ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ (১৮৬২–১৯৭২)। ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীত শিল্পের এক কিংবদন্তি পুরুষ। বিশ্ববিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ। সঙ্গীতের এই জগতে তিনিই প্রথম বাঙালি। আলাউদ্দিন খাঁর জন্ম ১৮৬২ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিবপুরে। তাঁর পিতা সবদর হোসেন খাঁ ওরফে সদু খাঁও ছিলেন বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ। মাতার নাম সুন্দরী বেগম। তাঁর সঙ্গীত গুরু ছিলেন আগরতলা রাজদরবারের সভা সঙ্গীতজ্ঞ তানসেনের কন্যাবংশীয় রবাবী ওস্তাদ কাশিম আলী খাঁ। তবে সঙ্গীতে হাতেখড়ি বড় ভাই ফকির আফতাবউদ্দিন খাঁর কাছে। আলাউদ্দিনের ডাক নাম ছিল ‘আলম’। পাঠশালার গতানুগতিক পাঠে তিনি আকৃষ্ট ছিলেন না। বরং ব্যাকুল হতেন গাঁয়ের যাত্রাপালার গান শোনার জন্য। সঙ্গীতের প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসায় একসময় স্কুল, বাড়ি সব ছেড়ে পালিয়ে যোগ দিলেন যাত্রা দলে, ঘুরতে লাগলেন গ্রাম থেকে গ্রামে। পরবর্তীকালে কলকাতায় প্রখ্যাত সঙ্গীত সাধক গোপালকৃষ্ণের শিষ্যত্ব লাভের সুযোগ হয়। এই সঙ্গীত গুরুর কাছে আলাউদ্দিন খাঁ সাত বছর সরগম সাধনা করেন। এরপর আকৃষ্ট হন যন্ত্র সঙ্গীতে। এ সময় তাঁর দীক্ষাগুরু ছিলেন অমৃতলাল দত্ত। দীর্ঘ ও একাগ্র সাধনার ফলে ধীরে ধীরে তিনি সব ধরনের যন্ত্র সঙ্গীতেই দক্ষ হয়ে ওঠেন। তার পরেও থেমে থাকে না তাঁর পথচলা। দীর্ঘ ত্রিশ বছর তালিম নেন ওস্তাদ ওয়াজির খাঁর কাছে।
সুদীর্ঘ সাধনা ও শ্রমলব্ধ জ্ঞান অন্বেষণের পরই তিনি সেসবের কিছু কিছু প্রয়োগ ঘটান রাগ–সঙ্গীতের নানা ক্ষেত্রে। এ উপমহাদেশের রাগ সঙ্গীতকে তিনিই প্রথম পাশ্চাত্যে পরিচিত করান। মেঘ–বাহার, আরাধনা, হেমন্ত, দুর্গেশ্বরী, প্রভাতকেলী, বেহাগ প্রভৃতি রাগ–রাগিনীর স্রষ্টা ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ বেশ কিছু বাদ্যযন্ত্র উদ্ভাবনেও পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন। মূলত সরোদ বাদক হলেও ধ্রুপদী সঙ্গীতের নানা ক্ষেত্রে তিনি এক অনুসরণীয় গুরু। দিল্লি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব ল’ উপাধিতে সম্মানিত করে। এছাড়াও তিনি প্রচুর পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হন। শান্তিনিকেতনে আমন্ত্রিত অধ্যাপক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন কিছুকাল। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই সেপ্টেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।