মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। চরম লক্ষ্যের পেছনে পৌঁছানো যেন জাগতিক নিয়মের এক সঙ্গী। আনন্দ, দুঃখ এসব কিছুকে মেনে আমিত্বের খাতিরে ‘আমি’ নামক সত্তার এক অপূর্ব জাগরণ ঘটাতে প্রস্তুত মানুষ। ইচ্ছা অনিচ্ছার দোলাচলে এগিয়ে চলেছে নিত্যতার প্রকাশ। বিষ্ময়কর আবিষ্কার পৃথিবীকে আনন্দ দিচ্ছে, সাথে সাথে এক কারাগার বসতি স্থাপনে যে সচেষ্ট করে তুলছে তা বোধহয় অজানা থেকে গেছে সকলের অগোচরে। সামিল হচ্ছি নিত্য নতুন বিষয় তৈরি করতে।
আপনার আপনিকে ক্ষতি করে চলেছি অবিরত, হয়তো আনন্দের ক্ষণমুহূর্তের প্রত্যাশায়। বৃক্ষ নিধন, পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা না রাখা, সংক্রামক রোগের উৎপত্তি সব ঘটানোর কাজে আমি বা আমরা কাজ করে চলেছি। নিজের ভালো মন্দ লাগা, পরিবারের সাথে আনন্দঘন আবেগময় পরিবেশ সৃষ্টি থেকে ক্রমশ দূরে সরে গেছি। আয়নায় নিজের নীরব সৌন্দর্যের উপস্থিতি প্রত্যক্ষ না করে পরোক্ষভাবে অন্যের সমালোচনার মুখরতায় প্রকাশে ব্যতিব্যস্ত থাকার প্রবণতা। একি! অসহ্য বেদনা একটা সময়ে ভর করে এসে ধরে বলে, এতদিন কি করেছি তাহলে! ভালো, মন্দের দ্বন্দ্বের বিচারবুদ্ধির লোপ আমিকে গ্রাস করেছে সেই বিশাল প্রাপ্তির ছোঁয়ার উদ্দেশ্যে। পারিবারিক শিক্ষার সুশৃঙ্খলতা দিতে, নিরাপত্তা দিতে অপারগ আমি বা আমরা। তাই এত বিপত্তি। সকাল-সন্ধ্যা কাজের পেছনে দৌড়াচ্ছি, বাহ! বেশ ভালো তো,মন্দ তো নয়, কিন্তু নিজের জন্য সামান্য হিসেবকষাও কি স্বার্থপরতায় পৌঁছায়? মোটেও নয়। ঘুম থেকে উঠে রোজকার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়া যেমন কর্তব্যের পর্যায়ে পড়ে ঠিক তেমনি একবার নিজের পায়ের পাতাজোড়াকে নরম শিশিরভেজা ঘাসে ডুবোতে ভুলে যাই। প্রকৃতির অপার নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভুলে গিয়ে জড়জাগতিক বস্তুর ভোগে লিপ্ত থাকি। এ যে নিজের শুভত্বের মাঝে নিজেই কুড়োল বসানোর অপপ্রয়াস। আনমনে বেসুরো অথবা সুরেলা কন্ঠে গুনগুন করে গান গেয়ে নিজের মধ্যে প্রশান্তির জায়গা খু্ঁজে নেওয়ার চেষ্টা করি না। নবান্নের উৎসবের আমেজ নিতে গ্রামে না গিয়ে প্রতিটাক্ষণ ব্যস্ত থাকি কত পরিমাণ আয় করলে আমি বা আমরা ধনশালী হতে পারবো সেই চিন্তায়। আচ্ছা আমরা এই পৃথিবী নামক গ্রহে কিছু ছাড়াই তো একা এসেছি, চলে যাবো একা হয়ে। কিন্তু একবারও ভাবিনি নিজের জন্য, নিজের পরিবারের হাসিমাখা মুখ দেখা, একান্তে প্রিয়সঙ্গীর প্রিয় মুহূর্তের কাটানো সময় নিয়ে কতটুকু ভেবেছি! ভেবেছি কি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের শান্তি রক্ষায় কি করতে পেরেছি! নিজের বিবেকের কাছে প্রতিমুহূর্তে দায়বদ্ধতার এক পাহাড় গড়ে তুলে চলেছি তো চলেছি। বয়স, মন, বুদ্ধি একসময় পরাজিত হয়ে পড়ে সবকিছুর কাছে তখন মন প্রাণ খোঁজে অপার শান্তি পেতে আর তখনই বিষাদের করুণ সুর বেজে জানান দেয় বড্ড ক্লান্ত প্রান। আর চাইলেও শৈশব, যৌবনে ফিরে নিজের অস্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। তখন সশব্দে গেয়ে উঠতে ইচ্ছে করে… “প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে /মোরে আরো আরো দাও প্রাণ।” ডু্করে কেঁদে উঠে নীরব অভিমান। তারপর শেষবেলায় শান্ত বসুমতীর কোলে মাথা রেখে ক্লান্ত প্রাণের এই আমি নিঃশব্দে গেয়ে চলি…..“ক্লান্তি আমায় ক্ষমা কর প্রভু”।