ছোটবেলায় প্রতিদিন সকালে যাঁর চশমা পরা মুখটা দেখেই আমার দিন শুরু হতো, সেই মানুষটা আজ ছবির ফ্রেমে।
আমার বাবা। ছোটবেলায় এক চশমাওলা মানুষ আমার হাত ধরে হাঁটতে শিখিয়েছিলেন। আমি পড়ে গেলে তিনি হাসতেন, আবার আগলে তুলতেন। সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিভাগীয় হিসাবরক্ষক রাশভারি মানুষটি ছিলেন আমার বাবা। তাঁর কণ্ঠ ছিল মোলায়েম, অথচ সিদ্ধান্ত ছিল পাহাড়ের মতো দৃঢ়। রোজ সকালে তাঁর পত্রিকা পড়া, ছায়ার মতো মায়ের পেছনে ঘোরা, আর রাতে আমাকে গল্প শোনাতে শোনাতে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া– সেই মানুষটা আমার বাবা। ছোটবেলায় যার কাঁধে চড়ে আমি দুনিয়াটা দেখতাম, যার এক হাসি আমাকে সাহস দিতো হাজার ঝড়ে আজো সেই মানুষটিই আমার জীবনের নায়ক। আমার বাবা। সময় বদলেছে, আমি বড় হয়েছি, কিন্তু আপনি যে ভালোবাসার ছায়া দিয়েছেন, তা আজো ঠিক আগের মতোই গভীর। তিনি ছিলেন খুব সাধারণ এক মানুষ, কিন্তু আমার চোখে তিনি ছিলেন অসাধারণ। শৃঙ্খলার প্রতীক, মমতার আশ্রয়, আর নিঃশব্দ ভালোবাসার এক অদৃশ্য পাহাড়। আমি যখন প্রথম হেঁটেছিলাম, তিনি ছিলেন পাশে। যখন প্রথম হার মেনেছিলাম, তিনিই বলেছিলেন– ‘পারে না, এমন কিছু নেই।’ তাঁর সেই কথা আজো আমার জীবনের পাথেয়। বাবা আজ আর এই পৃথিবীতে নেই। তাঁর ব্যবহৃত টাই, তাঁর হাতের লেখা চিঠি, আর কিছু পুরনো ছবি– এসবই এখন আমার কাছে একেকটা জীবন্ত স্মৃতি। বাবা না থাকলেও, তাঁর শিখিয়ে যাওয়া মূল্যবোধ, তাঁর নীরব ভালোবাসা, আর ছায়ার মতো স্নেহ– আজো আমাকে আগলে রাখে প্রতিটা পদক্ষেপে। তাঁর ব্যবহৃত পুরনো টাইটা এখনো আমি রেখে দিয়েছি, সেই টাইতে আজো লেগে আছে তাঁর ভালোবাসা, পরিশ্রম আর ঘামের গন্ধ। আমি যতই বড় হই, যতই এগিয়ে যাই, বাবার সেই ছায়া আমার পেছনে থাকেই– অদৃশ্য এক আশ্রয় হয়ে। বাবা আপনার জন্য আজো প্রতিটা শ্বাসে ভালোবাসা, আর চোখের কোণে একটু জল।