আলাস্কার উইটিয়া অদ্ভুত এক শহর

সাফ্‌ফাত আহম্মদ খান | বুধবার , ১ নভেম্বর, ২০২৩ at ৬:৪০ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবীতে যে কত শত অদ্ভুত ঘটনা আছে তার কয়টিই বা আমাদের জানা? সেই রকম একটি অদ্ভুত শহরের ব্যাপারে আজ আমরা জানবো। বন্ধুরা, তোমরা নিশ্চয়ই জানো বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা আমেরিকা। সেই দেশের আলাস্কা রাজ্যে উইটিয়া নামের একটি শহর আছে যেখানে শহরের সকল বাসিন্দা একই সাথে একটি বহুতল ভবনে বসবাস করে। শুধু কি তাই, শুনলে অবাক হবে তাদের কারোরই ভবনের বাইরে যেতে হয় না কারণ দৈনন্দিন জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল কিছুই যেমন দোকান, রেস্তোরাঁ, হাসপাতাল, স্কুল, খেলার মাঠ, পুলিশ স্টেশন, সরকারি দফতর, গির্জা, ক্লাব ঘর সকল কিছুই আছে এই এক ভবনে।

তোমরা নিশ্চয়ই ভাবছো এটা কীভাবে সম্ভব আর এই ভবনটিই বা কত বড়। ভবনটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে হলে আগে তার ইতিহাস শুনতে হবে।

এটি আসলে ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের একটি মিলিটারি বেস স্টেশন। পরবর্তীতে সেটিতে সাধারণ মানুষের বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়। মূল ভবনটি ১৪ তলা বিশিষ্ট যা বাইরে থেকে দেখতে একটি মনে হলেও আসলে ৩টি আলাদা আলাদা ভবন যেগুলোকে একটি থেকে অন্যটির থেকে ২০ সেন্টিমিটার ফাঁকা রাখা হয়েছে। ভবনটির বর্তমান নাম বেগিচ টাওয়ার। আর এখানে বসবাস করে তিনশয়েরও বেশি মানুষ।

উইটিয়া শহরের এ ভবনগুলো তৈরি করা হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। ১৪ তলার হজ বিল্ডিংটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৫৭ সালে। এটিতে আছে ১৫০টি এপার্টমেন্ট।

বাকনার বিল্ডিং নামের অপর ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছিল ১৯৫৩ সালে। এটিকে এক সময় বলা হতো ‘এক ছাদের নিচে শহর’। বাকনার বিল্ডিংটি অবশেষে পরিত্যক্ত হয়।

বন্ধুরা, তোমরা যদি পৃথিবীর মানচিত্রে দেখো তাহলে দেখবে আলাস্কা রাজ্যটি উত্তর আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে অবস্থিত। এখানে সারা বছরই ঠাণ্ডা আবহাওয়া ও তুষারপাত হয়। শীতকালেতো এর তাপমাত্রা নেমে হয়ে যায় মাইনাস ২১ ডিগ্রি যা সহ্য করা অনেক কঠিন। এই প্রতিকূল আবহাওয়ায় টিকে থাকার জন্যই বেগিচ টাওয়ার নামের বহুতল ভবনটিকে সবাই শহরের আদলে গড়ে তুলেছে। পুরো ভবনটি লিফট এবং করিডোর দ্বারা সংযুক্ত যে কারণে খুব সহজেই এক ফ্লোর থেকে অন্য ফ্লোরে চলাচল করা যায়। ভবনটিতে আছে ভূগর্ভস্থ টানেলও। একটি শহরে আধুনিক যা যা নাগরিক সুবিধা আছে সেগুলোর সবকিছুই আছে এই বেগিচ টাওয়ারে।

এখানে একজন মেয়র আছেন যার কাছে নাগরিকরা তাদের অভিযোগ জানাতে পারেন। ভবনটিতে পর্যটকদের জন্য একটি হোটেলও রয়েছে।

তবে এই উইটিয়াতে ভ্রমণ করা কিন্তু সহজ নয়। একটি পাহাড়ের সুরঙ্গের ভিতর দিয়ে শহরটিতে আসতে হয় যা এখানে আসার একমাত্র সড়কপথ। সুড়ঙ্গের ভিতর রেললাইন পাতা আছে। কয়েক ঘণ্টা পর পর গাড়ি চলাচল করতে দেয়া হয়। রাতের বেলায় সুড়ঙ্গটি বন্ধ থাকে। সুতরাং কাজের প্রয়োজনে বাইরে গেলে বাসিন্দাদের রাতের আগেই শহরে ফিরতে হয়। এখানকার বেশির ভাগ মানুষই প্রশান্ত মহাসাগরে মাছ ধরার কাজ করে থাকেন। বিভিন্ন দেশ থেকে সামুদ্রিক নৌযান আসে এখানে।

এতক্ষণ পড়ার পর তোমাদের মনে নিশ্চয়ই একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এই শহরে কি আর কোনো বাড়ি নেই বা নতুন করে কি বাড়ি বানানো যায় না? কেন সবাইকে একটি বাড়িতেই থাকতে হবে? আসলে এখানে নতুন করে বাড়ি বানানোর সরকারি অনুমতি নেই আর সহজে তা বানানো সম্ভবও নয়। আর পুরাতন কিছু বাড়ি আছে যেগুলো বসবাসের অনুপযোগী। পুরাতন বাড়িগুলোকে মানুষজন মাছ ধরার যন্ত্রপাতি সংরক্ষণের কাজে ব্যবহার করে। এতকিছু শোনার পর এক বাক্যে বলাই যায় বেগিচ টাওয়ার শুধু একটি ভবন নয় এটি একটি শহরও।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভুল বোঝাবুঝি
পরবর্তী নিবন্ধদেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান