আয়বর্ধক প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলে অর্থের জন্য মন্ত্রণালয়ের দিকে চেয়ে থাকতে হবে না বলে মন্তব্য করেছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তবে আয়বর্ধক প্রকল্প বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়া নিয়ে জটিলতা হয় বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী মেয়র থাকাকালে হোল্ডিং ট্যাক্স তেমন আদায় করেননি। উনি আয়বর্ধক প্রকল্প নিয়েছিলেন। তখন মন্ত্রণালয়েরও অত বাধ্যবাধকতা ছিল না। তিনি জায়গা ক্রয় করেছেন, হাউজিং করেছেন এবং সেটা বিক্রি করেছেন। যে টাকা আয় হয়েছে সেটা কর্পোরেশনের বিভিন্ন খাতে ব্যয় করেন। এখন তো সেটা করতে পারি না। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে। যেমন আপনি (স্থানীয় সরকার মন্ত্রী) বললেন, যেখানে–সেখানে দোকান করা যায় না। আপনাদের অনুমতি লাগবে। এ অবস্থায় আমরা তো এগুতে পারি না। আমাদের হাত–পা বাঁধা। আয়বর্ধক প্রকল্প নিতে পারলে এখনো কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হতো না।
গতকাল বিকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উন্নয়ন কার্যক্রম সংক্রান্ত সমন্বয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।
মেয়র বলেন, আমাদের যে রাজস্ব আয় তা থেকে ৮১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ৫৬টি স্বাস্থ্য কমপ্লেঙসহ অনেকগুলো জনসেবার প্রকল্প পরিচালনা করি। বাংলাদেশের অন্য কোনো সিটি কর্পোরেশনে এসব নেই। দেশের অনেক সিটি কর্পোরেশনে একজন ডাক্তার আছে। অথচ আমাদের আছে ১৬০ জন। এগুলো পরিচালনার ব্যয়ভার বহন করতে হয় আমাদের রেভিনিউ থেকে। তাই অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে চট্টগ্রামের তুলনা করলে হবে না।
তিনি বলেন, উপমন্ত্রী মহোদয় প্রশ্ন করেছেন, রেভিনিউ থেকে সিটি কর্পোরেশন জলাবদ্ধতা প্রকল্পের বাইরে থাকা ২১টি বা অন্যান্য খালে কাজ করছে না কেন? আমার জানামতে অতীতে কর্পোরেশনের রেভিনিউ থেকে কোনো খালের প্রকল্পে কাজ করা হয়নি। চাক্তাই খালের তলা পাকাকরণসহ যত কাজ হয়েছে সবগুলো কিন্তু প্রকল্পের অধীনে হয়েছে। আমাদের যে রেভিনিউ জেনারেট হয় সেখান থেকে উপ–খাল ও নালা–নর্দমায় কাজ করে থাকি। চলতি মৌসুমে খাল থেকে ২ কোটি টাকার মাটি উত্তোলন করেছি।
মেয়র বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মহোদয় ঢাকায় রাজস্ব থেকে কাজ হওয়ার কথা বলেছেন। ঢাকায় সব কর্পোরেট অফিস, বড় বড় ইমরাত–দালান। সেখানে রাজস্ব আয়ও বেশি। আমাদের ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে ১০টি বাদ দিলে সবগুলো গরিব এলাকা। ওখানে জোর করে আমরা হোল্ডিং ট্যাঙ আদায় করতে পারি না।
এ সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম চসিকের রাজস্ব আদায়ের তথ্য জানতে চান। তখন মেয়র বলেন, গত বছর ৩০০ কোটি টাকায় রাজস্ব আদায় হয়েছে। আমাদের যদি আয়বর্ধক প্রকল্প হাতে নিতে দেন আপনাদের দিকে তাকাব না।
তখন মন্ত্রী বলেন, আয়বর্ধক প্রকল্প নিতে চাইলে তো নিষেধ নেই। যৌক্তিক হলে তো নিষেধ নেই। যদি যৌক্তিক হয় প্রয়োজনে আর্থিকভাবেও মন্ত্রণালয় সহযোগিতা করবে। যদি জনগণের সমস্যা হয়, পরিবেশের ক্ষতি হয়, তাহলে তো মন্ত্রণালয় অনুমতি দিবে না।
এর আগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ইচ্ছে করলে জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করতে পারবেন না। কাউকে দোকান করতে দিতে চাইলে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করবেন। তখন দেখা হবে, সেখানে দোকান বসানো যাবে কিনা বা দোকান বসানো ঠিক হবে কিনা। যত্রতত্র বসাতে পারবে না। আইন–কানুন, শৃঙ্খলার মধ্যে তো চলতে হবে। আমাকে মন্ত্রী বানিয়েছে। আমি যা খুশি করে ফেলব। সে ক্ষমতা সংবিধান আমাকে দেয়নি। আপনাকেও দেয়নি।
তিনি বলেন, ঢাকায় অনেকগুলো খাল আছে, যেগুলো সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করেছি। কিন্তু তারা কখনো বলেনি আমাদের টাকার ব্যবস্থা করেন। তারা তাদের ইনকাম থেকে করছে। আপনারাও কিছু কিছু করছেন না, তা না। যদি করে থাকেন বলেন। না করলে কেন করেননি বলেন। সব টাকা তো সরকার দেবে না। এডিপির যে বরাদ্দ সেটা তো কোয়াটারলি ভাগ করে দিচ্ছি। আপনাদের তো জিজ্ঞেসও করতে হয় না।
খাল পরিষ্কার করলেই হবে : স্থানীয় সরকারমন্ত্রী জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালককে বলেন, এরা বলে আপনারা ঠিকমতো কাজ করছেন না। খালের ময়লা পরিষ্কার করছেন না। প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি কী?
তখন লে. কর্নেল শাহ আলী বলেন, ১৭ খাল খনননসহ রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ শেষ। খালগুলোর পাশে রাস্তাও করেছি। কিছু খালে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য কাজ শেষ হয়নি। সেখানে খাল কিছুটা ভরাট আছে। তবে সামনের যে শুষ্ক মৌসুম সেখানে করে ফেলব। প্রবর্তক মোড় থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণ না হলে কাজ করতে পারব না। বাকিগুলোতে অধিগ্রহণ না হলে পানি যাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারব। যে খালগুরোলোর কাজ শেষ হয়েছে তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তরের প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমাদের বাজেট নেই।
তখন মেয়র বলেন, বারবার বলেছি খালের মাটি উত্তোলন করতে হবে। দুই পাশে রিটেইনিং ওয়াল দিলেই খাল খনন প্রকল্প হয়ে গেছে, তা না। কত কিউবেক মাটি উত্তোলন করবেন তা তো ডিপিপিতে লেখা আছে। খালের দুই পাশে রাস্তা করতে হবে। যা এ পর্যন্ত করা হয়নি। শুধু বুঝিয়ে দিব বললে হবে? কি বুঝিয়ে দিবেন?
তিনি বলেন, যে সমস্ত খালে তারা দেয়াল দিয়েছে, বিশেষ করে চাক্তাই খাল, মহেশ খাল, মির্জাখাল, নোয়াখাল; এসব খালে যদি মাটি উত্তোলনই করা হয়ে থাকে তাহলে সেটা দৃশ্যমান না কেন? কোনো মাটিই উত্তোলন করা হয়নি। মাটি উত্তোলনই যদি করা না হয় সিটি কর্পোরেশন কেন সেগুলো বুঝে নেবে? আমাদের মাটি উত্তোলন করে দেন। সাইড দেয়ালের দরকার নেই। শত শত বছর এখানে খাল ছিল। তখন রিটেইনিং ওয়াল ছাড়া পানি যেতে পারেনি?
এ সময় লে. কর্নেল শাহ আলী বলেন, মেয়র মহোদয় যে সমস্ত খালের কথা বলেছেন সেখানে কাজ শেষ হয়নি। যেসব খালে খনন ও রাস্তা হয়ে গেছে সেগুলো বুঝিয়ে দিতে চাই। এ সময় মন্ত্রী বলেন, এটা আপনারা নেগোসিয়েশন করেন।