করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পরাপারে পাড়ি দিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী আলী আশরাফ। তাঁর মৃত্যুতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণী মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রকৌশলী আশরাফ নগর উন্নয়ন পরিকল্পনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি নগর উন্নয়নের একজন দক্ষ কারিগর ছিলেন বলে জানান তার এক সময়ের সহকর্মী এবং শুভানুধ্যায়ীরা। তারা বলছেন, তার মতো একজন দক্ষ নগর পরিকল্পনাবিদের অভাব সহজে পূরণ হওয়ার নয়। প্রকৌশলী আলী আশরাফকে নিয়ে তাঁর সাবেক সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের মতামত তুলে ধরা হলো।
মু. সিকান্দার খান
নগরীর উন্নয়ন নিয়ে ভাবতেন
প্রকৌশলী আলী আশরাফের সাথে আমার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ‘চট্টগ্রাম পরিকল্পিত ফোরাম’ নামে আমরা একটি সংগঠন করি। যেটিতে এক সময় ড. জামাল নজরুল ইসলামও যুক্ত ছিলেন। এই ফোরামে আশরাফ সম্ভবত ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এরমধ্যে আবার আশরাফ সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করলেন। তখন থেকে তিনি একপ্রকার ব্যস্ত হয়ে যান। তবে আমরা ডাকলে আসতেন। এছাড়া নগর উন্নয়ন বিষয়ক বিভিন্ন সভা-সেমিনারে দেখা হতো। আশরাফ খুবই সজ্জন ব্যক্তি ছিল। সবার সাথে তার মধুর সম্পর্ক ছিল। চট্টগ্রামের নগরের উন্নয়ন নিয়ে তিনি খুব ভাবতেন। নগর উন্নয়নে বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক মতামত তুলে ধরতেন। বিশেষ করে জলাবদ্ধতা, পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে তার সুন্দর সুন্দর মতামত তুলে ধরতেন। আশরাফ খুবই বিনয়ী প্রকৃতির লোক ছিলেন। তার তেমন কোনো রোগের কথা কিংবা অসুস্থতার শুনিনি। কিন্তু হঠাৎ করে করোনায় আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলেন। আশরাফের এই চলে পুরো দেশ এবং চট্টগ্রামবাসীর জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বলে আমি মনে করি।
স্থপতি সোহেল শাকুর
ছিল মানুষের সাথে মেশার অপূর্ব ক্ষমতা
আশরাফ ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় কম করে হলেও ২৮ বছর হবে। বয়সে আমি তাঁর থেকে ১০-১২ বছরের ছোট হবো। বয়সে ছোট হলেও ওনি আমার সাথে বন্ধুর মতো মিশতেন। মানুষের সাথে মেশার তাঁর অপূর্ব ক্ষমতা ছিল। মানুষকে খুব সহজেই আপন করে নিতে পারতেন তিনি। প্রকৌশলী হিসেবেও তিনি সফল ছিলেন। চট্টগ্রাম নগরীর উন্নয়নে তাঁর খুব চিন্তাভাবনা ছিল। নগর নিয়ে তিনি ভাবতেন, একইসাথে তিনি ভাবনাগুলো অন্যের মাঝে সঞ্চার করে দিতেন। তিনি খুবই পেশাদার লোক ছিলেন। নগর পরিকল্পনার খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করতেন। দেশ ও চট্টগ্রামবাসীকে তাঁকে আরো অনেক কিছু দেয়ার ছিল। এই চলে যাওয়া, আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বলে আমি মনে করি।
স্থপতি আশিক ইমরান
চট্টগ্রামের প্রতি খুবই দরদী ছিলেন
ইঞ্জিনিয়ার আলী আশরাফ একজন বিদগ্ধ নগর পরিকল্পনাবিদ ছিলেন। চট্টগ্রাম নগরী নিয়ে খুব বেশি ভাবতেন। চট্টগ্রামের প্রতি তিনি খুবই দরদী ছিলেন সেটি বিভিন্ন সভা সেমিনারে তাঁর বক্তব্যে আমরা আঁচ করতে পারতাম। তাঁর মতো ব্যক্তি হয়তো আমরা আর পাবো না। তিনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরামর্শক হিসেবেও তিনি কাজ করেছেন। নগরীর মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে কাজ করেছেন। যখনই দেখা হতো, নগর উন্নয়ন নিয়ে ওনার পরিকল্পনাগুলো শেয়ার করতেন। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ প্রকৌশলী এবং নিখাদ ভদ্রলোক।
প্রকৌশলী শাহীনুল ইসলাম খান
ড্রেনেজ সিস্টেম নিয়ে ছিল অসীম জ্ঞান
আমরা সিডিএর মাস্টারপ্ল্যান করার সময় তাঁর সহায়তা নিয়েছিলাম। তিনি এই চট্টগ্রাম শহর সম্পর্কে খুব ভালো জানতেন। মাস্টারপ্ল্যান করার সময় লক্ষ্য করেছি, তিনি কোন খালের কেমন গতি প্রকৃতি, কেমন তার বর্তমান অবস্থা সেইসব খুঁটিনাটি বিষয়গুলো মাথায় নিয়ে কাজ করতেন। এছাড়া ড্রেনেজ সিস্টেম নিয়ে তাঁর অসীম জ্ঞান ছিল। নগর উন্নয়নের বিষয়গুলো তিনি নোট রাখতেন। ডাটা সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করে তিনি বিভিন্ন ফোরামে সেগুলো আলোচনা করতেন। তাঁর জ্ঞানগর্ভ আলোচনা থেকে আমরাও অনেক কিছু শিখতাম। তিনি আমাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশতেন। বিভিন্ন প্রকৌশলগত বিভিন্ন ত্রুটি বিচ্যুতি নিয়ে কথা বলতেন। আমার মতে, তিনি একজন প্রকৌশল বুদ্ধিজীবী ছিলেন।