আমিন জুট মিলের যন্ত্রপাতি স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রির প্রক্রিয়া

বেশ কিছু যন্ত্রপাতি লোপাট, ২৫ একর ভূসম্পত্তিও বেদখল ।। কারখানার কিছু ভবন ইজারা দেয়া হয়েছে, কিছু স্থাপনার ইজারা প্রক্রিয়া চূড়ান্ত

হাসান আকবর | বুধবার , ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

সরকারি সিদ্ধান্তে বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশের অন্যতম বৃহৎ পাটকল আমিন জুট মিলের যন্ত্রপাতি স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রির প্রক্রিয়া চলছে। কোটি কোটি টাকা দামের এসব মেশিনারিজ দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকায় ইতোমধ্যে স্ক্র্যাপে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি লোপাট হয়ে গেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে এই প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকার ভূসম্পত্তি সংঘবদ্ধ একটি চক্র অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। অপরদিকে মিলটির ভূসম্পত্তিসহ অবকাঠামো সরকার ইজারা দেয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।

সূত্র জানিয়েছে, মাথা ভারী প্রশাসন, অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত, নানা অনিয়ম, উদাসীনতা এবং দুর্নীতির ফলে দেশের সরকারি খাতের পাটকল শিল্পে ধস নেমেছে। বেসরকারি খাতে পাটকল শিল্পের ব্যাপক প্রসার এবং বিস্তার ঘটলেও বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন পাটকলগুলোর অবস্থা খারাপ হয়। সরকারি খাতের ২৬টি পাটকল ২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এ তালিকায় চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ আমিন জুন মিলসহ দশটি মিল রয়েছে। বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কারখানার শ্রমিকদের বিদায় করা হয়েছে। তবে আমিন জুট মিলের কিছু কর্মকর্তাকর্মচারী চাকরিতে রয়েছেন। উৎপাদন না থাকলেও বিশাল কারখানার ভূসম্পত্তি এবং কোটি কোটি টাকা দামের যন্ত্রপাতি রক্ষার জন্য বেশ কিছু লোকবল রাখতে হয়।

গতকাল কারখানাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নগরীর মুরাদপুর এলাকার ৭৯ একর জায়গায় ১৯৫৪ সালে আমিন জুট মিল প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৬৬ হেসিয়ান, ২৭৫ সেকিং, ৩৩ সিবিসি ও ১ হাজার ৩৪৪ অন্যান্য লুম নিয়ে গড়ে ওঠা বিজেএমসির বৃহৎ একটি শিল্প কারখানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত আমিন জুট মিলে প্রায় ৫ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। এর মাসিক উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১৮৫ মেট্রিক টন হেসিয়ান, ৯৯৩ মেট্রিক টন সেকিং, ৭২ মেট্রিক টন সিবিসি ও ১৪৪ মেট্রিক টন অন্যান্য লুম। দীর্ঘদিন আগে প্রতিষ্ঠিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত খাতে পরিচালিত কারখানাটির বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বেশ আগেই নষ্ট হয়ে যায়। জোড়াতালি দিয়ে কারখানা চালানোর ফলে উৎপাদন খরচ বাড়ছিল। বাড়ছিল রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ও। এতে দিনে দিনে প্রচুর লোকসানের মুখে পড়া কারখানাটি বন্ধ করে দেয়ার কোনো বিকল্প ছিল না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। জানা যায়, প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে বন্ধ থাকা কারখানার কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ইতোমধ্যে স্ক্র্যাপ হয়ে গেছে। এগুলো আর চালু করার উপযোগী নেই। আধুনিক নানা যন্ত্রপাতি বাজারে চলে আসায় এগুলো অন্য কোথাও বিক্রি করারও সুযোগ নেই। এতে করে কারখানার শত শত কোটি টাকার মেশিনারিজ স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। বিষয়টি নিয়ে সরকারের একাধিক কমিটি কাজ করছে বলে সূত্র জানিয়েছে। বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক বা দেশীয় দরপত্রের মাধ্যমে এই কারখানার সব মেশিনারিজ স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করা হবে।

অপরদিকে কারখানার ভবনগুলো বেসরকারি খাতে ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অফিসার্স ক্লাব, বেশ কয়েকটি দোকানসহ জমি ইজারা দেয়া হয়েছে। আরো কিছু স্থাপনার ইজারা প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে কারখানাটির প্রায় সব স্থাপনা ইজারা প্রদান করা হবে।

আমিন জুট মিলের নামে ৭৯ একর বা প্রায় ৪ হাজার ৭৮০ কাঠা জায়গা রয়েছে। এই জায়গার বর্তমান বাজারদর কমপক্ষে ৫ হাজার কোটি টাকা। এই বিশাল ভূসম্পত্তির মধ্যে প্রায় ২৫ একর জায়গা ইতোমধ্যে বেদখল হয়ে গেছে। বেদখল হয়ে যাওয়া জায়গার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। এই জায়গা উদ্ধারে নানাভাবে চেষ্টা করা হলেও কাজ হয়নি। অবৈধভাবে দখলকৃত জায়গায় ইতোমধ্যে বাড়িঘর এবং দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। সরকার কোনো ক্রাশ প্রোগ্রাম নিলে বেহাত হওয়া জায়গা উদ্ধার সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আমিন জুট মিলের একজন কর্মকর্তা কারখানাটির অবস্থা শোচনীয় জানিয়ে বলেন, যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে। জং ধরেছে লোহায়। আনসারের পাহারা থাকলেও প্রভাবশালীদের অনেকে জায়গা দখল করে নিয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের সীমানা দেয়াল আছে। সীমানার বাইরেও কিছু স্থাপনা রয়েছে। সবকিছু মিলে আমাদের সম্পত্তিগুলো রক্ষা করা কঠিন হয়ে উঠেছে। অনেক ভূমি অবৈধ দখলে চলে যাওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, আমিন জুট মিলের সাবেক কর্মকর্তাকর্মচারীদের অনেকে জায়গা দখল করে বাড়িঘর নির্মাণ করেছে।

আমিন জুট মিলের প্রজেক্ট প্রধান মোহাম্মদ কামরুল হাসান পাটোয়ারী বলেন, কারখানা বন্ধ। সব যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলো আর ব্যবহার করা যাবে না। এগুলো কী করা হবে সেই ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে বেসরকারি খাতে ইজারা দেয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে সরকার। বিভিন্ন ভবন ইজারা দেয়ার সুযোগ রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমধুর বসন্ত এসেছে
পরবর্তী নিবন্ধপঁচাত্তরের খুনিদের বিরুদ্ধে কলম হাতে প্রতিরোধের স্বীকৃতি