আরোপিত বিধিনিষেধ কীভাবে কমানো যায়, তা ভাবতে হবে

| শনিবার , ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

ইউরোপের দেশ করোনা মহামারির সমাপ্তি ঘোষণা করেছে। দেশটির নাম সুইডেন। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয় সুইডেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী লেনা হ্যালেনগ্রেন স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে এ খবর নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, মহামারি পরিস্থিতি দেখে এটা শেষ হয়ে গেছে বলার সময় এসেছে। তবে করোনার সব বিধিনিষেধ এখনই প্রত্যাহার করা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি। করোনাকে সমাজের জন্য বিপজ্জনক হিসেবে আর অভিহিত করা হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
৯ ফেব্রুয়ারি সুইডেন করোনা বিধিনিষেধের প্রায় সবগুলোই তুলে নেয়। কোভিডের জন্য বেশিরভাগ পরীক্ষাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদিও কয়েকজন বিজ্ঞানী করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে আরেকটু ধৈর্য ধরার আবেদনও করেছিলেন।
এখন থেকে দেশটির বার ও রেস্টুরেন্ট রাত ১১টার পরও খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তুলে নেওয়া হয়েছে এসব স্থানে প্রবেশের ক্ষেত্রে সব ধরনের বিধিনিষেধ। জনসমাগম স্থলে প্রবেশের ক্ষেত্রের সব ধরনের বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। যদিও সুইডেনের হাসপাতালে এখনো করোনার উপসর্গ নিয়ে ২২শর মতো মানুষ ভর্তি হয়েছে। ২০২১ সালের বসন্তে করোনার তৃতীয় ঢেউয়েও দেশটিতে হাজার দুয়েক মানুষ হাসপাতালে ভর্তি ছিল।
আমাদের বাংলাদেশেও সমস্ত বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ার পক্ষে নানা অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে করোনা সংক্রমণ যে হারে হচ্ছে, তাতে এখনই লকডাউনের মতো আত্মঘাতী কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সময় হয়নি। দুই বছর পর মাত্র অর্থনীতি সচল হতে শুরু করেছে। এর মধ্যে আবার করোনা বাড়ছে। তাই অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। যদি আক্রান্তের হার বাড়তে থাকে তখন বিচার বিশ্লেষণ করে বিচক্ষণতার সাথে পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে সরকার যে বিধিনিষেধের কথা চিন্তা করছে, সেটা তেমন কোনো সুফল দেবে না। করোনা রোধে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। তবে এখন সরকার কতটা কঠোর হতে পারবে বলা যাচ্ছে না। কারণ অতীতে সেটা আমরা দেখতে পাইনি।
তিনি বলেন, বিধিনিষেধে সামাজিক অনুষ্ঠান সীমিত করা, খাবারের হোটেল ও মার্কেট-শপিংমলের সময় কমিয়ে কখনো করোনা রোধ করা যাবে না। হয় একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে নয়তো যেভাবে আছে সেভাবেই চলতে দিতে হবে। কারণ সময় কমিয়ে আনলে একসাথে অনেক চাপ পড়ে যায়। তখন বরং করোনা আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকে বেশি। আর করোনা আক্রান্তের ফলে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে, এমন যদি হতো তাহলে সময় কমিয়ে আনাটা একটা যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকতো। কিন্তু সেটা তো হচ্ছে না। আমরা আমাদের দেশে যেভাবে থাকি তাতে সংক্রমণ হবেই, সেটা ঠেকানো সম্ভব না। একটি পাবলিক বাসে উঠলে সকলেই ঝুঁকিতে থাকে। মূলত আমরা সবাই যখন আক্রান্ত হবো তারপর এমনিতেই চলে যাবে করোনা। তাঁরা বলেন, কোনো লকডাউনে আমরা কোনো সুফল পাইনি। মানুষ লকডাউন মানে না, প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে। এখন ওমিক্রন যেভাবে ছড়াচ্ছে সেটার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো আক্রান্তদের কীভাবে হাসপাতালের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। এছাড়া মানুষের মৃত্যুর হার কীরকম হচ্ছে, সেটা দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া। সেটা না দেখে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নিলে সেটা যৌক্তিক হবে না। আর লকডাউনে অর্থনৈতিক ক্ষতি বেশি হয়। তাহলে সে ক্ষতি আমরা কেন ইচ্ছা করে ডেকে নিয়ে আসবো? সে জন্য দেখতে হবে সংক্রমণের হার কীরকম, সেটা না দেখে লকডাউন বা বিধিনিষেধ আরোপ করা ঠিক হবে না।
দীর্ঘ প্রায় দুই বছর চলা করোনা মহামারির সঙ্গে ধীরে ধীরে মানুষের মানিয়ে নেওয়ার বিষয়টি এখন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জানা যায় সুইডেনের মতো বিশ্বের অনেক দেশে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে আরোপিত বিভিন্ন বিধিনিষেধ গুটিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সমপ্রতি যুক্তরাজ্য ঘোষণা দিয়েছে, দেশটিতে আর কাউকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে হবে না। জনসমাবেশস্থলে যেতেও কোভিড পাশ লাগবে না। স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও উত্তর আয়ারল্যান্ডও একই ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত হলো, দেশেও কোভিড ‘প্যান্ডেমিক’ থেকে ‘এন্ডেমিকে’ রূপ নিচ্ছে, অর্থাৎ প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণকে সাধারণ একটি রোগ মনে করে নিজেদের মানিয়ে নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হচ্ছে মানুষ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটি কোনো কোনো স্থানে গুচ্ছভাবে হঠাৎ বাড়বে, আবার কোথাও কমবে। তাই এ ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে টিকা দেওয়া ও স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ দীর্ঘমেয়াদি কৌশল অবলম্বন এবং পরিকল্পনা করে চলা জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে