আমেরিকায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ধস নেমেছে। গত জানুয়ারি থেকে জুলাই এই ৭ মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি দামের তৈরি পোশাক কম রপ্তানি হয়েছে। ব্যাপারটিকে বিশ্বমন্দা এবং আমেরিকার সার্বিক আমদানি কমে যাওয়ার ফল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে আমেরিকায় রপ্তানি কমে যাওয়ায় দেশের তৈরি পোশাক খাতকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে বলে আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হচ্ছে আমেরিকা। বছরে সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলারের মতো তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় আমেরিকায়। এরপরই জার্মানি বাংলাদেশি পোশাকের বড় ক্রেতা। জার্মানিও বছরে গড়ে ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি তৈরি পোশাক কিনে এদেশ থেকে। ইংল্যান্ড ক্রয় করে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক। কানাডা নিয়ে যায় দেড় বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক। জার্মানিসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭ দেশ বাংলাদেশ থেকে বছরে গড়ে ২০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি তৈরি পোশাক আমদানি করে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশিত এক হিসেবে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা তৈরি পোশাক নেয়া কমিয়ে দিয়েছে। এটি কি সম্পর্কের টানাপোড়েনের প্রভাব নাকি বৈশ্বিক মন্দার ধাক্কা তা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। অধিকাংশ গার্মেন্টস শিল্প মালিকের মতে বৈশ্বিক মন্দায় আমেরিকার অভ্যন্তরীণ বাজারে বেশ প্রভাব পড়েছে। আমেরিকার বহু মানুষ যারা আগে বছরে ৫/৬টি পোশাক কিনতেন তারা এখন কম পোশাক কিনছেন। ফলে বাজারে চাহিদা কমে গেছে। এতে করে কমেছে আমদানি। বৈশ্বিক সংকটের জের ধরে দেখা দেয়া প্রভাবের পাশাপাশি করোনা পরবর্তী সময়ে বেশি কেনাকাটার একটি প্রভাবও অভ্যন্তরীণ বাজার পরিস্থিতিতে ভিন্ন ধরনের আবহ তৈরি করেছে। এতে করে আমেরিকার ব্যবসায়ীরা আমদানি কমানোর ফলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই বাজারে রপ্তানি কমে গেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো থেকে প্রাপ্ত হিসেবে দেখা গেছে, ২০২২ সালের প্রথম ছয়মাসে (জানুয়ারি থেকে জুলাই) আমেরিকায় বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানি হয়েছিল সর্বমোট ৫.৬৯ বিলিয়ন ডলার। যা চলতি বছরের প্রথম ছয়মাসে নেমে এসেছে ৪.৫৬ বিলিয়ন ডলারে। এক বছরের ব্যবধানে ছয়মাসে রপ্তানি কমেছে ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। বিষয়টি দেশের রপ্তানি খাতের জন্য বড় সংকট বলে মন্তব্য করে সূত্র বলেছে, অবশ্য ২০২১ সালের প্রথম ছয়মাসে রপ্তানি হয়েছিল ৩.৬৯ বিলিয়ন ডলার, ২০২০ সালে রপ্তানি হয়েছিল ২.৮৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালে রপ্তানি বেশ গতিশীল হলেও এক বছরের ব্যবধানে নিম্নমুখী হয়ে গেছে।
বিষয়টি শুধু বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে নয় বলে উল্লেখ করে একাধিক শিল্পপতি বলেছেন, চলতি বছরের প্রথম ছয়মাসে আমেরিকা পুরো পৃথিবী থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করেছে ৪৫.৭৪ বিলিয়ন ডলার। এরমধ্যে চীন থেকে আমদানি করে ৯.১২ বিলিয়ন এবং ভিয়েতনাম থেকে ৮.২১ বিলিয়ন ডলার। আগের বছর একই সময়ে আমেরিকা পৃথিবীর নানা দেশ থেকে ৫৮.৮৫ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক কিনেছিল। আগের বছর চীন এবং ভিয়েতনাম থেকে যথাক্রমে ১২.৮০ এবং ১০.৯১ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক কিনেছিল। চলতি বছর চীন এবং ভিয়েতনাম থেকেও কম পোশাক কিনেছে আমেরিকা।
প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমেরিকায় তৈরি পোশাক রপ্তানি আগের বছরের চেয়ে কমেছে। পুরো পৃথিবী থেকেই তাদের আমদানি কমেছে। করোনার সময় পুরো পৃথিবীর মতো আমেরিকায়ও কেনাকাটা বন্ধ ছিল বললেই চলে। করোনা পরবর্তীতে আমেরিকান ব্যবসায়ীরা প্রচুর তৈরি পোশাক আমদানি করে। আমদানিকৃত এসব পোশাকের অনেকগুলো তাদের স্টকে রয়ে গেছে। চলতি বছরে তাদের কম পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে। ফলে তাদের আমদানি কমেছে আর আমাদের রপ্তানি। সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ইনভেনটরি লেভেল কমে আসায় এখন ক্রয়াদেশ তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আমেরিকায় তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়ার সাথে অন্য কোনো কিছুর কোনো যোগসূত্র খোঁজা ঠিক হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।