আলোচনায় সিটি ডেভেলপমেন্ট চার্জ

আদায়ের উপায় খুঁজবে চসিক ও বন্দর কর্তৃপক্ষ দুই সংস্থার বৈঠকে পৌরকর নিয়েও আলোচনা

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২১ জুন, ২০২১ at ৫:০২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানির প্রতিটি কনসাইনমেন্টের (চালান) বিপরীতে ‘সিটি ডেভেলপমেন্ট চার্জ’ নামে কোনো ফি আদায় করা যায় কিনা তার উপায় খুঁজবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) ও বন্দর কর্তৃপক্ষ। শুল্ক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এই ফি আদায় করতে পারলে তা চসিকের মাধ্যমে নগর উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।
গতকাল রোববার সকালে বন্দর ভবনে অনুষ্ঠিত চসিক ও বন্দর কর্তৃপক্ষের যৌথ সভায় সিটি ডেভেলপমেন্ট চার্জ ফি’র বিষয়টি উঠে আসে। এতে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ শাহজাহান বক্তব্য রাখেন। সভায় সিটি ডেভেলপমেন্ট চার্জ, চসিকের প্রস্তাবিত পৌরকর এবং চসিকের নামে নগরের সড়ক থেকে টোল আদায় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
সভার আলোচনা ও সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপস্থিত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না শর্তে আজাদীকে বলেন, পণ্য আমদানি-রপ্তানির প্রতিটি কনসাইনমেন্টে সিটি ডেভেলপমেন্ট চার্জ নামে কোনো ফি শুল্ক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আদায় করা যায় কিনা সে ব্যাপারে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও চসিক কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে চেষ্টা চালাবেন। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ রোডে যেমন টোল রোডে চসিকের নামে টোল আদায় করা যায় কিনা সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ নেওয়া যায় মর্মে বন্দর চেয়ারম্যান পরামর্শ দেন।
পৌরকর প্রসঙ্গ : পৌরকর নির্ধারণে ২০১৭ সালে পঞ্চবার্ষিকী কর পুনর্মূূল্যায়ন করেছিল চসিক। এতে বন্দরের কাছে প্রস্তাবিত পৌরকর ছিল ১৬০ কোটি ১৬ লাখ টাকা। একই বছরের ডিসেম্বর মাসে পঞ্চবার্ষিকী কর পুর্নমূল্যায়ন কার্যক্রম স্থগিত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর সরকারি হোল্ডিংয়ের বিপরীতে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এরপর বন্দরকে পুনর্মূল্যায়নের আলোকে পৌরকর পরিশোধ করতে বলে চসিক। কিন্তু আপত্তি জানায় সংস্থাটি। এ অবস্থায় ধার্যকৃত পৌরকর আদায় নিয়ে বিপাকে পড়ে চসিক। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুই পক্ষ গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে দুই দফা বৈঠকও করে।
গতকালের সভায় পৌরকর নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সভায় চসিকের প্রস্তাবের আলোকে বন্দর চেয়ারম্যান জানান, বন্দরের পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের সাথে আলোচনা করে পৌরকর বিষয়ে সিদ্ধান্ত চসিককে জানাবেন। এক্ষেত্রে ২০১৭ সালের প্রস্তাবিত পৌরকরকেই বিবেচনায় নেওয়া হবে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের পূর্বে চবকের স্থাপনার বিপরীতে পৌরকর ধার্য করা হয়েছিল ২০১১ সালে। একই বছরের নভেম্বর মাসে দুই সংস্থার মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছিল। এর আলোকে চসিককে প্রতি অর্থবছরে পৌরকর বাবদ ৩৯ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা পরিশোধ করার কথা বন্দরের। সারচার্জ মওকুফের সুযোগ নিয়ে সংস্থাটি ৩৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা করে পরিশোধ করে আসছে। সিটি কর্পোরেশন মনে করে, ২০১৭ সালের পুনর্মূল্যায়িত পৌরকর আদায় করতে পারলে চসিকের রাজস্ব আদায় কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। এতে ত্বরান্বিত হবে নগর উন্নয়ন।
মেয়র যা বললেন : সভায় সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সিটি কর্পোরেশন একটি সেবামূলক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান। নিজস্ব আয়বর্ধক প্রকল্প ও নগরবাসীর প্রদত্ত কর এ প্রতিষ্ঠানের একমাত্র আয়ের উৎস। নগরের সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও সেবার পরিধি সম্প্রসারণে যে আর্থিক সক্ষমতা প্রয়োজন সেক্ষেত্রে যথেষ্ট অপ্রতুলতা রয়েছে আমাদের।
তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের আয়ের বড় সূত্র ছিল বন্দর হতে অকট্রয় থেকে প্রাপ্ত আর্থিক যোগান। কিন্তু অনেক দিন থেকেই অকট্রয় আদায়ের উৎসটি বন্ধ রয়েছে। ফলে চসিকের আর্থিক সক্ষমতায় বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
চট্টগ্রামের উন্নয়নে বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকা প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, শুধু চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের পাশাপাশি নগরীর উন্নয়নের সামঞ্জস্যতার বিষয়টি অত্যন্ত প্রণিধানযোগ্য। নগরের উন্নয়ন না হলে বন্দরের গুরুত্বও থাকে না। এই বিষয়টি ভাবতে হবে এবং চট্টগ্রাম বন্দরকে সিটি কর্পোরেশনকে ব্যাকআপ দিতে হবে।
মেয়র বলেন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে ট্যানেল নির্মাণ সম্পন্ন হলে দক্ষিণ তীরে নগরায়ন ও শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠবে এবং একের মধ্যে দুটি নগরীর সৃষ্টি হবে। এর ফলে সিটি কর্পোরেশন ও বন্দরের গুরুত্ব দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পাবে। তাই দুটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয় ও দ্বিপাক্ষিক স্বার্থের পরিধি বাড়াতে হবে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, চট্টগ্রামের সামগ্রিক উন্নয়ন একা চসিকের পক্ষে সম্ভব নয়। নগরের সাথে জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের যোগসূত্র রয়েছে। তাই আমাদের একে অপরের সাথে সমন্বয় সাধন করে নগরকে আলোকিত করতে হবে এবং সমগ্র দেশকে পজিটিভ ব্যাকআপ দিতে হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, এস্টেট অফিসার মো. জসিম উদ্দিন, বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য প্রশাসন ও পরিকল্পনা জাফর আলম, সদস্য প্রকৌশল নিয়ামুল আমিন, ডেপুটি কনজারবেটর ক্যাপ্টেন ফরিদ, সচিব ওমর ফারুক, প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসেন খান, এস্টেট অফিসার জিল্লুর রহমান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনগরীর চেয়ে শনাক্ত বেশি উপজেলায়
পরবর্তী নিবন্ধতারা তো করে গেছে লুটপাটের রাজনীতি : প্রধানমন্ত্রী