বন্যার পানি নামার সাথে সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বিপুল ক্ষয়ক্ষতির চিত্রটি স্পষ্ট হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, চকরিয়া ও পেকুয়া থেকে মোট ৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব এলাকায় বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া কয়েকজন এখনো নিখোঁজ রয়েছে। চকরিয়া ও পেকুয়া থেকে তিন শিশুসহ চারজনের, সাতকানিয়ায় দুই জনের, লোহাগাড়ায় নিখোঁজ কলেজ ছাত্রসহ দুইজনের, দোহাজারীতে বন্যার স্রোতে ভেসে যাওয়া নাতির পর দাদার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর বাইরে বান্দরবানে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮ জনে উন্নীত হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
পেকুয়ায় নিখোঁজ হওয়ার ১২ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয় একে অপরের হাত ধরা অবস্থায় তিন শিশুর লাশ। তাদের লাশ পড়ে ছিল একটি চিংড়ি প্রকল্পের লবণ পানিতে। পুলিশ জানায়, পেকুয়ার উজানটিয়া ইউনিয়নের ফেরাসিঙ্গাপাড়ার বাড়ির কাছের চিংড়ি ঘের এলাকায় গতকাল সকালে একে অপরের হাত ধরা অবস্থায় তিন শিশুর লাশ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। এরপর পুলিশের কাছে খবর পৌঁছানো হলে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। মারা যাওয়া তিন শিশু হলো– উজানটিয়া ইউনিয়নের ফেরাসিঙ্গা পাড়ার ছাবের আহমদের কন্যা হুমায়রা বেগম (৮) এবং একই পাড়ার নুরুল আলমের কন্যা তৌহিদা বেগম (১০) ও ছেলে আমির হোসেন (৫)। তদ্মধ্যে হুমায়রা বেগম সম্পর্কে তৌহিদা ও আমির হোসেনের ফুফাতো বোন।
শিশুদের পরিবার জানিয়েছে, তিন শিশুই একসঙ্গে নিখোঁজ হয়ে পড়ে গত বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার পর থেকে। এরপর তাদের এখানে–ওখানে অনেক খোঁজাখুঁজি করা হয়। কিন্তু কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না।
পরিবারের বরাত দিয়ে উজানটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন দৈনিক আজাদীকে জানান, গত বুধবার বিকেলে তিন শিশু মাছ ধরতে নামে বন্যার পানিতে। এরপর থেকে তাদের আর হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওমর হায়দার।
এদিকে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ জানান, চকরিয়ার খুটাখালী ইউনিয়নের পশ্চিমাংশের চিংড়ি জোন এলাকা থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয় গতকাল দুপুরে।
গত মঙ্গলবার সাতকানিয়ার চরতিতে নৌকাডুবি ও পৌরসভার গোয়াজর পাড়ায় স্রোতের টানে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া দুই জনের লাশ গতকাল উদ্ধার করা হয়েছে। নৌকাডুবির ঘটনায় এখনো দুই শিশু নিখোঁজ রয়েছে। লোহাগাড়ার আমিরাবাদে বানের পানির স্রোতে নিখোঁজ কলেজছাত্রসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সকালে পৃথক স্থান থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরা হলেন উপজেলার আমিরাবাদ ইউনয়নে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর আমিরবাাদ জলিল নগর এলাকার প্রবাসী সামশুল ইসলামের পুত্র মোহাম্মদ সাকিব (১৮) ও একই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চট্টলা পাড়ার মৃত রহিম বক্সের পুত্র অটোরিক্সা চালক আবদুল মাবুদ (৫০)।
বন্যায় চন্দনাইশের দোহাজারী পৌরসভায় ভেসে যাওয়া নাতির পর এবার দাদার লাশও উদ্ধার করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার সময় দোহাজারী নতুন রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন কাছেমুল উলুম মাদরাসার পাশ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত বুধবার বিকেল ৩টার দিকে একই স্থান থেকে নাতির লাশও উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বন্যার পানি বাড়তে থাকায় নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে গত মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে দোহাজারী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড আফজল সওদাগর বাড়ি এলাকা থেকে মৃত কালা মিয়ার ছেলে আবু ছৈয়দ (৮৩) তার নাতি আনাছকে (১০) নিয়ে জামিজুরী তার ছেলের বাসায় যাচ্ছিলেন। পথে তারা বন্যার স্রোতে পড়ে ভেসে যায়। এরপর থেকে তারা নিখোঁজ ছিল।