আর সমুদ্রে ভাসবে না বাংলার জ্যোতি ও সৌরভ

দুটি জাহাজকে বিএসসির বহর থেকে প্রত্যাহার জ্বালানি তেল পরিবহনে নতুন জাহাজ ভাড়া

হাসান আকবর | সোমবার , ৭ অক্টোবর, ২০২৪ at ৫:০৩ পূর্বাহ্ণ

শেষ যাত্রার আগেই আগুনে শেষ হয়ে গেল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) মালিকানাধীন এমটি বাংলার সৌরভের চলাচল। জাহাজটি থেকে তেল খালাসের পরই এটিকে ফেইজ আউট করে বহর থেকে প্রত্যাহার করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএসসি। কিন্তু একদিন আগে জাহাজটিতে বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বিএসসি একই সাথে এমটি বাংলার জ্যোতিকেও ফেইজ আউট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই দুটি অয়েল ট্যাংকারকে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসসি। সরকারের অনুমোদন পাওয়ার পর জাহাজ দুটি স্ক্র্যাপ করার জন্য বিক্রি করে দেওয়া হবে। টানা ৩৭ বছর দেশের সেবা করে যাওয়া জাহাজ দুটিতে পাঁচ দিনের ব্যবধানে বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৭ সালে ডেনমার্কের শিপইয়ার্ডে তৈরির পর ১৪ হাজার ৫৪১ টন ধারণ ক্ষমতার এমটি বাংলার জ্যোতি বিএসসির বহরে যুক্ত করা হয় ওই বছরের মে মাসে। একই শিপইয়ার্ডে তৈরি ও একই ধারণক্ষমতার এমটি বাংলার সৌরভ যুক্ত হয় ওই বছরের জুনে। জাহাজ দুটি দীর্ঘদিন ধরে বিএসসির বহরে আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করলেও গত কয়েক বছর এগুলো কেবলমাত্র বহির্নোঙর থেকে পতেঙ্গার গুপ্তখাল ডলফিন জেটিতে জ্বালানি তেল পরিবহনে ব্যবহৃত হচ্ছিল।

সাধারণত সমুদ্রগামী জাহাজের লাইফটাইম ২৫ বছর পর্যন্ত ধরা হয়। কিন্তু দেশের প্রয়োজনে এই দুটি অয়েল ট্যাংকারকে ৩৭ বছর ধরে চালানো হচ্ছিল। জাহাজ দুটিকে এক বছর আগে স্ক্র্যাপ হিসেবে ভেঙে ফেলার চিন্তাভাবনা করা হলেও জ্বালানি তেল পরিবহনের কথা মাথায় রেখে বিপুল অর্থ খরচ করে জাহাজ দুটিকে সচল রাখা হয়েছিল।

বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কমডোর মাহমুদুল মালেক আজাদীকে বলেন, এমটি বাংলার সৌরভ ও এমটি বাংলার জ্যোতি আর সমুদ্রে ভাসবে না। দুটি জাহাজকে ফেইজ আউট করে বহর থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। এই দুটি জাহাজকে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে ভেঙে ফেলা হবে।

তিনি বলেন, অনেক আগেই জাহাজ দুটিকে বহর থেকে প্রত্যাহার করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দেশের জ্বালানি তেল পরিবহনের স্বার্থে তা করতে পারিনি। জাহাজ দুটি সচল রাখতে মেইনটেনেন্সে প্রচুর অর্থ খরচ করা হতো। কিন্তু গত ৩০ সেপ্টেম্বর এমটি বাংলার জ্যোতিতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের পর জাহাজ দুটিকে আর না চালানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিই। এমটি বাংলার সৌরভ জাহাজের হ্যাজে যে তেল ছিল সেগুলো ইস্টার্ন রিফাইনারিতে বুঝিয়ে দিয়ে জাহাজটিকে ফেইজ আউট করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে জাহাজটির শেষ যাত্রার একদিন আগেই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটল। তিনি বলেন, জাহাজ দুটি আর চালানোর অবস্থায় নেই।

জ্বালানি তেল পরিবহনে নতুন জাহাজ : আমদানিকৃত জ্বালানি তেল পরিবহনে বিএসসির সাথে চুক্তি রয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন বিপিসির। আমদানিকৃত প্রায় ৭০ লাখ টন জ্বালানি তেল নিয়ে আসা জাহাজগুলোর মধ্যে যেসব মাদার ভ্যাসেল বন্দর জেটিতে ভিড়তে পারে না সেসব বড় জাহাজ থেকে বিএসসি বাংলার জ্যোতি এবং বাংলার সৌরভের মাধ্যমে জ্বালানি তেল লাইটারিং করে। পাঁচ দিনের ব্যবধানে জাহাজ দুটিতে বিস্ফোরণ এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর বহির্নোঙর থেকে জ্বালানি তেল লাইটারিংয়ের ব্যাপারটি অনিশ্চয়তায় পড়ে। ইতোমধ্যে বিএসসি জাহাজ দুটিকে বহর থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই অবস্থায় বহির্নোঙরে অবস্থানকারী এমটি ওমেরা লিগ্যাসি জাহাজে থাকা ত্রিশ হাজার টন ক্রুড অয়েল ইস্টার্ন রিফাইনারিতে আনা নিয়ে চিন্তিত বিএসসি।

কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি দ্রুত এই সংকটের সুরাহা করে ফেলে। ইতোমধ্যে বিএসসি ৩০ হাজার টন ধারণক্ষমতার একটি অয়েল ট্যাংকার ভাড়া করেছে। এমটি গ্লোবাল ডিগনিটি নামের জাহাজটি গতকাল বহির্নোঙরে এসে পৌঁছেছে। পানামার পতাকাবাহী জাহাজটি আজকালের মধ্যে অপারেশন শুরু করবে। এটি এমটি ওমেরা লিগ্যাসিতে থাকা ৩০ হাজার টন ক্রুড অয়েল খালাস করার মাধ্যমে বিএসসির বহরে কার্যক্রম শুরু করবে।

ভাড়া করা জাহাজটি চট্টগ্রামে পৌঁছার ব্যাপারটি নিশ্চিত করে বিএসসির এমডি কমডোর মাহমুদুল মালেক আজাদীকে বলেন, বিপিসির জ্বালানি তেল পরিবহনে কোনো সংকট হবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতিন মাস পর চেনা রূপে চবি
পরবর্তী নিবন্ধসতর্কতা সংকেত প্রত্যাহার, ফের সাগরে যাচ্ছে মাছ ধরার ট্রলার