আর্থিক সঙ্গতির অভাবে ৬ বছর পার

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৪:৪৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত নতুন খাল খনন প্রকল্পটি অনুমোদনের ৬ বছর পেরিয়ে গেছে। চসিকের আর্থিক সঙ্গতির অভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। এরই মধ্যে প্রায় তিনগুণ বেড়েছে প্রকল্প ব্যয়। তারপরও শুরু করা যাচ্ছে না নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বহুল গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের কাজ।
গতকাল বৃহস্পতিবার চসিকের নবনির্বাচিত মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর সাথে প্রকৌশলীদের প্রথম সভায় মেয়র বারইপাড়া খাল খনন শুরু হলো না কেন তা প্রধান প্রকৌশলীর কাছে জানতে চান। এসময় প্রধান প্রকৌশলী মেয়রকে জানান, প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণ এবং ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে ৩০৪ কোটি টাকা সিটি কর্পোরেশন তহবিল থেকে ব্যয় করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে কর্পোরেশনের আর্থিক এই ব্যয়ভার বহনের সক্ষমতা নেই। মূলত চসিকের আর্থিক সঙ্গতির অভাবেই নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বহুল গুরুত্বপূর্ণ বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত নতুন খাল খনন প্রকল্পটি শুরু করা যাচ্ছে না। সাথে রয়েছে ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতাও। এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে সাবেক মেয়র মনজুর আলমের আমলে। তিনি শুরু করতে পারেননি। পরবর্তীতে আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন মেয়র নির্বাচিত হলেন। তিনিও দায়িত্ব থেকে বিদায় নিলেন। কিন্তু কাজ শুরু করতে পারেননি। এবার নতুন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর কাছে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জ হিসেবে উপনীত হয়েছে।
নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বারইপাড়া থেকে কর্ণফুলী পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল খনন প্রকল্পটির মেয়াদই শেষ হচ্ছে আর ৪ মাস পরে জুনে। পরপর তিন দফা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এখনো কাজই শুরু করা যায়নি।
এক হাজার ২২৫ কোটি টাকার এই প্রকল্পের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ খাতে ব্যয় প্রায় ১ হাজার ১ শত ১৯ কোটি টাকা। যা প্রকল্প ব্যয়ের প্রায় ৯০ শতাংশ। প্রকল্পটির জিওবি বরাদ্দ ৭৫ শতাংশ খাতের প্রায় ৯১৫ কোটি টাকা ইতোমধ্যে বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যার ৯১১ কোটি টাকা জেলা প্রশাসন তহবিলে জমা দেয়া হয়েছে। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ২০৮ কোটি টাকা এবং ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে প্রায় ৯৭ কোটি টাকা অর্থাৎ ৩০৪ কোটি টাকা সিটি কর্পোরেশন তহবিল থেকে ব্যয় করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে কর্পোরেশনের আর্থিক এই ব্যয়ভার বহনের সক্ষমতা নেই বলে গতকাল মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর সাথে চসিকের প্রকৌশল বিভাগের বৈঠকে এই তথ্য জানানো হয়।
এই খালের মোট প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২২৫ কোটি টাকা। জিওবি ৭৫ শতাংশ ও চসিকের তহবিল হলো ২৫ শতাংশ মিলিয়ে টাকার অংকে যা দাঁড়ায় ৩১৪ কোটি ৩ লাখ টাকা। এর বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে জুন ২০২১ সাল পর্যন্ত। এখন ফেব্রুয়ারি মাস। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে আর মাত্র ৪ মাস বাকি।
চসিকের প্রকৌশল বিভাগ থেকে জানা গেছে, ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি হবে ৬৫ ফুট চওড়া। খালের দুই পাশে ২০ ফুট করে দুটি রাস্তা হবে এবং ছয় ফুট প্রস্থের দুটি করে ওয়াকওয়ে হবে।
এখনো ভূমি অধিগ্রহণও হয়নি। সব মিলে নগরীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটি কবে আলোর মুখ দেখবে তা অনেকটা অনিশ্চিত ।
এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয় ২০১৪ সালের জুনে। ৩২৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে তিন বছর মেয়াদে ২০১৭ সালের জুনে প্রকল্প শেষ করার সময় ধরে এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। কিন্তু সরকারি অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় এবং জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা থাকায় প্রথম মেয়াদে প্রকল্পের কোনো কাজই করতে পারেনি চসিক। এরপর ২০১৭ সালের নভেম্বরে একনেকে প্রকল্পটি পুনঃবিবেচনা করে আবারও অনুমোদন করা হয়। মেয়াদ ধরা হয় ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত।
এরপর প্রকল্প রিভাইস করা হলো। ১ হাজার ২২৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। এই খাল খননে প্রায় ২৫ দশমিক ১৬ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে যাতে খরচ হবে মোট এক হাজার ১০৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এই প্রকল্পে সরকার দিয়েছে ৯৪২ কোটি ১১ লাখ এবং সিটি কর্পোরেশনকে দিতে হবে ৩১৪ কোটি ৩ লাখ টাকা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভর্তুকি মূল্যে টিসিবি’র তেল বিক্রি অব্যাহত থাকবে : বাণিজ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধবারইপাড়া খাল খনন হলো না কেন?