কেন্দ্রীয় চর্ম ও সামাজিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রকে (আমেরিকান হাসপাতাল) স্পেশালাইজড কাম জেনারেল হাসপাতালে রূপান্তরে আগামী বাজেটে বরাদ্দ চেয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক এবং নগর আওয়ামী লীগের সহ–সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। গতকাল রবিবার বেলা ১১টায় আমেরিকান হাসপাতালের সম্মুখে নাগরিক উদ্যোগ আয়োজিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত দাবি জানিয়েছেন তিনি। এই সময় তিনি প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুলে এটিকে জেনারেল হাসপাতালে রূপান্তর করতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা সরকারের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন।
খোরশেদ আলম সুজন বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে আসা নাবিকদের যৌনবাহিত রোগের চিকিৎসার জন্য বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তায় ১৯৫৬ সালে আগ্রাবাদে আমেরিকান হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। হাসপাতালটি তখন ছিল পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এটি বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে আসে। দুইজন আমেরিকান নার্স এবং একজন ব্রিটিশ ডাক্তার ছিল, সে সুবাধে হাসপাতালটি আমেরিকান হাসপাতাল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এক সময় চর্ম ও যৌন রোগের চিকিৎসায় হাসপাতালটির সুনাম থাকলেও অবহেলা এবং অব্যবস্থাপনায় ধীরে ধীরে হাসপাতালটির অবস্থা নাজুক হতে শুরু করে। বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগরী এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দৈনিক ৭৫০ থেকে ৮০০ জন রোগী চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে আসেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে হাসপাতালটিতে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ৫ জন। এই ৫ জন চিকিৎসকের পক্ষে এ বিপুল সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দেয়া কোনোভাবেই সম্ভব হয় না। ফলে হাসপাতালটিতে রোগী থাকলেও পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা নেই। নামে মাত্র ফ্রি ওষুধ দেওয়া হয় যা অনেক ক্ষেত্রেই রোগীর কোনো কাজে আসে না। প্রায়শই বাইরে থেকে ওষুধ কিনে রোগীদের চিকিৎসা সেবা চালাতে হয়। এর মধ্যে কোনো চিকিৎসক অসুস্থ বা ছুটিতে থাকলে চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে রোগীদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠে বলেও মন্তব্য করেছেন খোরশেদ আলম সুজন।
সরজমিনে দেখা যায়, গতকাল সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টায় প্রায় ৬০০ রোগী টিকেট সংগ্রহ করেছেন। যাদের বেশিরভাগই ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে হাসপাতালের কাউন্টার খোলার অপেক্ষা করে টোকেন সংগ্রহ করেন। কিন্তু এত কষ্টের পরও মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই ডাক্তার শেষ করেন রোগী দেখা। ফলে পর্যাপ্ত এবং সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের নানা অঞ্চল থেকে আসা হাজারো মানুষ। গতকাল চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রোগীরা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালটিতে এসেছিলেন। হাসপাতালটির চারপাশে নোংরা, আবর্জনা ও ঘন জঙ্গলে ভর্তি, নেই পরিস্কার করার মতো পর্যাপ্ত লোকবল। অথচ চর্ম ও যৌনবাহিত রোগীদের জন্য এটি দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, চট্টগ্রামের আজকের যে বিশাল উন্নয়ন তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরেই সাধিত হয়েছে। না চাইতেই চট্টগ্রামের জন্য অনেক কিছুই করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চট্টগ্রামের আগামী দিনের গুরুত্ব বিবেচনা করে চট্টগ্রামকে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ যোগাযোগ কেন্দ্রে পরিণত করার কাজ চলছে। টানেল, বে–টার্মিনালসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর কাজ পুরোদমে চালু হলে চট্টগ্রামের গুরুত্ব অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। ফলে চট্টগ্রামে ব্যাপক সংখ্যক দেশী বিদেশী মানুষের আগমন ঘটবে। তাই আগামী দিনের চট্টগ্রামের কথা মাথায় রেখে এখনই এ হাসপাতালকে উপযোগী করে গড়ে তোলা দরকার। গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনতেই আজকের এই মানববন্ধন উল্লেখ করে খোরশেদ আলম সুজন বলেন, বর্তমানে হাসপাতালটির আয়তন প্রায় .৭৯ একর। আর খালি থাকা বিশাল এলাকার দখল নিয়ে উদ্বিগ্ন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা। আর জায়গাটি যেহেতু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তাই সরকার এখানে অনায়াসেই একটি স্পেশালাইজড কাম জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণ করতে পারে। এখানে
একটি স্পেশালাইজড কাম জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণ হলে জনগণ পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা পাবে এবং সরকারও প্রচুর রাজস্ব পাবে বলে মনে করেন তিনি। সুজন আগামী বাজেটে এ হাসপাতালটি নির্মাণে বরাদ্দ রাখার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নিকট জোর দাবি জানান। এছাড়া চট্টগ্রামের মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যদেরও হাসপাতালটিকে স্পেশালাইজড কাম জেনারেল হাসপাতালে রূপান্তর করার জন্য স্ব–স্ব অবস্থান থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। গতকাল সকাল থেকেই ঘন কুয়াশা এবং কনকনে ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে বিপুল সংখ্যক ছাত্র, যুবকসহ বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলা থেকে সেবা নিতে আসা রোগীরাও এ মানববন্ধনে অংশ নেন। নাগরিক উদ্যোগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইলিয়াছ এবং সদস্য সচিব মোহাম্মদ হোসেনের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আব্দুর রহমান মিয়া, ছালেহ আহমদ জঙ্গী, নুরুল কবির, মোরশেদ আলম, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ, দেলোয়ার হোসেন তাহের, সিরাজদৌল্লাহ নিপু, ইউছুফ মিয়া পারভেজ, মিজানুর রহমান মিজান, ইউসুফ আলী, টিসু মল্লিক, খোরশেদ আলম, নগর ছাত্রলীগ সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু, মোহাম্মদ শাহজাহান, মোহাম্মদ নাছির, মোহাম্মদ আলী, এসকান্দর মিয়া, মোহাম্মদ মুজিব, মোহাম্মদ ইকবাল, সাইফুর রহমান সাইফু, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, মোহাম্মদ দেলোয়ার, মোহাম্মদ ইমরান, উৎপল দত্ত, মীর ইমতিয়াজ, মনিরুল হক মুন্না, আবদুল কাইয়ুম, মোহাম্মদ সায়েম, আবদুর রহিম জিসান, ফরহাদ বিন শুভ, রিয়াজ কাদের, হান্নান খান ফয়সাল, এহতেশামুল আলম, আনন্দ আচার্য, অসিত দেব হৃদয়, সাদ্দাম হোসেন শুভ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।