[ভূমিকা- ক্রাউন প্রকাশনা থেকে সমপ্রতি প্রকাশিত হলো বারাক ওবামার লেখা স্মৃতিকথামূলক গ্রন্থ ‘আ প্রমিজ্ড্ল্যান্ড’। জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা আর স্মৃতির এক পর্বে তিনি লিখেছেন ২০১০এর ভারতভ্রমণ অধ্যায়টি। ওবামা লিখেছেন, ভারতের প্রতি আগ্রহের মূল কেন্দ্রটি ছিল মহাত্মা গান্ধী ও তাঁর আদর্শ। এখানে সেই অধ্যায়টির অনুবাদ রইল।]
এর আগে আমি কখনোই ভারতে যাইনি, তবে আমার কল্পনাজগতের বিশেষ একটা জায়গা জুড়ে ছিল ভারত। এর কারণ হতে পারে, এই বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী নিয়ে দেশটির বিশাল আয়তন। কিংবা পুরো পৃথিবীর ছয়ভাগের একভাগ মানুষের ধারণক্ষম দেশটির মধ্যে প্রায় দু’হাজার রকমের নৃগোষ্ঠীর বসবাস, ভারত সম্পর্কে আমাকে আগ্রহী করে তুলেছিল। ভাবা যায়, সাত’শোরও বেশি ভাষাভাষী মানুষ একটি দেশে বাস করছে! ভারত হয়তো আমাকে এজন্যও টেনেছিল, এর পৌরাণিক কাহিনীগুলো আমি শুনেছিলাম আমার শৈশবকালে, তখন ইন্দোনেশিয়ায় থাকতাম আমি প্রাচ্যের কিছু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানও আমাকে আকর্ষণ করতো। এছাড়া ভারতের প্রতি টানের পেছনে আছে এই কারণটিও, আমার কিছু ভারতীয় আর পাকিস্তানী বন্ধুবান্ধব ছিল। ওরা আমাকে শিখিয়েছিল কী করে ডাল আর কিমা রাঁধতে হয়! খুব স্বাদ খাবার সেগুলো। ওরা আমাকে বলিউডের সিনেমার প্রতিও আগ্রহী করে তুলেছিল।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে ভারতের প্রতি আমার আগ্রহের মূল কেন্দ্রটি ছিলেন মহাত্মা গান্ধী। লিংকন, লুথার কিং, ম্যান্ডেলার সাথে সাথে গান্ধীও আমার আদর্শ আর চেতনাকে প্রভাবিত করেছিল। তাঁর ‘সত্যাগ্রহ’, সত্য’র প্রতি একনিষ্ঠতা, চেতনাকে সংহত করতে অহিংস শক্তির প্রতি বিশ্বাস আমাকে গভীরভাবে ভাবাতো। আমাদের সমগ্র মানবিক চেতনাবোধ এবং একইসঙ্গে সকল ধর্মের প্রতি তিনি সমান শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। গান্ধীর এই বিশ্বাস আমার ভেতরেও সঞ্চারিত হয়েছিল যে, সকল মানুষের মধ্যে সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য সেই সমাজের একটা দায়বদ্ধতা থাকে, আর তা মেটাতে হয় এর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক দায়িত্বপালনের মধ্য দিয়ে। গান্ধী শুধু বাণী উচ্চারণ করেই থেমে থাকেননি; তিনি তাঁর বিশ্বাস, মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন আন্দোলন, কারাগারবাস আর সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে। ১৯১৫ সালে শুরু করা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে পরবর্তী তিরিশ বছর তাঁর এই লড়াই শুধু ভারতে নয়, সমগ্র বিশ্বেও নাড়া দিয়েছিল। বিভিন্ন বঞ্চিত আর প্রান্তিক জাতিগোষ্ঠীও গান্ধীর মতবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল, এমন কী জিম ক্রো সাউথের কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানরাও স্বাধীনতা চেতনায় জেগে উঠেছিল।
ভারতভ্রমণের একেবারে শুরুতেই মিশেল আর আমি গিয়েছিলাম ‘মানি ভবন’এ। মুম্বাইয়ের শহরতলীতে একটি নিরিবিলি পুরনো দোতলা বাড়ি, যা অনেক বছর ধরে গান্ধীর বাড়ি ও সংগ্রহশালা হিসেবে পরিচিত। নীল শাড়ি পরনে একজন গাইড প্রথমেই আমাদেরকে দেখালেন একটি অতিথিস্মারক গ্রন্থ। ১৯৫৯ সালে লুথার কিং এখানে এসে এই গ্রন্থটিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। তিনি আমেরিকায় জাতিবৈষম্য দূর করার যে সংগ্রামে নিজেকে সামিল করেছিলেন, এর অনুপ্রেরণা তিনি গান্ধীর কাছে পেয়েছিলেন, সেটাই লিখেছিলেন এখানে। এভাবেই তিনি শ্রদ্ধা জানিয়ে গিয়েছিলেন গান্ধীকে।
এরপরে গাইড আমাদেরকে নিয়ে গেলেন ওপরের তলায়, যেখানে গান্ধী থাকতেন। জুতো খুলে আমরা ঢুকলাম অতি সাধারণ একটি ঘরে, নঙাআঁকা মোজাইকের পরিস্কার-মসৃণ মেঝে। বারান্দার দিক দিয়ে মিহি বাতাস আসছে আর মেঝেতে এসে পড়ছে বাইরের মৃদু আলো। তাকিয়ে ছিলাম মেঝেতে পাতা সেই বিছানা আর বালিশের দিকে, যেটা তাঁর কষ্টসহিষ্ণুতার প্রতীক। মেঝেতে রাখা তাঁর কাঠের খড়ম। দেখছিলাম তাঁতবোনার চরকাগুলো, পুরনো আমলের টেলিফোন সেট আর কাঠের নিচু লেখার টেবিলটা। কল্পনায় দেখতে পাচ্ছিলাম আমি, বাদামি চামড়ার একজন শীর্ণকায় মানুষ, সুতির ধুতি পরা, পা দুটো ভাঁজ করে বসা গান্ধীকে। তিনি ব্রিটিশ ভাইসরয়কে কোনো চিঠি লিখছেন বা পরবর্তী পদযাত্রার কোনো পরিকল্পনা আঁকছেন। ঠিক সেই মুহূর্তে খুব ইচ্ছে হচ্ছিল আমার, তাঁর কাছে গিয়ে বসি। জিজ্ঞেস করি, এত অল্প পুঁজি নিয়ে তিনি স্বাধিকারের এই বিপুল-বিশাল স্বপ্ন দেখার শক্তি কীভাবে পেলেন, কোথা থেকে পেলেন! ইচ্ছে হচ্ছিল তাঁর কাছ থেকে জেনে নিই, গভীর হতাশা থেকে কীভাবে আবার ফিরে আসা যায় জীবনে!
সরকারযন্ত্রে অনেকগুলো পালাবদল, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে তিক্ততা-সংঘর্ষ, সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন আর জালের মত বিছিয়ে থাকা দুর্নীতি… এতসব বাধা পেরিয়েও আজকের ভারতকে সফল বলাই যায়। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে অর্থনীতির কাঠামোকে বদলে ফেলার একজন সফল রূপকার হিসেবে মনে রাখবে ভারতীয় ইতিহাস। নিপীড়িত সংখ্যালঘু শিখ জাতিগোষ্ঠীর একজন হওয়া সত্ত্বেও তিনি শীর্ষপদে অবস্থান নিয়ে সমগ্র ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার দক্ষতা আর যোগ্যতা অর্জন করে নিয়েছিলেন। শুধু কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। দুর্নীতিকে দূরে রেখে সাধারণ নাগরিকের জীবনযাত্রার মানকে উন্নত করতে তিনি সবসময়ই সচেষ্ট ছিলেন। আমারো একটি আন্তরিক ও উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল মনমোহন সিং-এর সাথে। আমেরিকার প্রতি ভারতের সন্দেহজনক দৃষ্টিভঙ্গী সব সরকারের সময়েই ছিল। তারপরেও সফরের সময়ে নতুনদিল্লিতে তাঁর সাথে আলোচনায় বসে কিছু পারস্পরিক কল্যাণমুখি পদক্ষেপ নিতে পেরেছিলাম আমরা দুজনে। এরমধ্যে সন্ত্রাসবাদবিরোধী চুক্তি, বৈশ্বিক স্বাস্থ্যনীতি, পারমানবিক সুরক্ষা আর বাণিজ্যচুক্তি উল্লেখযোগ্য।
দিল্লিতে আমাদের ভ্রমণের প্রথম সন্ধ্যায় নৈশভোজের নেমন্তন্ন ছিল প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে। মনমোহন সিং আর তাঁর স্ত্রী গুরশারাণ কাউর এই আয়োজন করেছিলেন। সেই সন্ধ্যায় অন্যান্য আমন্ত্রিত অতিথিরা পৌঁছুবার আগে মিস্টার সিং আর আমি একান্তে খানিকক্ষণ বসলাম, বাড়ির সামনের প্রাঙ্গণে। শুধুই আমরা দুজন, কোনো সরকারি কর্মকর্তা আমাদের কথোপকথনের নোট নেয়ার জন্য ঘাড়ের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন না। অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের একটা কালো ছায়া তিনি দেখতে পাচ্ছেন বিশ্বের আকাশে, এটা তাঁর শঙ্কা বাড়াচ্ছিল, খোলামনে সেটাই বলেছিলেন আমাকে। ভারত যদিও তা কাটিয়ে ওঠার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে; কিন্তু তরুণ প্রজন্ম আর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করা যাবে না, এমনটাই ছিল ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ধারণা। আমাদের আলাপে পাকিস্তান প্রসঙ্গ-ও এলো। মুম্বাইয়ে ২০০৮ জঙ্গী আক্রমণের তদন্তে পাকিস্তান সেভাবে ভারতকে সহায়তা দিচ্ছে না, এটাও তাঁকে ভাবাচ্ছিল। ভারতজুড়ে মুসলিম-বিরোধী একটা প্রচারণা দানা বেঁধে উঠছে, এবং তা শক্তিশালী হয়ে উঠছে তৎকালীন বিরোধী দল হিন্দু জাতীয়তাবাদী ‘ভারতীয় জনতা পার্টি’র প্রশ্রয়ে, এটাও মনমোহন সিং কে দুশ্চিন্তায় ফেলেছিল।
যাই বলি না কেন, ভারতের রাজনীতি আজও আবর্তিত হচ্ছে ধর্ম, জাতি আর বর্ণবাদকে কেন্দ্র করে। ভারতীয়রা যতই বলুক, যতই এটাকে মাহাত্ম দেবার চেষ্টা করুক না কেন, যে, একটা প্রান্তিক জাতিগোষ্ঠী থেকে আসা মনমোহন সিং রাষ্ট্রীয় শীর্ষপদে স্থান করে নেয়াটা বিশেষ আলোকিত একটি বিষয়; বাস্তবিক অর্থে সত্য কিন্তু তা নয়। জাত-পাতের বৈষম্যের কুৎসিত দিকগুলো কখনোই দূর হয়নি ভারতীয় আর্থ-সামাজিক পরিবেশ থেকে। মনমোহন সিং নিজের জনপ্রিয়তা নিয়ে, বেশিরভাগ ভারতীয়র সমর্থন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, তা তো নয়! আসলে, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী ইতালিয়ান বংশোদ্ভুত সোনিয়া গান্ধী প্রধানমন্ত্রীত্ব নিতে প্রত্যাখ্যান করায় মনমোহন সিং এ পদে এসেছিলেন। সোনিয়া গান্ধীও তাঁকে বিশ্বস্ত মনে করেছিলেন এ পদের জন্য। মিসেস গান্ধীর ভাবনায় এ-ও ছিল, আগামীতে কংগ্রেসের দায়িত্বভার নেবেন তাদের পুত্র রাহুল গান্ধী। আর মনমোহন সিং-ই সেই নিরাপদ মানুষটি, যিনি রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে দলের মধ্যে প্রতীদ্বন্দ্বী হয়ে উঠবেন না।
সেই নৈশভোজে সোনিয়া গান্ধী আর রাহুল গান্ধী বসেছিলেন আমাদের সাথে, একই খাবার-টেবিলে। সোনিয়া গান্ধী তখন তাঁর ষাট ছুঁয়েছেন, আভিজাত্য আর দীপ্তিতে তিনি উজ্জ্বল ছিলেন সেই সন্ধ্যায়। ঐতিহ্যবাহী শাড়িতে, গভীর বুদ্ধিদীপ্ত দৃষ্টি আর শান্তস্নিগ্ধ কিন্তু রাজোচিত উপস্থিতি তাঁর। রাজীব গান্ধীর হত্যাঘটনার পরে সোনিয়া গান্ধী তাঁর শোকটাকে শক্তিতে রূপান্তর করেন। ইওরোপীয় দীক্ষায় দীক্ষিত ঘরে-থাকা একজন মা থেকে তিনি হয়ে উঠলেন ভারতীয় রাজনীতির নীতি-নির্ধারক একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। গান্ধী পরিবারের রাজনৈতিক রাজত্ব তখন সোনিয়া গান্ধীর হাতেই অর্পিত হলো। জওহরলাল নেহরু, তাঁর কন্যা ইন্দিরা গান্ধী, ইন্দিরাপুত্র রাজীব গান্ধীর রেখে যাওয়া কংগ্রেসের মশাল স্বাভাবিকভাবেই সোনিয়া গান্ধীকেই হাতে নিতে হয়েছিল।
সেই সন্ধ্যায় আরো একটা বিষয় লক্ষ্য করলাম আমি, সোনিয়া গান্ধী নিজে কথা বলার চাইতে অন্যদের কথা শোনেন বেশি। তিনি খুব ভালো শ্রোতা। মিস্টার সিং যখন রাষ্ট্রীয় বিষয়াদি নিয়ে বলছিলেন, তখন তাঁর কথাতেই সম্মত হচ্ছিলেন তিনি। আর আলাপের প্রসঙ্গ মাঝে মধ্যেই রাহুলের দিকে ঘুরিয়ে দিচ্ছেন। একটা জিনিস স্পষ্ট বুঝতে পেরেছি, একটি তীক্ষ্ম আর শক্তিময় বুদ্ধিমত্তার অধিকারী বলেই তিনি ক্ষমতাকে ধারণ করতে পেরেছেন দ্রুততম সময়ে। অথচ তাঁর পুত্র রাহুল গান্ধীকে দেখে মনে হয়েছে আমার, তিনি সপ্রতিভ, সততার জায়গায় ঠিক আছেন এবং দেখতে আকর্ষণীয়, মায়ের মতোই। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে খানিকটা অপ্রস্তুত এবং অপরিণত। রাহুল ওঁর রাজনৈতিক চেতনা, পরিকল্পনা এসব নিয়ে কথা বলছিলেন ঠিকই, আমার ২০০৮ এর নির্বাচনী প্রচারণা সম্পর্কেও বারবার জানতে চাইছিলেন। তবে কোথায় গিয়ে যেন আমার মনে হচ্ছিল, তিনি সেই ছাত্রটির মতো অনেকটা, যে কোর্সওয়ার্কটা কোনোরকম শেষ করে শিক্ষককে জমা দিতে পারলেই মুক্তি পান। শিক্ষককে খুশি করাই তার লক্ষ্য, বিষয়ের গভীরে ঢুকে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের আগ্রহে তার কমতি আছে।
রাত যত গভীর হচ্ছিল, খেয়াল করলাম, মনমোহন সিং-এর দু’চোখে ঘুমের আভাস। আর সেটা কাটাতেই তিনি বারবার করে জলের গ্লাস হাতে নিয়ে চুমুক দিচ্ছিলেন। মিশেলকে আমি ইশারা দিলাম, চলো, এবার আমাদেরকে উঠতে হবে, ওদেরকে শুভরাত্রি জানানোর সময় হলো। প্রধানমন্ত্রী আর তাঁর স্ত্রী গাড়িবারান্দা পর্যন্ত এগিয়ে এসে বিদায় জানালেন আমাদেরকে। একটু ঢিমে আলোয় মিস্টার সিং-কে কেমন ক্লান্ত-শ্রান্ত দেখাচ্ছিল। আটাত্তর বয়সী মানুষটা ওঁর বয়সের চাইতেও বয়সের ভারে নুয়ে পড়ছেন যেন। গাড়িতে ফিরতে ফিরতে ভাবছিলাম, তিনি অবসরে গেলে এত বড়ো দায়িত্বটা এভাবে অন্য কেউ সামলাতে পারবেন তো? ব্যাটনটা রাহুল গান্ধী ঠিকঠাক ধারণ এবং বহন করতে পারবেন তো? সোনিয়া গান্ধী যেভাবে পরিকল্পনা করছেন, কংগ্রেসকে নিয়ে যেভাবে স্বপ্ন আঁকছেন, রাহুল সেটার সফল সত্যরূপ দিতে পারবেন তো? ভারতীয় জনতা পার্টির ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উত্থানের বিপরীতে দাঁড়িয়ে সেকুলার রাজনীতিকে এগিয়ে নেয়া, একটু কঠিন কাজই বটে!
আমার মতে, মনমোহন সিং-এর কাজের প্রক্রিয়ায় আর আন্তরিকতায় কোনো ঘাটতি নেই। তিনি সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে, নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান ওপরের দিকে তুলতে, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। এসব বিষয়গুলোতে মনোযোগী হলে ধাপে ধাপে সার্বিক একটা উন্নয়ন ঘটে ঠিকই, বড়ো কোনো বিপ্লবের প্রয়োজন পড়ে না। এটা ভারতেও যেমন, আমেরিকাতেও তেমন, এমন কী সারা বিশ্বের জন্যই প্রযোজ্য। তবে ভয় একটা রয়েই যায়। সন্ত্রাস, লোভ, দুর্নীতি, জাতীয়তাবাদ, বর্ণবিদ্বেষ আর ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা যতদিন রাষ্ট্রের ঘাড়ের কাছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস ফেলবে, এই সমস্ত উন্নয়ন অর্থপূর্ণ হবে না। এই নেতিবাচক অনুঘটকগুলো রাষ্ট্র আর সমাজের স্তরে স্তরে লুকিয়ে থাকে। যখনই উন্নয়নের সূচক ভালোর দিকে যায়, ডেমোগ্রাফিক নঙা আলো অভিমুখি হয় কিংবা কোনো ক্যারিশমাটিক নেতা জনগণের ভয়টা দূর করতে সচেষ্ট হয়, তখনই এরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। আমাদের সামনে সেই মহাত্মা গান্ধী আজ নেই। প্রায় সময় ভাবি, সম্ভব হলে তাঁর কাছ থেকে আমি জেনে নিতাম, এই অসহিষ্ণুতা, অস্থিরতা থেকে কিভাবে মুক্তি পেতে পারি আমরা আজ!
লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক