আমেরিকা থেকে আমদানি করা গমের প্রথম চালান বন্দরে পৌঁছাবে কাল

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের টিম আজ চট্টগ্রাম আসছে

হাসান আকবর | শুক্রবার , ২৪ অক্টোবর, ২০২৫ at ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ

দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আমেরিকা থেকে সরকারিভাবে আমদানিকৃত প্রায় ৫৭ হাজার টন গম নিয়ে একটি জাহাজ আগামীকাল শনিবার চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে নোঙর করছে। ইতোপূর্বে রাশিয়া ও ইউক্রেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গম আমদানি করা হলেও আমেরিকা থেকে এবারই সরকার প্রথম গম আমদানি করছে। আমেরিকার সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোসহ ট্রেড ব্যালেন্সের জন্য এই গম আমদানি করা হচ্ছে। প্রথম জাহাজটিতে ১ কোটি ৭১ লাখ ৯৮ হাজার ৯০০ ডলার বা ২০৯ কোটি ৮২ লাখ ৬৫ হাজার টাকার গম রয়েছে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার এ গম আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। আমেরিকা থেকে ২ লাখ ৪২ হাজার টন গম আমদানির চুক্তি রয়েছে। যার মধ্যে প্রথম চালানটি কাল চট্টগ্রামে পৌঁছাচ্ছে। এই গমের স্যাম্পল দেখার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম আজ চট্টগ্রাম আসছে।

সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে বছরে গড়ে ৮০ লাখ টনের বেশি গমের চাহিদা রয়েছে। আটাময়দা নির্ভর খাবারের কদর বাড়ার সাথে সাথে গমের চাহিদা প্রবিছরই বাড়ছে। দেশে ১১ লাখ টনের মতো গম উৎপাদিত হয়। বাকি গম আমদানি করতে হয় বিশ্বের নানা দেশে থেকে। বাংলাদেশ তার চাহিদার অর্ধেকেরও বেশি গম আমদানি করে রাশিয়া থেকে। গত অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল প্রায় ৫৪ শতাংশ। এরপরই রয়েছে ইউক্রেন। গত অর্থবছরে ইউক্রেন থেকে গম আমদানির পরিমাণ ছিল ১৪ শতাংশ। এছাড়া ব্রাজিল, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, উরুগুয়ে থেকে বাংলাদেশে সরকারি বেসরকারিভাবে গম আমদানি হয়ে থাকে।

সূত্র জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারিভাবে আমদানিকৃত গমের সিংহভাগই এসেছে রাশিয়া থেকে। এছাড়া ইউক্রেন, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া এবং উরুগুয়ে থেকেও সরকার গম আমদানি করে। কিন্তু এবারই প্রথম আমেরিকা থেকে সরকারিভাবে গম আমদানি করা হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সাথে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে ট্রেড ব্যালেন্স তৈরির জন্য ট্রাম্প প্রশাসন একটি চাপ সৃষ্টি করে। এরই প্রেক্ষিতে সরকার আমেরিকা থেকে গম আমদানির মাধ্যমে ঘাটতি কিছুটা হলেও কমিয়ে ট্রেড ব্যালেন্স রক্ষা করার উদ্যোগ নেয়। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে সরকার আমেরিকা থেকে প্রতি টন ৩০২ ডলার দরে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির চুক্তি করে। চুক্তিতে দশ শতাংশ প্লাসমাইনাসের শর্ত থাকায় আগামী কিছুদিনের মধ্যে আমেরিকা থেকে মোট ২ লাখ ৪২ হাজার টন গম আসছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। আমেরিকা থেকে আমদানিকৃত ২ লাখ ৪২ হাজার টন গমের প্রথম চালানে ৫৬ হাজার ৯৫০ টন গম নিয়ে এমভি নর্স স্ট্রাইড আগামীকাল বহির্নোঙরে নোঙর করবে। এই গমের চালানের স্যাম্পল দেখতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন এডিশনাল সেক্রেটারির নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম আজ চট্টগ্রাম আসছে। টিমটি বহির্নোঙরে গিয়ে গমের স্যাম্পল কালেকশন করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখবে। আমেরিকার গমের মান রাশিয়া বা ইউক্রেনের গমের চেয়ে ভালো বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, দূরত্বের কারণে জাহাজ ভাড়া বেশি হওয়ায় কিছু বাড়তি অর্থ খরচ হচ্ছে।

আমেরিকার দ্বিতীয় জাহাজ এমভি স্পার এরিস জাহাজে ৬০ হাজার ৮০২ টন গম নিয়ে আগামী ২৯ অক্টোবর চট্টগ্রাম পৌঁছানোর কথা রয়েছে। নভেম্বর মাসে আরো দুইটি জাহাজে বাকি গম চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে বলেও সূত্র আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।

খাদ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা গতকাল দৈনিক আজাদীকে প্রথম জাহাজটি আসার খবর নিশ্চিত করে বলেছেন, আগামী মাসের মধ্যে আমেরিকা থেকে চুক্তির বাকি গমের জাহাজও চট্টগ্রামে এসে পৌঁছাবে। এসব গম সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং সামাজিক কর্মসূচিতে ব্যবহৃত হবে বলেও তিনি জানান।

সরকারি গম খালাসের সাথে জড়িত সেভেন সীজ শিপিং লাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমডি আলী আকবর জাহাজ আসার কথা স্বীকার করলেও বিস্তারিত এখনো জানেন না বলে জানিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখুলশীতে সাংবাদিক পরিচয়ে ঘরে ঢুকে ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৭
পরবর্তী নিবন্ধচাচাতো ভাইয়ের ইটের আঘাতে গৃহবধূর মৃত্যু