আম্মাকে ছাড়া কষ্টের ঈদ

নবাব হোসেন মুন্না | মঙ্গলবার , ৮ এপ্রিল, ২০২৫ at ৬:৫৫ পূর্বাহ্ণ

সিকি পয়সার ঈদি লক্ষ টাকা খুশী ছিলো বাল্যকালে আমার ঈদ। এইবারে ঈদ আমার বুকে জমাটবাধা কষ্টের ঈদ ২৩ মে ২০২৪ আম্মাকে চিরকাল জন্য হারালাম, আম্মাকে ছাড়া এবারের ঈদ পালন করবো, সৃষ্টিকর্তার খেলা বুঝা বড় দায়। এবার মুল কথায় আসি। ছোটবেলায় বিশ রোজার পর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা থাকতাম ৩০ রোজা কবে আসবে, চাঁদ উঠবে। দোয়া করতাম যেন তাড়াতাড়ি ঈদ এসে যায়, সময় পেরিয়ে যায়, অনেক সময় ২৯ রোজায় চাঁদ ওঠা একটা অনিশ্চয়তার ব্যাপার ছিলো, আর তাই মজার। চাঁদ উঠেছে এই খবরে ইফতার করতে পারতাম না সেদিন, পানি আর দুই একটা জিনিস মুখে দিয়েই দৌড়। মা পিছন থেকে বলত, এই দাঁড়া, এই দাঁড়া। কে শোনে কার কথা? আমাদের বাড়ির পাশে অনেকগুলো বড় বড় মাঠ ছিলো চাঁদ দেখতাম বড় মাঠে গিয়ে। এখন আর সেই মাঠগুলো নেই। সেই মাঠগুলো এখন বড় বড় অট্টালিকায় ভরে গেছে, কতদিন চাঁদ দেখি না। এখন চাঁদ দেখতে হয় না, ইলেকট্রনিক মিডিয়া সামাজিক যোগাযোগ সাইডের মাধ্যমে চাঁদ উঠার খবর ভাইরাল হয়ে যায়। আর দেখা যাবেই বা কেমনে বড় বড় দালানগুলোর কারণে এখন আকাশ দেখা যায় নাকি? চাঁদ উঠলে আমরা বাজি ফুটাতাম, তারাবাতি জ্বালাতাম। আর আমাদের পাড়ার বড় ভাইরা গান বাজাতো সুন্দর সুন্দর গেইট বানিয়ে বেলুন, ঈদ মোবারকের কার্ড লাগিয়ে দিতেন, অনেক জায়গায় রং তুলি দিয়ে ঈদ মোবারকের চিত্র অংকিত করা হতো, সেখানে বড়ভাইরা আমাকে নিয়ে আসতেন তুলি দিয়ে ঈদে বিভিন্ন ধরণের ক্যাপশন বানিয়ে দিতাম, সকলে আমার প্রশংসা করতেন। কি যে খুশী লাগতো, মসজিদে মসজিদে আল্লাহু আল্লাহু ধ্বনি, শোনা যেত অসাধারাণ সেই সুর, কিছুক্ষণ পর পর হুজুরের জানিয়ে দেয়া ঈদের জামাতের সময়। সবার বাসা থেকে আসত রান্নার সুগন্ধি। আমি স্বল্প আয়ের পরিবারের সন্তান। ছয় ভাই দু বোন বাবা মা আট জনে, পরিবার, বাবা একাই রোজগার করতেন, তাই কোনো কোনো ঈদে একটু অপ্রাপ্তি থাকতো। তারপরে দুঃখ থাকতো না। বাবার সাধ্য অনুযায়ী নতুন জামা, পাঞ্জাবী, প্যান্ট, জুতা কিনে দিতেন, সংসারে আমি বড় ছিলাম, স্কুলের একটানা ফার্স্ট বয় ছিলাম তাই আমাকে ভাইদের চেয়ে একটু বেশি দিতেন বাবা। আজ পৃথিবীতে আমার নানী নেই, আল্লাহ উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন, আমার নানীর দেওয়া কাপড়গুলো ছিলো সবচেয়ে প্রিয় ও সুন্দর। ৫০/৫২ বয়সে এসেও গিফট পাই। কিন্তু বাল্যকালে আমার নানীর গিফটগুলো সবচেয়ে দামী, সেই গিফটগুলোর কথা কি সহজে ভুলতে পারি। এক কথায় সব মিলিয়ে ঈদের আনন্দটা ছিলো অনেক অনেক বেশি। ঈদের দিন মা গোসল করিয়ে নতুন কাপড় পরিয়ে দিতেন, বাবার সাথে নামাজ পড়তে যেতাম, নামাজ শেষে চাচা জেঠা আত্মীয় স্বজনের বাসায় যেতে সালাম করে ঈদি নিতাম, যখন কেউ ঈদি দিতে ভুলে যেতেন বারবার সালাম করতাম সিকি পয়সার ঈদি লক্ষ টাকার খুশী ছিলো, এখনকার ছেলে মেয়েদের হাজার টাকা ঈদি দিলে মনে হয় সেই আনন্দ পায় না, যেটা আমরা পাইতাম। ঈদি সবগুলো জমিয়ে মায়ের কাছে রাখতাম, ঈদিগুলো মা কী করতেন সেই কথা আর মনে থাকতো না। এখন বড় হয়েছি সংসার হয়েছে, ভাইবোনদের আলাদা আলাদা সংসার হয়েছেন আমার দায়িত্ব বেড়েছে, আর বাবা মার দায়িত্ব কমেছে তারা দিনের পর দিন ছোট হচ্ছেন। তবুও মাঝে মাঝে খুব ছোট হতে ইচ্ছা করে আবারো। কিন্তু তা কি সম্ভব? হয়তো একদিন আমিও মা বাবার মতো ছোট হয়ে যাবো, সংসারে হাল ছেলেরা ধরবে। এখনো ঈদে অনেক আনন্দ আছে, আর সেইটা হচ্ছে আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের। কিন্তু ছোট বেলার সেই আনন্দটা আর নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিএনজি টেক্সি চলাচল নিষিদ্ধ করা হোক
পরবর্তী নিবন্ধবই নয়, যেন হীরের টুকরো