আলেকজান্ডার ফ্লেমিং – জীবাণুনাশক অ্যান্টিবায়োটিক পেনিসিলিন আবিষ্কারের মাধ্যমে মানবকল্যাণে এক অনন্য ভূমিকা রাখেন। পেশায় ছিলেন চিকিৎসক, কিন্তু জীববিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা এবং ওষুধ তৈরিতেও তাঁর ছিল অগাধ জ্ঞান। তবে গভীর অভিনিবেশ ছিল জীবাণুতত্ত্ববিদ্যায়। আর এ বিষয় নিয়েই আজীবন গবেষণা করে গেছেন মহান এই বিজ্ঞানী। আলেকজান্ডার ফ্লেমিংয়ের জন্ম ১৮৮১ সালের ৬ আগস্ট স্কটল্যান্ডে, এক কৃষক পরিবারে। লন্ডনের সেন্ট মেরিস হসপিটাল মেডিকেল স্কুল থেকে ১৯০৬ সালে ডিস্টিংশনসহ এমবিবিএস পাস করেন তিনি।
পরবর্তী সময়ে এই প্রতিষ্ঠানের গবেষণা বিভাগে যোগ দেন। এখানেই তিনি বিশিষ্ট বিজ্ঞানী স্যার অ্যালমার্থ রাইটের অধীনে গবেষণা শুরু করেন। সে সময় অ্যালমার্থ ছিলেন প্রতিষেধক বিদ্যার অন্যতম শ্রেষ্ঠ গবেষক। তাঁর অধীনে ফ্লেমিং সাফল্যের সাথে বি.এস.সি ডিগ্রি লাভ করেন, অর্জন করেন গোল্ড মেডেল। ১৯১৪ সালে সেন্ট মেরিতে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন ফ্লেমিং। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে রয়্যাল আর্মি মেডিকেল বিভাগে কাজ করেছেন যুদ্ধাহত সৈনিকদের পাশে। বেশ কিছুদিন ছিলেন ফ্রান্সের পশ্চিম সীমান্তে। আহতদের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে তিনি দেখলেন কেবল ক্ষতস্থানে জীবাণু সংক্রমণের ফলে যে পচন ধরে তা-ই অনেক সৈনিকের মৃত্যুর কারণ। ফ্লেমিং আবিষ্কার করেন, সাধারণ ক্ষত নিরাময়ে অ্যান্টিসেপটিক কার্যকরী হলেও গভীর ক্ষত দূর করায় এর কোনো কার্যকারীতা নেই। বিষয়টি তাঁকে ভাবিয়ে তোলে। ১৯২৮ সাল। ফ্লেমিং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবাণুতত্ত্ববিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। সেই সাথে চলে গবেষণা। এ সময়ে স্ট্যাফাইলোকক্কাস নামের একটি জীবাণু নিয়ে গবেষণার এক পর্যায়ে অনেকটা আকস্মিকভাবেই আবিষ্কার করে ফেলেন জীবাণুনাশক পেনিসিলিন। ‘পেনিসিলিয়াম নোটেটাম’ নামের এমন একটি ছত্রাকের সন্ধান পান তিনি যেটি জীবাণুনাশক। এই ছত্রাকটির মধ্যেই ফ্লেমিং খুঁজে পান জীবন-রক্ষাকারী পেনিসিলিনের অস্তিত্ব। পরবর্তী সময়ে একে মানবদেহে ব্যবহার উপযোগী করে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখেন দুজন বিজ্ঞানী – হাওয়ার্ড ফ্লোরি এবং আর্নস্ট চেইন। চিকিৎসায় বিশেষ অবদানের জন্য এই তিনজনকে ১৯৪৫ সালে নোবেল পুরষ্কার দেওয়া হয়। এই আবিষ্কার ছিল চিকিৎসাক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্তের সূচনা। গবেষণার পাশাপাশি জীবাণু, প্রতিষেধক ও কেমোথেরাপি বিষয়ে প্রচুর জ্ঞানগর্ভ প্রবন্ধ লিখেছেন ফ্লেমিং।
১৯৫৫ সালের ১১ মার্চ লন্ডনে প্রয়াত হন মানবতাবাদী এই বিজ্ঞানী। ১৯৯৯ সালে টাইম ম্যাগাজিনে বিশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মনীষী হিসেবে সম্মানিত করা হয় তাঁকে।