আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে বৃদ্ধি করতে হবে কর্মসংস্থান

| মঙ্গলবার , ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ

দেশে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই দেশের শ্রমবাজার এক ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি। বিশেষ করে শিক্ষিত তরুণ সমাজের মধ্যে বেকারত্বের হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে, যা দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতির জন্য এক বড় অশনিসংকেত। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সামপ্রতিক শ্রমশক্তি জরিপে এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিই ফুটে উঠেছে। একদিকে শিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম ক্রমবর্ধমান হারে বেকার থেকে যাচ্ছে, অন্যদিকে শ্রমবাজারে নিরক্ষর কর্মীর সংখ্যা এক কোটি ৩০ লাখে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ আমাদের মানবসম্পদ এক প্রান্তে দক্ষতা ও শিক্ষার অভাব, আরেক প্রান্তে শিক্ষা ও দক্ষতার ব্যবহারযোগ্যতা না থাকার সংকটে জর্জরিত। স্নাতক ডিগ্রিধারী প্রতি তিনজনের একজন বেকার। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ২৯ শতাংশ, যা উদ্বেগজনক। এই প্রতিবেদন থেকে বেশ কয়েকটি গুরুতর দিক উঠে এসেছে।

বলা বাহুল্য, গত সরকারের পতনের পর দেশের অর্থনীতি ছিল অনেকটাই বিপর্যস্ত। ব্যয় মেটাতে অন্তর্বর্তী সরকার ঋণ করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু গত এক বছরেও রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ে কিছুটা অগ্রগতি ছাড়া বিপর্যয় সামাল দিতে পারেনি। এই সময়ে নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়েনি, বরং সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে কমেছে। গত এক বছরে সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে ৩৫৩টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এতে বেকার হয়েছেন এসব কারখানায় কর্মরত এক লাখ ১৯ হাজার ৮৪২ জন শ্রমিক। এদিকে নতুন করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠছে না। এমনকি আগের ছোটছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিক্রি নেই, নতুন পণ্য নেই। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছে না। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, আরো কিছু বন্ধের পথে। কাজ না থাকায় শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কিছু শ্রমিক জীবিকার তাগিদে আগের চেয়ে কম বেতনে চাকরি পেলেও হাজার হাজার শ্রমিক এখনো বেকার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথমত, কর্মসংস্থানের সঙ্গে শিক্ষার মানের বড় ধরনের অসামঞ্জস্য রয়েছে। যে শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি দিচ্ছে, তা কর্মবাজারের চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়। ফলে বিপুলসংখ্যক তরুণ স্নাতক হয়েও এমন দক্ষতা অর্জন করতে পারছেন না, যা দিয়ে তাঁরা চাকরি পেতে পারেন। দ্বিতীয়ত, কর্মসংস্থানের দিক থেকে অঞ্চলভেদে ব্যাপক বৈষম্য দেখা যাচ্ছে।

তাঁরা বলেন, আর্থিক সক্ষমতা বাড়ানোর উপায় হচ্ছে যথেষ্ট পরিমাণে কর্মসংস্থান বাড়ানো। আর এ জন্য প্রয়োজন নতুন বিনিয়োগ। বিনিয়োগের মাধ্যমে যেমন ব্যবসা ও শিল্প গড়ে ওঠে, তেমনি কাজের সুযোগও তৈরি হয়। তাতে মানুষের ভোগ বাড়ে, গতি আসে অর্থনীতিতে। তাই আগামীতে কর্মসংস্থান তৈরিতে বিনিয়োগ বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বর্তমানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদ একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। এতে বিনিয়োগ প্রবাহ কমে গেছে। যেহেতু গত কয়েক মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতায় রয়েছে তাই সুদহার কিছুটা কমানো উচিত। এছাড়া খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ও সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলো কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। আধুনিক বাণিজ্যব্যবস্থাকে (মডার্ন ট্রেড) উৎসাহ দিতে বিদ্যমান বাধাগুলো দূর করতে হবে। সুপারশপ পর্যায়ে কেনাকাটার ওপর ভ্যাট রয়েছে। ভোক্তাদের ওপর যাতে এই ভ্যাটের প্রভাব না পড়ে সে জন্য এই ভ্যাট নিজেরা বহন করে। তাই সুপারশপগুলোর জন্য কিছু প্রণোদনার ব্যবস্থা করা উচিত। সেটা কীভাবে হবে, সরকার তা ভালো জানে। কারণ, আধুনিক বাণিজ্যব্যবস্থা চালু হলে সরবরাহ শৃঙ্খলে স্বচ্ছতা আসবে, খাদ্যের অপচয় কমবে, কৃষক ন্যায্য দাম পাবে, সরকারেরও তথ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়বে। তাছাড়া, সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় বন্ধ করতে হবে। শিক্ষা ও দক্ষতা বৃদ্ধির প্রকল্পে অনেক বেশি টাকা খরচ করা উচিত। নারীর নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। দেশের অর্ধেক জনসংখ্যাকে অক্ষম বানিয়ে বা ভীতসন্ত্রস্ত করে কোনো অর্থনীতি দাঁড়াতে পারে না। খাদ্যপণ্যের অপচয় কমাতে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে সারসহ যেসব জায়গায় ভর্তুকি বিদ্যমান রয়েছে, সেগুলো চলমান রাখা উচিত। একটি জাতীয় ফুড বাফার পলিসি তৈরি করা সময়ের দাবি। সরকার চাইলে এ বিষয়ে আমরা আরও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দিতে পারি। বর্তমান সরকার পরিবেশ সুরক্ষা নিয়ে বেশ তৎপর রয়েছে। কিন্তু সেটি তো টেকসই হচ্ছে না। টেকসই করতে হলে বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকশিল্প, পাট, সৌরবিদ্যুৎ প্রভৃতি খাতে ভর্তুকি দেওয়া যায় কি না, তা দেখা উচিত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে