যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের একটি যাত্রীবাহী জেট বিমানের সাথে একটি সামরিক হেলিকপ্টারের সংঘর্ষ হয়েছে। গত বুধবার স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে রিগান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল এয়ারপোর্টের রানওয়ে ৩৩–এর কাছাকাছি ঘটনাটি ঘটে। যাত্রীবাহী বিমানটিতে মোট ৬০ জন যাত্রী এবং চারজন ক্রু সদস্য ছিলেন। আর হেলিকপ্টারে তিনজন মার্কিন সৈন্য ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে দুই আকাশ যানের সবাই মারা গেছেন।
হতাহতের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত না করা গেলেও স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে এ পর্যন্ত ৩০ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকর্মীরা। ওয়াশিংটন ডিসির জরুরি পরিষেবা বিভাগ জানিয়েছে, বিমানটি পোটোম্যাক নদীতে বিধ্বস্ত হয়েছে। খবর বিবিসি বাংলা ও বিডিনিউজের। কী ঘটেছিল : যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) বলছে, বুধবার স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ৫৪৩২ ফ্লাইটটি রোনাল্ড রিগান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল এয়ারপোর্টে নামার পথে মাঝ আকাশেই যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। নামে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের হলেও ফ্লাইটটি পরিচালনা করছিল পিএসএ এয়ারলাইন্স।
আমেরিকান এয়ারলাইন্সের তথ্য অনুযায়ী, যাত্রীবাহী এ বোম্বার্ডিয়ার সিআরজে৭০০ বিমানটি ৬০ যাত্রী ও ৪ ক্রু নিয়ে কানসাসের উইচিটো থেকে রওনা হয়েছিল। বিমানটি যে হেলিকপ্টারের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় সেটি ছিল সিকোর্স্কি এইচ–৬০, এটি উড়েছিল ভার্জিনিয়ার ফোর্ট বেলভয়ার থেকে। হেলিকপ্টারটিতে তিন মার্কিন সেনা ছিল বলে জানিয়েছে সিবিএস। এফএএ বলেছে, তারা ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট সেইফটি বোর্ডকে (এনটিএসবি) সঙ্গে নিয়ে এ বিমান দুর্ঘটনার তদন্তে নেমেছে।
হতাহতের কী খবর : হতাহতের বিষয়ে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কিছু জানানো হয়নি। তবে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম সিবিএসের প্রতিবেদনে পটোম্যাক নদী থেকে এখন পর্যন্ত ৩০টি দেহ উদ্ধার করার কথা বলা হয়েছে। মার্কিন গণমাধ্যমের শুরুর দিকের খবরে যাত্রীবাহী বিমানটিকে নদীতে দ্বিখণ্ডিত অবস্থায় এবং হেলিকপ্টারটি উল্টে পড়ে থাকতে দেখা যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। পুলিশের একাধিক নৌযানের সহায়তায় পুলিশ ও দমকল বাহিনী নদীর জমাট ঠাণ্ডা পানিতে জীবিতদের খোঁজে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে বলে সিবিএসের খবরে বলা হয়েছে। এই উদ্ধার তৎপরতা নদীর কাছাকাছি রোনাল্ড রিগান এয়ারপোর্ট থেকেও দেখা যাচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা যা বলছেন : বিমানবন্দরের পাশ দিয়ে যাওয়া জর্জ ওয়াশিংটন পার্কওয়েতে গাড়ি চালানোর সময় যাত্রীবাহী বিমানটির দুর্ঘটনায় পড়া দেখেন আরি শুলমান। এনবিসি ওয়াশিংটনকে তিনি বলেন, প্রথমদিকে বিমানটির গতিবিধি স্বাভাবিকই মনে হচ্ছিল, হঠাৎ বিমানটি ডানদিকে অনেকখানি কাত হয়ে যায়। বিমানটির নিচে আগুনের স্ফুলিংয়ের স্রোত দেখা যাচ্ছিল, এর পেটটা আলোকিত হয়ে উঠেছিল, বলেন শুলমান। এটা যে খুবই খারাপ কিছু দেখেই বুঝে যান তিনি। অতীতে অনেকবারই বিমানের অবতরণ দেখেছেন তিনি। অন্ধকারে কখনোই বিমানের নিচের দিকটা দৃশ্যমান হওয়া ঠিক নয়। ওই স্ফূলিঙ্গ দেখে মনে হচ্ছিল বিশাল রোমান মোমবাতি, যা বিমানটির সামনে থেকে পেছনে ছড়িয়ে পড়ে।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জিমি মাজেও এয়ারপোর্টের কাছে একটি পার্কে বান্ধবীর সঙ্গে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন, তখনই মাঝ আকাশে বিমান ও হেলিকপ্টারের সংঘর্ষ দেখেন। সেসময় আকাশে সাদা আগুনের মতো কিছু দেখেছেন বলে মনে পড়ে তার। রোনাল্ড রিগান এয়ারপোর্টের আকাশে বিমানগুলো অনিয়মিত প্যাটার্নে উড়ছিল বলেও মনে হয়েছে মাজেওর। জরুরি পরিষেবাগুলো ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত যা দেখেছিলাম তা নিয়ে খুব বেশি ভাবিনি, বলেছেন তিনি।
একজন যাত্রীর জন্য অপেক্ষমান হামাদ রাজা নামে দুর্ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, তিনি রিগ্যান ওয়াশিংটন জাতীয় বিমানবন্দরে তার স্ত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন, যিনি আমেরিকান এয়ারলাইন্সের বিমানে ছিলেন। ‘সে আমাকে টেঙট করেছিল যে সে ২০ মিনিটের মধ্যে অবতরণ করবে। তিনি আশা করছেন নদী থেকে তার স্ত্রীকে উদ্ধার করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একে একটি ভয়ংকর দুর্ঘটনা বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি দুর্ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, বিমানটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ও সঠিক পথে বিমানবন্দরের দিকে আসছিল। হেলিকপ্টারটি দীর্ঘ সময় ধরে সরাসরি বিমানের দিকে আসছিল। রাত ছিল পরিষ্কার, আর বিমানের স্পষ্টভাবে আলো জ্বলছিল। কেন হেলিকপ্টারটি উপরে বা নিচে গেল না, বা মোড় নিল না? কেন কন্ট্রোল টাওয়ার হেলিকপ্টারকে নির্দেশ না দিয়ে শুধু জিজ্ঞাসা করল, তারা কি বিমানটিকে দেখতে পাচ্ছে? পোস্টে লিখেছেন ট্রাম্প। তার মতে এই ভয়ংকর পরিস্থিতি সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব ছিল।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ জেফারি থমাস দুর্ঘটনার ম্যাপ পর্যবেক্ষণ করে বলছেন, হেলিকপ্টারটি উপরে উঠছিল এবং শেষ মিনিটে এটি ২০০ ফিট থেকে সাড়ে ৩০০ ফিটে উঠে যায়। এছাড়াও এটি ছয়বার গতিপথ পরিবর্তন করে। আমি ধারণা করি সামনে আমরা হেলিকপ্টারটিকেই দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে দেখবো, বলছিলেন থমাস।
বলা হচ্ছে এমন এলাকায় হেলিকপ্টার সাধারণত ২০০ ফিটের নিচে থাকার কথা, যার ব্যত্যয় ঘটেছিল এক্ষেত্রে। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন নিশ্চিত করেছে যে, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনে সহায়তা দেবে।