দুদিন ধরে অজ্ঞান থাকার পর অবশেষে না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন ডা. সামিনা আকতার (৪৫)। গত মঙ্গলবার রাতে সিএনজিচালিত টেক্সির ধাক্কায় গুরুতর আহত হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। ওইদিন রাতেই তার মাথায় অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকরা। তবে অস্ত্রোপচারের পরও তার জ্ঞান ফেরেনি। দুদিন অজ্ঞান থাকার পর অবশেষে গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকাল সাড়ে আটটার দিকে মারা যান এ চিকিৎসক। ডা. সামিনা আকতারের মৃত্যুর তথ্য আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন চমেক হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া ও আইসিইউ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হারুন-উর-রশীদ।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার রাত দশটার দিকে নগরের কাজীর দেউড়ি রেডিসন ব্লু হোটেলের সামনের সড়ক দিয়ে রিকশাযোগে যাচ্ছিলেন ডা. সামিনা। মেডিয়ান গ্যাপ (রাস্তার ডিভাইডারের কাটা অংশ) দিয়ে রিকশাটি বিপজ্জনকভাবে রাস্তার অপর পাশে চলে আসে। ওই সময় বেপরোয়া গতির একটি সিএনজি টেক্সি সামিনাকে বহনকারী রিকশাকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে সামিনা রিকশা থেকে ছিটকে রাস্তায় পড়ে যান। গুরুতর আহত হয়ে ঘটনাস্থলেই জ্ঞান হারান তিনি। অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে তাঁকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে যান পথচারীরা। হাসপাতালে ভর্তির পরপরই সামিনাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। ওই দিন (মঙ্গলবার) রাতেই তাঁর মাথায় অস্ত্রোপচার হয়। পরে তাঁকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁকে আর বাঁচানো যায়নি। দুর্ঘটনায় ডা. সামিনা মাথা ও বুকে গুরুতর আঘাত পেয়েছিলেন জানিয়ে চমেক হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হারুন-উর-রশীদ আজাদীকে বলেন, বিশেষ করে তার ব্রেনে (মস্তিস্কে) ইনজুরি গুরুতর ছিল। যার কারণে তার জ্ঞান ফেরানো যায়নি।
চিকিৎসক ও সহকর্মীরা জানান, ডা. সামিনা ইউএসটিসির মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। ওই কলেজের ৫ম ব্যাচের ছাত্রী ছিলেন। অ্যানেসথেসিস্ট হিসেবে সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। অ্যানেসথেসিয়া বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য চমেকের এমডি কোর্সেও ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু তার এমডি কোর্স আর সম্পন্ন করা হয়নি। কোর্স শেষ হওয়ার আগেই না ফেরার দেশে পাড়ি দিতে হল সামিনাকে। তার মৃত্যুতে চট্টগ্রামের চিকিৎসক সমাজে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোকার্ত কণ্ঠে চমেকের অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হারুন-উর-রশীদ বলেন, সে (সামিনা) আমাদের ছাত্রী ছিল। এমডি কোর্সে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু কোর্সটি আর শেষ করতে পারল না। সহকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সামিনার রয়েছে এক ছেলে-এক মেয়ে। গ্রামের বাড়ি ফেনী জেলায়। পরিবার নিয়ে তারা নগরের মেহেদীবাগে থাকতেন।
এদিকে, ওই দিন (মঙ্গলবার) ডা. সামিনার রিকশাকে ধাক্কা দেয়া সিএনজিচালিত টেক্সিটি জব্দ ও এর চালককে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ।