আমার সহপাঠী ড. মুহাম্মদ ইউনূস

বেলাল বেগ | শনিবার , ১০ আগস্ট, ২০২৪ at ৬:৪৪ পূর্বাহ্ণ

আমার সহপাঠী ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুরু থেকেই আমাদের নেতা ছিলেন। তাঁর উপদেশ ছাড়া আমার চলার ক্ষমতা ছিল না। অধিকাংশ সময় ক্লাস ক্যাপ্টেন আমি থাকলেও পরীক্ষার প্রথমস্থানের ইজারা নিয়েছিলেন তিনি আজীবনের জন্য। তিনি হচ্ছেন বাংলাদেশের একমাত্র স্কুলছাত্র যে একবার নয় দুবার দুই মহাদেশে গেছেন একজন প্রতিভাদীপ্ত স্কাউট লীডার হিসাবে, প্রথমে আমেরিকা মহাদেশে পরে এশিয়ার ফিলিপাইনে। বহুমুখী প্রতিভার আশ্চর্য সৃজনশীল সুদর্শন মানুষ ইউনূসের লব্ধ জ্ঞানের পরিমাণ যত ছিল, তার চেয়ে বেশি ছিল সেগুলির প্রয়োগ দক্ষতা। একবার প্রফেসর ইউনূস সস্ত্রীক আমাকে দাওয়াত করেছিলেন তাঁর গ্রামীণ ব্যাংক দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমি তাঁর প্রকল্পের ধ্যানধারণাসমূহ এবং সেগুলির নিখুঁত বাস্তবায়ন দেখে খুবই অবিভূত হয়েছিলাম; নিশ্চিত হয়েছিলাম তার সাম্রাজ্য চালানোর সকল ক্ষমতাই আছে; গোপনে মনে হয়েছিল ইউনূস বোধ হয় বাংলাদেশকে একটি ক্যমিউনিস্ট দেশ বানিয়ে ফেলবে। মজার কথা আমি তাঁর ব্যাঙ্কের তত্ত্বকথা নিয়ে মাথা ঘামায়নি কারণ ওসবে আমার কোন কৌতুহল ছিল না; আমি কেবল বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছিলাম আমার বন্ধুর বিস্ময়কর প্রতিভার ফসল গুলি। কলেজে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করতে গিয়ে একটি বছর হারিয়ে ফেললে আমি আর বিস্ময়কর কর্ম বীরের ধরা ছোয়া পাইনি আর কোন দিন আগের মত। তবে মনের মত শেষবারের দেখা হয়েছিল নিউইয়র্কে নোবেল পুরস্কার হাতে আমার মাথার তাজ ইউনূসের সঙ্গে যখন তিনি বিরাট হল ঘরে বক্তৃতা শেষে দর্শকদের প্রচণ্ড ভিড়ে আমাকে আবিস্কার করে বুকে জড়িয়ে ধরে চাপাচাপি শুরু করলেন। তাঁর ঐ আলিঙ্গনের স্মৃতি ছাড়া তাঁর আর একটি কথা মনে পড়ল। সেটি বলার আগে নিজের কথা বলি; সন্দীপের সন্তোষপুরে আমাদের পারবারিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত প্রাথমিক স্কুলে অতি কমবয়সে আধুনিক বাঙালি মানস নির্মাণের জাদুকর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং নজরুল ইসলাম আমার অন্তরে বাঙলার প্রকৃতির সৌন্দর্য এবং বাঙালি জীবনের বীজ বপন করে দিয়েছিলেন। তখন দিনরাত কখনও আবৃত্তির ঢঙে কখনও নিজের সুরে যেখানে সেখানে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল জসীম উদদীনের কবিতা আওড়াতাম। তারপর যত বয়স বাড়ল ইতিহাস পড়লাম ভূগোল পড়লাম দেশোদ্ধারের নেশা লাহোর ইংল্যান্ড অ্যামেরিকায় কত কিছু করেছি শেষ পর্যন্ত শৈশব কৈশোরে আমি যে বেলাল বেগ মানব কিশলয় ছিলাম, আমি হয়ে গেলাম একটি পোড় খাওয়া বাঙালি যার কাছে ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’। আমার সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ বৃটিশের দেখানো ধর্মধাপ্পা রাজনীতির বিষাক্ত ছোবল খেয়ে মারা গেল; একদল লোক জাতির পিতার মাথা ভেঙেছে একই সঙ্গে মানবসভ্যতার শ্রেষ্ঠ ১০০ জন কবির একজন নোবেল লরিয়েট বৃদ্ধ রবীন্দ্রনাথের মাথাও। এমন সময় বাঙালির আর একজন নোবেল লরিয়্যেট ছুটে এসেছেন দেশের দুর্যোগ থামাতে। দেখি তার কাজে শত্রুদের কোন্‌ পক্ষ খুশি হয়। সমগ্র বিশ্ব দম বন্ধ করে তাকিয়ে দেখছে কিংবদন্তী এই বিশ্বনেতা কী করে বুল্‌স আই হিট করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএকঝাঁক সোনালি ডানার বাবুই
পরবর্তী নিবন্ধনোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. ইউনূসের নতুন যাত্রা