আলম হত্যার মিশনে অংশ নিয়েছিল চিহ্নিত আট থেকে দশ সন্ত্রাসী

ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় ছেলে আরাফাত

রাউজান প্রতিনিধি | সোমবার , ২৭ অক্টোবর, ২০২৫ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

রাউজানে শনিবার বিকেলে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড যুবদল কর্মী আলমগীর প্রকাশ আলমের মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রোববার বিকালে বাড়িতে এনে জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে। এদিন আলমের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন সংস্থার লোকজন। তারা নিহতের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সাথে কথা বলে হত্যার মোটিভ জানার চেষ্টা করেছেন।

জানা যায়, নিহত আলম এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। কিছুদিন আগে তার একমাত্র কন্যাকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে আরাফাত হোসেন একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, এলাকায় পুলিশের তৎপরতা থাকলেও এখনো কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। রাতে আলমের বাড়িতে পুলিশি পাহারা ছিল। এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।

হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে নিহতের পুত্র আরাফাত হোসেন জানান, তার বাবাকে হত্যার মিশনে অংশ নিয়েছিল চিহ্নিত আট থেকে দশজন সন্ত্রাসী। বাইরে অবস্থান করেছিল আরো কয়েকজন অস্ত্রধারী। তিনি বলেন, কায়কোবাদ মসজিদের সামনের কবরস্থানের ঝোপের ভিতর থেকে বেরিয়ে সন্ত্রাসীরা যখন বাবাকে গুলি করছিল তখন আমি ছিলাম বাবার পিছনের গাড়িতে। সন্ত্রাসীরা আমার দিকেও গুলি ছুঁড়ে, তখন আমি দৌঁড়ে পালাচ্ছিলাম। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছি। তিনি বলেন, ‘যারা আমার বাবাকে হত্যা করেছে তাদের অনেককেই আমি দেখেছি। হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্ব দেয় সন্ত্রাসী রায়হান। হত্যা পরিকল্পনা করেছিল বক্তেয়ার ফকির, আবু বক্কর চৌধুরীসহ এলাকার কয়েকজন। বাবা জীবিত থাকাকালীন আলোচিত ব্যক্তিরা যে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করছে তা তিনি এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে ভিডিও বক্তব্যে জানিয়ে গেছেন। এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ওইসব ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে।

নিহত আলমের পিতা আব্দুর সাত্তার বলেছেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার ছেলেকে রাজনৈতিক কারণে ডাকাত আখ্যা দিয়ে তাদের পরিবারকে বাড়িঘর ছাড়া করা হয়েছিল। সেই সময় প্রভাবশালীরা পুলিশকে ব্যবহার করে অস্ত্র উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে ছেলে আলমকে মামলা দিয়ে বছরের পর বছর জেল খাটিয়েছে। তাদের বাড়িভিটা জবরদখল করে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে বিসিক শিল্পনগরী কর্তৃপক্ষের হাতে তা বুঝিয়ে দিয়েছে। বাড়িঘর হারিয়ে বিগত ১৭ বছর চকরিয়া গিয়ে বসবাস করতে হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, তার ছেলের আশংকাই আজ সত্য হয়েছে। হত্যার পরিকল্পনাকারীরা রায়হান বাহিনীকে ভাড়া করে এনে আলমকে খুন করিয়েছে। এ বিষয়ে ফোনে অভিযুক্ত ব্যক্তিদ্বয়ের বক্তব্য জানতে চাইলে স্থানীয় বিএনপি নেতা বক্তেয়ার ফকির ও বক্কর চৌধুরী বলেন, ‘আলমের পিতা ও ছেলের বক্তব্য ভিত্তিহীন।’ তারা ওই দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘এটি তাদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র।’ আলোচিত দুজনের দাবি আলমকে সবসময় তারা আর্থিক সাহায্যসহযোগিতা দিয়ে আসছিলেন। ‘কেন তারা এই ঘটনার সাথে আমাদের নাম জড়াচ্ছে বুঝতে পারছি না’বলেন তারা।

জানা যায়, আলম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রিয়াজ (৩০) ও আকিব (২৮) নামে আলমের আরো দুই সহযোগী গুলিবিদ্ধ হন। তারা এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানায়, ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে আলমের লাশ বাড়িতে এনে জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে পরিবারের পক্ষে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।

উল্লেখ্য, নিহত আলমগীর প্রকাশ আলম শনিবার বিকেলে মোটর সাইকেল ও একটি সিএনজি টেঙিযোগে ভাই, স্ত্রী ও সন্তানসহ এক আত্মীয়ের বাড়িতে দাওয়াত খেয়ে বাড়ি ফেরার পথে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিতে ঘটনাস্থলে নিহত হন। তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, সাবেক এমপি গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী ছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগুলির শব্দে আতংকিত নারীর মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধচাচাতো ভাইদের হামলায় নিহত রিপুর স্বামীর মামলা, গ্রেপ্তার ১