কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন লাল পাহাড়ে আরসার আস্তানায় দুঃসাহসিক অভিযান চালিয়েছে র্যাব। গতকাল বুধবার ভোররাতে পরিচালিত এ অভিযানে বাংলাদেশে আরসার অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক ও কমান্ডার মো. শাহনুর প্রকাশ মাস্টার সলিমসহ ২ জন আরসা সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গ্রেনেড ও রকেট সেল।
অভিযান নিয়ে গতকাল দুপুরে লাল পাহাড় এলাকায় সংবাদ ব্রিফিং করেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম। তিনি বলেন, র্যাবের অব্যাহত অভিযানে দুর্বল হয়ে পড়ে আরসা। তাই তারা পুনরায় শক্তি সঞ্চার করার চেষ্টা করছে। যার অংশ হিসেবে মিয়ানমার থেকে আরসার অসংখ্যা সদস্যকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠিয়েছে বলে তথ্য পায় র্যাব। তাদের উদ্দেশ্য ক্যাম্পগুলোতে নাশকতা করা। এই তথ্যের প্রেক্ষিতে র্যাব–১৫ কার্যক্রম শুরু করে এবং জানতে পারে, মাস্টার সেলিম বর্তমানে বাংলাদেশের আরসার প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তার নেতৃত্বে পুনরায় হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা এবং মিয়ানমার থেকে অস্ত্র–গোলাবারুদ লুট রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাস সৃষ্টি করছে আরসা। বিষয়টি অবগত হয়ে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন লাল পাহাড়ে আরসার আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে বর্তমানে বাংলাদেশে আরসার অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক ও কমান্ডার মো. শাহনুর প্রকাশ মাস্টার সলিমসহ দুইজন আরসা সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় র্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫টি গ্রেনেড, ৩টি রাইফেল গ্রেনেড, ১০টি দেশীয় তৈরি হ্যান্ড গ্রেনেড, ১৩টি ককটেল, ১টি বিদেশি রিভলবার, ৯ রাউন্ড নাইন এমএম পিস্তলের এ্যামুনিশন, ১টি এলজি এবং ৩টি ১২ বোর কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার মো. শাহনুর প্রকাশ মাস্টার সলিম উখিয়া ১৫ নং ক্যাম্পের সৈয়দুল আবেরার ছেলে ও মো. রিয়াজ (২৭) বালুখালী ৮/ডব্লিউ রোহিঙ্গা ক্যাম্প, ব্লক–এ/২৩ এর মৃত মোহাম্মদ নুরের ছেলে।
গ্রেপ্তার দুজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাতে র্যাব জানায়, মো. শাহনুর প্রকাশ মাস্টার সলিম ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ১৫ নম্বর ক্যাম্পে বসবাস শুরু করেন। মিয়ানমার থাকাকালীন তিনি সেখানকার জোন কমান্ডারের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়াও আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনির দেহরক্ষী হিসেবে দুই মাস দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী হিসেবে ২০১৭ সালে আসার পর মৌলভী আকিজের মাধ্যমে আরসায় পুনরায় যোগদান করেন। আরসার হয়ে আধিপত্য বিস্তার কোন্দলসহ খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে আরসা নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়ায় সলিম বাংলাদেশে আরসার প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব নেন। মিয়ানমারে সৃষ্ট সংঘর্ষের ফলে লুট করা অস্ত্র–গোলাবারুদ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সংগ্রহ করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাস সৃষ্টি করে। যার কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পুনরায় আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্রিক মারামারি, সংঘর্ষ ও হত্যার ঘটনা ঘটছে। তার বিরুদ্ধে ৩টি হত্যা মামলাসহ অন্যান্য বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া মো. রিয়াজ ২০১৮ সালে মৌলভী মো. ইব্রাহিমের মাধ্যমে আরসায় যোগদান এবং প্রাথমিকভাবে আরসার হয়ে পাহারাদারের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মিয়ানমারে বিভিন্ন বিষয়াদিসহ মাইন, বোমা, হাত বোমা ও বিস্ফোরক তৈরিতে প্রশিক্ষণ লাভ করেন।
র্যাব–১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, উদ্ধার হওয়া বোমা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট কর্তৃক নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।