মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের মধ্যে সীমান্ত পেরিয়ে অন্তত আট হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢোকার তথ্য দিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
গতকাল মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার কাছে তথ্য আছে যে, আট হাজারের মতো রোহিঙ্গা ঢুকে গেছে। এখানে বর্ডারের বিষয়টা যদিও আমার না, কিন্তু যখন ঢুকে পড়ে তখন বিষয়টা আমাদের হয়ে যায়। এটা নিয়ে আসলে আগামী দু–তিনদিনের মধ্যে সিরিয়াস আলোচনা হবে মন্ত্রিপরিষদে এবং এটা কীভাবে ঠেকানো যায়, সেটা আমাদের চেষ্টা করতে হবে। খবর বিডিনিউজের।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ‘নীতিগতভাবে’ আর কোনো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় না দেওয়ার পক্ষে জানিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এখানে অনেকগুলো ফোর্স কাজ করে, ওই জায়গায় কিছু দুর্নীতি জড়িত নয়, এটা আমি বলতে পারি না। এটা যথাসম্ভব আটকানোর চেষ্টা করা হবে। নীতিগতভাবে আমরা কোনো রোহিঙ্গাকে নতুন করে আশ্রয়, যদিও এটা দুঃখ লাগে এ কথাটা বলতে, কিন্তু আমাদের জন্য সাধ্যের অতীত। আর পারব না তাদেরকে আশ্রয় দিতে।
রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবির সক্রিয়তা ও সীমান্ত বন্ধ না করার বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, রেগুলার সীমান্ত সিল করা কঠিন, এটা আমরা স্বীকার করি। তবে, যেটা বলছিলাম যে, বিভিন্ন ফোর্সতো কাজ করে এখানে; স্থানীয় লোকজনেরও কারও কারও স্বার্থ জড়িত আছে– সব মিলিয়ে এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটে। সেটা আমাদের চেষ্টা করতে হবে আটকানোর। আমি বস্তুত এটা নিয়ে কালকে–পরশুর মধ্যে আমাদের যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আছেন, তার সাথে হয়ত আলাপ করব। এটা মন্ত্রিপরিষদে, উপদেষ্টা পরিষদেও আলোচনা হতে পারে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও গণহত্যার মুখে ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট রাখাইন (আরাকান) রাজ্য থেকে বাংলাদেশে স্রোতের মত ঢুকতে শুরু করে রোহিঙ্গারা। কয়েক মাসের মধ্যে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা কঙবাজারের উখিয়া–টেকনাফে আশ্রয় নেয়। যেখানে আগে থেকেই ক্যাম্পে বসবাস করছিল আরও চার লাখ। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ওই বছরের শেষ দিকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয় মিয়ানমারের অং সান সু চি সরকার। ওই বছর সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে সইও করে। এখন মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধের কারণে প্রত্যাবাসনের আলোচনা আপাতত বন্ধ, উল্টো রাখাইনে যুদ্ধের কারণে নতুন করে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সাত বছর আগে বাংলাদেশ সীমানা খুলে দিলেও এবার সরকার কঠোর অবস্থানে থাকার ঘোষণার মধ্যে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের তথ্য এল। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর–এর গত জুলাই মাসের হিসাব বলছে, বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা নয় লাখ ৮৪ হাজার ৫৯১ জন।