ভ্যাট ফাঁকি রোধ এবং রাজস্ব আহরণে গতি বাড়াতে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ৪শ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আরো ৩৬১টি ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) এবং ১০২টি সেলস ডেটা কন্ট্রোলার (এসডিসি) মেশিন বসানো হচ্ছে। এর আগে চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অধীনে ৮ বিভাগের অধীনে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ১২০টি ইএফডি মেশিন বসানো হয়।
ভ্যাট কর্মকর্তারা জানান, ইএফডি এবং এসডিসি মেশিন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় সার্ভারের সাথে সংযুক্ত থাকার ফলে ক্রেতা মূল্য পরিশোধের সময় সাথে সাথে আরোপিত ভ্যাট আলাদা হয়ে যাবে। এছাড়া কেনাকাটার সময় স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ভ্যাট আদায়ের ফলে রাজস্ব আদায় বাড়বে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটর সূত্রে জানা গেছে, ভ্যাট কমিশনারেটের অধীনে আগ্রাবাদ, চট্টলা, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, বান্দরবান, পটিয়া ও চান্দগাঁও বিভাগের মোট ৪শটি প্রতিষ্ঠানে ৪৬৩টি ইফএডি এবং এসডিসি মেশিন বসানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে মেশিনের চাহিদাপত্র এনবিআরে পাঠানো হয়েছে। মেশিন চট্টগ্রামে পৌঁছানো মাত্রই স্থাপনের কাজ শুরু হবে।
৮ বিভাগের মধ্যে আগ্রাবাদ বিভাগের ১৬৫ প্রতিষ্ঠানে ১৬৬টি ইএফডি এবং ২০ প্রতিষ্ঠানে ২০টি এসডিসি বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চট্টলা বিভাগের ৭২ প্রতিষ্ঠানে ৭৪টি ইএফডি এবং ৩২ প্রতিষ্ঠানে ৪৭টি এসডিসি বসানো হচ্ছে। কক্সবাজার বিভাগের ৭৭ প্রতিষ্ঠানে ৮৯টি ইএফডি ও ৬ প্রতিষ্ঠানে ৩৫টি এসডিসি, চান্দগাঁও বিভাগের ১১ প্রতিষ্ঠানে ১১টি ইএফডি, রাঙামাটি বিভাগের এক প্রতিষ্ঠানে একটি ইএফডি, পটিয়া বিভাগের ৮ প্রতিষ্ঠানে ৮টি ইএফডি, খাগড়াছড়ি বিভাগের ২ প্রতিষ্ঠানে ২টি ইএফডি একং বান্দরবান বিভাগের ৬ প্রতিষ্ঠানে ১০টি ইএফডি মেশিন বসানো হবে বলে জানিয়েছেন ভ্যাট কমিশনারেটের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
ভ্যাট কর্মকর্তারা জানান, ইএফডি এবং এসডিসি মেশিন স্থাপনের ফলে এখন থেকে আর কোনো প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার (ইসিআর) মেশিন থাকবে না। ইসিআর মেশিন না থাকলেও পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) সিস্টেম রাখতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। সেক্ষেত্রে পিওএস মেশিনটিও ইএফডির সাথে সংযুক্ত থাকবে। অন্যদিকে বড় ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে এনবিআর নির্ধারিত সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে। এনবিআর ইতিমধ্যে ১১টি সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, আমরা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে যখন ভ্যাট দিই, আমাদের সন্দেহ করা হয়। বলা হয়, আমরা ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছি। এই মেশিনের মাধ্যমে ভ্যাট স্বয়ংক্রিয়ভাবে আলাদা হয়ে যাবে। এতে সন্দেহ দূর হবে। তবে সবাইকে ইএফডি মেশিনের আওতায় আনতে হবে। একটি শপিং সেন্টারের অর্ধেক দোকান যদি মেশিনের আওতায় না নেয়া হয়, তাহলে গ্রাহকরা স্বাভাবিকভাবে যে দোকানে ইএফডি মেশিন নেই সেখানে যাবে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেটের বিভাগীয় কর্মকর্তা শাহীনূর কবির পাভেল আজাদীকে বলেন, রাজস্ব আদায়ে গতি বাড়ানো এবং ইএফডি মেশিনকে ব্যবসাবান্ধব করার প্রয়াসে আমরা সম্প্রতি দুই দিনের ভ্যাট মেলা শেষ করেছি। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মার্কেটগুলোতে ভ্যাট বুথ স্থাপন করে ভ্যাট নিবন্ধন এবং ভ্যাট আদায় করছি। একই সাথে ইএফডি এবং এসডিসি মেশিন নিয়েও ব্যবসায়ীদের সচেতন করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত প্রত্যাশিত সাড়া না পেলেও আগের চেয়ে ব্যবসায়ীরা ভ্যাট কর্মকর্তাদের বেশি সহায়তা করছেন। ইএফডি মেশিন জনপ্রিয় করে তুলতে এনবিআর থেকে চার ক্যাটাগরিতে লটারির মাধ্যমে প্রতি মাসে ১০১টি পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। ভ্যাট আদায়ে গতি বাড়াতে এসব উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মো. আকবর হোসেন আজাদীকে বলেন, ভ্যাট ফাঁকি রোধে গত বছরের আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে ১২০টি ইএফডি মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। আরো চারশটি প্রতিষ্ঠানে ৩৬৩টি ইএফডি এবং ১০২ এসডিসি বসানোর তালিকা এনবিআরে পাঠিয়েছি। আশা করি, এই মাসেই মেশিন স্থাপনের কাজ শুরু করতে পারব।
জানা গেছে, গত বছরের ২৫ আগস্ট এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম ইএফডি বসানোর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। ২৫ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন বাধ্যতামূলক।