বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের দাপট চলার মধ্যে নতুন মহামারী নিয়ে হুঁশিয়ার করলেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরী। আর তা মোকাবেলার প্রস্তুতিও রাখতে বললেন তিনি। মর্যাদাপূর্ণ র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কারজয়ী ফেরদৌসী বিডিনিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চলমান মহামারী, ভবিষ্যতের শঙ্কা নিয়ে কথা বলেছেন।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) এই জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী বলেন, বর্তমানে সবাই করোনাভাইরাস নিয়ে ব্যস্ত। তবে অনেক রকম রোগ আসতে পারে। আজ কোভিড-১৯ আছে, কাল অবশ্যই অন্য কিছু আসবে। এজন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
কেন এই শঙ্কা, তা তুলে ধরে তিনি বলেন, এমার্জিং প্যাথোজেন, যেটা নিয়ে আমরা অনেক চিন্তা করি, নিপাহ, ডেঙ্গু… পরিবর্তন সব জায়গায় হচ্ছে। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়েল রেজিস্ট্যান্সও মারাত্মক জিনিস। একটা জীবাণু যদি রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যায়, তাহলে কোনো ওষুধই কাজ করবে না। তখন চিহ্নিত রোগও মহামারী আকারে চলে যাবে। এমার্জিং এবং রি-এমার্জিং ইনফেকশন নিয়ে সচেতন থাকতে হবে।
তবে তিনি মনে করেন, করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় করতে গিয়ে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে যে কাঠামো তৈরি হয়েছে, তা ভবিষ্যতে কাজে আসবে। শুরুতে ৪-৫টা আরটি-পিসিআর ল্যাব ছিল, এখন এক হাজারের কাছাকাছি হয়েছে। আমরা এখন বায়োসেইফটি-২ তে কাজ করছি। বায়োহ্যাজার্ড নিয়ে সচেতনতা এসেছে। এখন আমাদের দায়িত্ব, সরকারের দায়িত্ব এই অবকাঠামো এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা যেন থাকে। এটা নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক আলোচনা থাকতে হবে।
সংক্রমণের বিচারে দেশে বর্তমান পরিস্থিতি ভালো বললেও নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট আবার যে সংক্রমণ বাড়িয়ে দিতে পারে, তা নিয়ে সতর্কও থাকতে বললেন তিনি। দেশে করোনার টিকা ব্যবস্থাপনা নিয়ে সন্তুষ্ট। তবে টিকার সংকট পুরোপুরি কাটাতে দেশে টিকা তৈরির ওপর জোর দেন তিনি। বিশ্বে টিকার ক্ষেত্রে যে বৈষম্য তৈরি হয়েছে, তার ওপরও আলোকপাত করেন।
গবেষণা হওয়া উচিত দেশের বাস্তবতায় : কলেরা আর টাইফয়েডের টিকা তৈরি করে হাজারো মানুষের প্রাণ বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য চলতি বছরের র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পেয়েছেন ড. ফেরদৌসী কাদরী। টিকার উন্নয়ন, উন্নত জৈব প্রযুক্তির চিকিৎসাবিদ্যা এবং জটিল গবেষণা লাখো মানুষের অমূল্য জীবন রক্ষায় অসামান্য ভূমিকা রয়েছে তার।
তবে গবেষণায় বাংলাদেশে পিছিয়ে থাকার জন্য অর্থকে একটি বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করছেন তিনি। পাশাপাশি গবেষণাগার ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানেরও অভাবের কথা বলেন তিনি। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে গবেষণা দেশের বাস্তবতায় হওয়া উচিত। তা মাথায় রেখেই নিজের গবেষণার বিষয় নির্ধারণ করেন তিনি। এজন্য তিনি কলেরা রোগ, টিকা, রোগ নির্ণয় করা, টাইফয়েড, ইটেক ডায়রিয়া, পুষ্টি এসব বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন। স্বাস্থ্য, জন্মগত রোগ নির্ণয়, শিশুদের বা বড়দের জন্য যেসব টিকা বাংলাদেশে আসা উচিত, এসব টিকা নিয়ে গবেষণা করতে চান ড. ফেরদৌসী।