক বিক্রি করে। মাদক বিক্রির অর্থ ঠিকমতো পরিশোধ করলে মুক্তি দেয়া হয় জিম্মিকে। না হয় নেমে আসে নির্যাতন।
সম্প্রতি এমন একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে ফের আলোচনায় আসেন উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাকের মাঝি। তিনি একই ইউনিয়নের বাহারছাড়া এলাকার আলী হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে মিয়ানমারের মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে বন্ধক রেখে ১ লাখ ইয়াবা আনেন। যথাসময়ে অর্থ পরিশোধ না করায় আলীকে নির্যাতন করা হচ্ছে-মিয়ানমার থেকে তার স্ত্রী ফাতেমা খাতুনের কাছে পাঠানো একটি ভিডিওতে এমন চিত্র দেখা যায়।
একসময় মিয়ানমারের মাদক কারবারিরা এদেশীয় মাদক কারবারিদের লেনদেনের স্বচ্ছতার উপর ভিত্তি করে বাকিতে বা অর্ধেক বাকিতে মাদক বিক্রি করত। বিভিন্ন সময় এদেশীয় কারবারিরা মাদক এনে তা বিক্রি করে কখনো অর্ধেক পরিশোধ করে, কখনো পরিশোধ করে না। এসব ঘটনার পর সেই দেশের কারবারিরা বাকিতে বিক্রি বন্ধ করে দেয়। আবার টাকা মেরে দেয়ার ভয়ে এদেশীয় কারবারিরা মিয়ানমারে অগ্রিম অর্থ লগ্নি করাও বন্ধ করে দেয়। এমন অবস্থায় মিয়ানমারের কারবারিরা সিদ্ধান্ত নেয়, মাদকের চালান আনার সময় ক্যাশ টাকা না দিলে ক্রেতা মিয়ানমারে তাদের নিকট কোনো নিকটজনকে বন্ধক রাখবে। পরে অর্থ পরিশোধ করলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। অন্যতায় মেরে ফেলবে।
বাহারছড়া ইউনিয়নের চৌকিদার পাড়ার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে নুরুল আমিনের (২২) ভাই আব্দুল্লাহ জানান, তার ভাইকে মিয়ানমারে কারেন্ট জাল আনার নাম করে নিয়ে ১১ লাখ টাকার ইয়াবার চালানের বিপরীতে বন্ধক রেখে চলে আসে একই এলাকার আলী হোসাইনের ছেলে শহীদ উল্লাহ। সময়মতো অর্থ পরিশোধ না করায় তার ভাইকে নির্যাতনের একটি ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠায় সেদেশের কারবারিরা। এরপর থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তি আত্মগোপনে চলে যায়।
এই বিষয়ে টেকনাফ মডেল থানার ওসি মো. আবদুল হালিম বলেন, অপরাধীরা আগে-পরে ঠিকই আইনের আওতায় আসবে।