আলোকিত সকালটা বিকেল হতেই বিবর্ণ

প্রথম দিনে হাসানের দুর্দান্ত বোলিং, ৬ উইকেটে ভারতের সংগ্রহ ৩৩৯ রান

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শুক্রবার , ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ৪:৫০ পূর্বাহ্ণ

মাত্র কদিন হলো পাকিস্তানের মাটিতে বল হাতে আগুন ঝরিয়েছে বাংলাদেশের পেসাররা। ভারতেও তেমন কিছু করবে সে ধারণা ছিল দলের মধ্যে। কিন্তু ভারতের মতো বিশ্বসেরা দলের বিপক্ষে বল হাতে এতটাই আগুন ঝরাবেন বাংলাদেশের হাসান মাহমুদ তা হয়তো ভাবেনি অনেকেই। চেন্নাইয়ের লাল মাটির উইকেট বরাবরই স্পিনারদের পক্ষে কথা বলে। তাইতো এই টেস্ট শুরুর অনেক আগে থেকেই চেন্নাইয়ের উইকেট নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল।

আর সেই লাল মাটির উইকেটকে আরো লাল করে দিলেন হাসান মাহমুদ তার বোলিং তাণ্ডবে। এই তরুণের হাত ধরে দারুন এক সকাল বাংলাদেশের। রোহিত, কোহলি, গিল, রাহুল কিংবা রিষভ পান্তের মতো বিশ্বসেরা ব্যাটারদের দাঁড়াতেই দিলেন না হাসান মাহমুদ। পুরো দুই সেশন দাপট দেখানো বাংলাদেশের বোলাররা রণে ভঙ্গ দেন দিনের শেষ সেশনে। যার ফলে হাসান মাহমুদের হাত ধরে আলো ঝলমলে সকালটা বিকেল হতেই অন্ধাকারাচ্ছন্ন করে দিল অশ্বিনজাদেজা জুটি। সকালের হাসিটা ম্লান হয়ে গেল বিকেলে। যে ভারতকে চেপে ধরেছিল বাংলাদেশ সে ভারতই দিন শেষে চালকের আসনে। দুইশ রান করতে পারবে কিনা ভারত সে প্রশ্নটা উঠছিল বারবার। কিন্তু সপ্তম উইকেটে অশ্বিন এবং জাদেজার দুর্দান্ত ব্যাটিং ভারতকে পৌঁছে দিল ৩৩৯ রানে। এখনো হাতে উইকেট রয়েছে ৪টি। সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন রবি চন্দ্রন অশ্বিন। আর সেঞ্চুরির অপেক্ষায় রয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজা। ১৯৫ রানের বিশাল জুটি গড়ে দিনশেষে অবিচ্ছিন্ন তারা। সে সঙ্গে স্বাগতিকদের মুখে হাসি ফুটিয়ে প্রথম দিন শেষ করেছে তারা ৬ উইকেটে ৩৩৯ রানের বড় স্কোর নিয়ে। খেলেছে ৮০ ওভার। ১০ ওভার বাকি থাকতে দিনের খেলা শেষ হয়।

চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। মেঘাচ্ছন্ন সকালে শুরুটা বেশ ভালো করেন বাংলাদেশের দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদ। রান তুলতে রীতিমত ঘাম ঝরাতে হয়েছে ভারতীয় ব্যাটারদের। প্রথম ৪ ওভারে তারা নিতে পারে মাত্র ৮ রান। এর মধ্যে উইকেট পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে হাসান মাহমুদের দুর্দান্ত এক ডেলিভারি সরাসরি প্যাডে আঘাত করে রোহিত শর্মার। বাংলাদেশের জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। ক্লোজ কল হওয়ায় রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। রিভিউয়ে দেখা যায়, স্ট্যাম্পের ওপরের দিকে বল ছুঁয়ে যেতো। কিন্তু আম্পায়ার্স কল হওয়ায় সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান রোহিত। তবে সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি রোহিত। হাসান মাহমুদ তার পরের ওভারেই তুলে নিয়েছেন ভারতীয় অধিনায়কের উইকেট। তার সুইংয়ে ব্যাটের কানায় লাগিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যাচে পরিণত হন রোহিত। ১৯ বলে করেন ৬ রান। এরপর শুভমান গিলকেও শূন্য রানে ফিরিয়েছেন হাসান মাহমুদ। তার লেগ সাইডে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট ছুঁইয়ে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের গ্লাভসে বল জমা করেন গিল। ভারতীয় ব্যাটিংয়ের অন্যতম স্তম্ভ বিরাট কোহলিও দাঁড়াতে পারেননি হাসানের সামনে। দুর্দান্ত আউট সুইংয়ে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে উইকেট রক্ষককে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ৬ রান করেই। ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারায় ভারত। সবগুলো উইকেটই হাসানের।

প্রথম সেশনে প্রথম ঘণ্টাটা ছিল পুরোপুরি বাংলাদেশের। পেসার হাসান মাহমুদের তোপে রীতিমত কোণঠাসা হয়ে পড়ে ভারত। সেখান থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন জশস্বি জয়সওয়াল আর রিশাভ পান্ত। ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর চতুর্থ উইকেটে তারা যোগ করেন ৬২ রান। ২৩ ওভারে ৩ উইকেটে ৮৮ রান নিয়ে প্রথম দিনের লাঞ্চ বিরতিতে যায় স্বাগতিকরা। লাঞ্চের পরপরই আঘাত হানেন সেই হাসান মাহমুদ। বলটি অবশ্য ওয়াইড ছিল অনেকটাই। দেরিতে শট খেলেন পান্ত। বল ব্যাটে ছুঁয়ে চলে যায় উইকেটরক্ষক লিটন দাসের হাতে। ৩৯ রানে সাজঘরের পথ ধরেন পান্ত। হতাশায় নিজের প্যাডেই ব্যাট দিয়ে আঘাত করেন। ৯৬ রানে ভারত হারায় ৪ উইকেট। গতিতে ব্যাটারদের ভড়কে দেওয়ার সামর্থ্যে বাংলাদেশি পেসারদের মধ্যে নাহিদ রানা এখন সবার ওপরে। এবার নাহিদের গতিতে পরাস্ত হলেন অনেকটা সময় এক প্রান্ত ধরে রেখে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া জশস্বি জয়সওয়াল। নাহিদের ১৪৮ কিলোমিটার গতির বল বুঝতে না পেরে ব্যাট ছুঁইয়ে দিয়েছিলেন জয়সওয়াল। প্রথম স্লিপে ক্যাচ নেন সাদমান ইসলাম। ১১৮ বলে ৯ টি চারের সাহায্যে ৫৬ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন ভারতীয় ওপেনার। এর পরের ওভারে ৫২ বলে ১৬ রান করা লোকেশ রাহুল পড়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজের ঘূর্ণি ফাঁদে। শর্ট লেগে দারুণ এক নিচু ক্যাচ নিয়েছেন জাকির হাসান। ৫ বলের মধ্যে ২ উইকেট তুলে নিয়ে ফের ভারতকে চেপে ধরে বাংলাদেশ। ১৪৪ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ভারত তখন বেশ চাপে। আর ঠিক তখনই প্রতিরোধ গড়ে তোলেন রবি চন্দ্রন অশ্বিন এবং রবীন্দ্র জাদেজা। এ জুটি ভাঙতে পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। দুজন দুর্দন্ড প্রতাপে খেলে শুধু দিনটাই পার করেনি রান বাড়িয়েছেন বানের জলের মতো। এই দুজনের মধ্যে অশ্বিন যেন ওয়ানডে খেলছিলেন। তৃতীয় সেশনেই সবচেয়ে বেশি বিধ্বংসী ছিলেন অশ্বিন এবং জাদেজা। এই সেশনে তারা ১৬৩ রান তোলেন। দিনের খেলা ১০ ওভার কম হয়েছে। না হয় শেষ সেশনে ভারতের রান ৪০০’ও পার হয়ে যেতে পারতো। দুজন মিলে সপ্তম উইকেটে যোগ করেন ১৯৫ রান। যেখানে অশ্বিন অপরাজিত রয়েছেন ১০২ রানে। তার ১১২ বলের ইনিংসটিতে ১০টি চার এবং ২টি ছক্কার মার ছিল। ক্যারিয়ারের ষষ্ট সেঞ্চুরিটা তুলে নেন ১০৮ বলে। জাদেজা অপরাজিত রয়েছেন ১১৭ বলে ৮৬ রান করে। যেখানে তিনি ১০টি চার এবং ২টি ছক্কা মেরেছেন। বাংলাদেশের হাসান মাহমুদ ৫৮ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিআইইউর নতুন উপাচার্য প্রফেসর নুরুল আবছার
পরবর্তী নিবন্ধচুনতিতে টিলা কেটে বাণিজ্যিক খেলার মাঠ করার প্রস্তুতি