আর কত প্রাণের বিনিময়ে নগরীর ড্রেন ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে

| বৃহস্পতিবার , ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

কম্পিউটার সায়েন্সের প্রথম সেমিস্টারের ছাত্রী সাদিয়ার মৃত্যুকে নিয়ে পুরো নগরীতে ব্যাপক হাহাকার ও তোলপাড় চলছে। যার স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো। কিন্তু তার সব স্বপ্ন শুধু চুরমার হয়ে যায়নি, জীবনটাও শেষ হয়ে গেলো। এ মৃত্যুকে দুর্ঘটনা হিসেবে ভাবা হচ্ছে না, বলা হচ্ছে হত্যাকাণ্ড। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রচুর প্রতিক্রিয়া আমরা লক্ষ করছি। আসলে সড়কে সড়কে এমন মৃত্যুকূপ মানা যায় না। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা এ দায় কি এড়াতে পারবেন? দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে এসব বিষয় উঠে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘সোমবার রাত থেকে নগরবাসীর মনে অসংখ্য প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর এমন মৃত্যু কেন? একদম মেনে নিতে পারছি না। খুব খারাপ লাগছে। ভেতরটা হুহু করে উঠছে। আর কত প্রাণের বিনিময়ে নগরীর ড্রেন ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে? আমাদের নিরাপত্তা বলয় কবে কখন তৈরি হবে? এ দায় সম্পূর্ণ সিটি কর্পোরেশনের, এ দায় সিডিএ আর ওয়াসার। এ দায় সংশ্লিষ্ট অন্যদেরও।’
আজাদীতে প্রকাশিত অন্য এক প্রতিবেদনে জানা যায়, মামা ও নানার সাথে হাসি মুখে বাসায় ফিরছিলেন ভার্সিটি পড়ুয়া শেহেরীন মাহমুদ সাদিয়া (১৯)। হঠাৎ পা পিছলে নালায় পড়ে গেলেন সাদিয়া। সেই যে পড়ে গেলেন, জীবন নিয়ে ওঠা আর হলো না। ওঠানো হলো সাদিয়াকে, তবে জীবন্ত নয়, তখন তিনি লাশ। লাশ হয়েই ফিরলেন। তরতাজা প্রাণ, স্বপ্নে ভরপুর। স্বপ্ন ছিল নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। অকস্মাৎ অভাবিত এই চলে যাওয়া, কী কষ্টের এই যাওয়া! তাই মানতে পারছে না স্বজনরা। মানতে পারছেন না নগরবাসীও। গত সোমবার রাত ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রায় ৫ ঘণ্টার অভিযানে রাত ২টা ৫০ মিনিটে তরুণীর লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। গত মঙ্গলবার সকাল ৯টায় উত্তর হালিশহরের মইন্যাপাড়ায় জানাজা শেষে লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। সাদিয়া আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (আইআইইউসি) কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের প্রথম সেমিস্টারের ছাত্রী ছিলেন। একটি প্রাণ অকালে ঝরে পড়ায় সমালোচনা হচ্ছে। এসেছে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন। প্রশ্ন উঠেছে, কেন এই দুর্ঘটনা। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মামা ও নানার সাথে আগ্রাবাদের শাহজালাল চশমা মার্কেটে চশমা কিনতে গিয়েছিলেন। বাসায় ফেরার পথে বাদামতলী মাজার গেটের সামনে প্রাইম ব্যাংকের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় রাত ১০টার দিকে পা পিছলে খোলা নালায় পড়ে যান তিনি।
নালায় পড়ে একটার পর একটা দুর্ঘটনা নগরবাসীকে উৎকণ্ঠায় ফেলেছে। এ সব দুর্ঘটনার দায় কেউ নিতে চায় না। এক পক্ষ বলেন, সিটি করপোরেশনের অবহেলা। অন্য পক্ষ দোষ চাপায় সিডিএ কর্তৃপক্ষের ওপর। অভিযুক্ত হন ওয়াসাসহ অন্য সেবা সংস্থাগুলোর প্রধানরাও। মাঝে মাঝে সিটি কর্পোরেশন ও সিডিএর পদস্থরাও অংশ নেন একে অন্যের ওপর দোষ চাপানোর সংস্কৃতিতে। বাদ যান না সেখানে দায়িত্ব পালনকারী সাবেকরাও। সুযোগ পেয়ে তারাও নগরবাসীর কাতারে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করেন, দায় কার? আসলে প্রকৃত অর্থে এ দায় কার- সেই প্রশ্নের উত্তর মিলে না। সমাধানের পথও পাওয়া যায় না। উল্লেখ্য, নগরীতে গত চার মাসে তিনটি দুর্ঘটনায় মারা যান চারজন। আহত হয়েছেন একাধিক।
সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো, নগরীর বিভিন্ন স্থানে অরক্ষিত খাল ও নালার পাশে ব্যারিয়ার দেওয়ার উদ্যোগ নেয়ার কথা থাকলেও এখনো সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটে নি। ইতোপূর্বে উন্মুক্ত নালাগুলোতে স্ল্যাব বসানোর সিদ্ধান্ত হলেও সেই কাজও শুরু হয়নি। ফলে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতায় নাকাল নগরীতে খাল এবং নালাগুলো মৃত্যুকূপ হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেন, এই শহরটাকে বাসযোগ্য রাখাই সব সেবা সংস্থার দায়িত্ব। প্রত্যেকটি সেবা সংস্থা নগরের মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। এই দায় কেউ এড়াতে পারে না। নগরীর যে সব এলাকায় খাল নালা রয়েছে, অনতিবিলম্বে তাতে নিরাপত্তা বেষ্টনি দেয়ার প্রয়োজন। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো সম্পর্কে মানুষকে অবহিত করে নগরসচেতনতা বৃদ্ধি করাও এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধবিশ্ব নৌদিবস