অন্তবর্তীকালীন সরকার সংস্কারের কলা দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। আগামীকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ফের আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ পাওয়ার খবর দিয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমরা বলেছি, সংস্কার নিয়ে যেগুলো আলোচনা হয়েছে সেগুলো কম্পাইল করে জাতির কাছে প্রকাশ করেন। আগামী ২ তারিখ আবার ডেকেছেন আমাদের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা। ভাবটা আমরা বুঝছি এ রকম, আনুষ্ঠানিকতা–আয়োজনের কোনো কমতি নেই, কিন্তু কাজের কোনো খবর নেই।
তিনি বলেন, আবার ডেকেছেন ২ তারিখে, তৃতীয় পর্বের আলোচনার আবার শুভ উদ্বোধন হবে। কেন? উদ্বোধন ক’বার করতে হয়? প্রথম পর্যায়ে একবার উদ্বোধন করেছেন আলোচনার, দ্বিতীয় পর্যায়ের আবার উদ্বোধন করলেন, তৃতীয় পর্যায়ে গিয়ে আবার আপনারা এটা একত্রিত করলেন। এভাবে আপনারা আমাদেরকে সংস্কারের কলা দেখাচ্ছেন। খবর বিডিনিউজের।
এ মাসের মাঝামাঝি প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ ভাবনার বিষয়টি সামনে আসার পর গত ২৪ মে রাতে বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন ইউনূস। পরদিন আরো কয়েকটি দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ইউনূস। এসব আলোচনায় নির্বাচন, সংস্কার ও বিচার নিয়ে দলগুলো নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে। বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের রূপরেখা চেয়ে এলেও প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।
সালাহউদ্দিন বলেন, সংস্কার হবে, সংস্কার আমাদের প্রধান এজেন্ডা। তার চাইতেও বেশি বিচার। যারা মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল, সবাইকে কাঠগড়ায় নিয়ে আসতে হবে, এটা আমাদের সর্বোচ্চ এজেন্ডা। কিন্তু নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষকে এই ডিসেম্বরের মধ্যে দেবেন বলে আপনি (প্রধান উপদেষ্টা) আশ্বস্ত করেছিলেন আমাদের সামনে। পরবর্তীতে আপনি সরে গেলেন, সেই কাজটি ঠিক করেননি।
ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন কোন যুক্তিতে? : সালাহউদ্দিন বলেন, নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার একটিও কারণ নাই, আপনার সামনে যুক্তি নাই। কেন আপনি ডিসেম্বরের বাইরে যেয়ে নির্বাচন দেবেন, সেটার পক্ষে একটিও যুক্তি নাই। কিন্তু শুধু বলেন, ‘ডিসেম্বর থেকে জুন, ডিসেম্বর থেকে জুন’, যেন আছর করেছে। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে–দেশের মানুষের দাবি। সাংবাদিক বন্ধুদের কাছে আমার অনুরোধ, আপনারা জাতির সামনে উন্মুক্ত করবেন, যদি ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি যুক্তিও তাদের কাছে থাকে, সেটা যেন তারা প্রকাশ করে।
জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশে কৃষি বিপ্লবে জিয়াউর রহমানের অবদান’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
গণতন্ত্রীদের বিরুদ্ধে একটি কুচক্রি মহল তৎপর : সালাহউদ্দিন বলেন, যারা আমরা নির্বাচন চাই, যারা আমরা গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটাতে চাই এবং গণতন্ত্রের কথা বলি, নির্বাচনের কথা বলি, গণমানুষের কথা বলি তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হয়ে গেছি কুচক্রি মহলের দৃষ্টিতে। কারণ তারা চায় না বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হোক, তারা চায় না বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শক্তির ভিত্তি, তারা চায় এদেশ সবসময় বিদেশ নির্ভর হোক। তারা আমাদেরকে দেশদ্রোহী এবং অন্যান্য দেশের এজেন্ট বানাতে তৎপর হয়ে উঠেছে। এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে, আমাদের ছেলে–সন্তানদের বিরুদ্ধেও কুৎসা রটনা করছে। কৃষকদলের নেতাকর্মীদের অনলাইনে অ্যাক্টিভিটি বাড়িয়ে কুচক্রিদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে বলেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা যে বৈষ্যমহীন সমাজ নির্মাণের জন্য সংগ্রাম করেছি, আজীবন গণতন্ত্রের পক্ষে ত্যাগ স্বীকার করেছি, আজীবন সংগ্রাম করেছি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, আমরা সেই ঐক্যকে কেন যেন নষ্ট করতে চাচ্ছি। কিছু কিছু শক্তি গণতান্ত্রিক শক্তিসূহের মধ্যে ফাটল ধরানোর জন্য অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।