শৈশবে বাগানে খেলতে ভালোবাসতাম। সুগন্ধি ফুল খুব টানতো আমায়। বিশেষ করে সাদা ফুল। পাড়ার মানু আপার গাছের টগর ফুলের বিনিময়ে দিয়েছিলাম ঘরের চাইনিজ কাপড়ের ফুল। পুকুরের জলে পা ডুবাতে খুব ভালো লাগতো। কচুরিপানার বেগুনিফুলও তুলেছি কতো। পুকুরে বাগানে খেলতে খেলতে প্রথম ছড়া লিখি পুকুরে বাগানে। ময়ূখ ম্যাগাজিনে সেটা ছেপে দেন আমার বড় ভাইয়া মুহাম্মদ আলীশাহ্। লেখার পোকা এভাবে মাথায় চেপে যায় আমার। মুকুল মেলায় ষোল ডিসেম্বর বের হতো ময়ূখ আর একুশে ফেব্রুয়ারিতে চয়ন। আমরা উন্মুখ থাকতাম কখন কপি পাবো ছাপা অক্ষরে দেখবো লেখা। তখনতো ফেসবুকের চল ছিলো না। ময়ূখে ফি বছর লেখা ছাপা হতো।
পাশাপাশি রাশেদ ভাইয়ের সম্পাদনায় দুরন্ত ম্যাগাজিনেও লিখতাম। কিশোর কাল, উন্মাদ এরকম ম্যাগাজিনে লেখা ছাপা হতো। জাতীয় দৈনিকে লেখা এসেছিলো আমার বড় ভাইয়া মারা যাবার পর। ভাইয়া বেঁচে থাকলে কতোইনা খুশি হতেন। বাবা লেখা খুটিয়ে পড়তেন। পত্রিকা কাটতে দিতেন না। জেরোক্স করতে বলতেন। বাবা আর ভাই–বোনের পাঠ্যাভ্যাস ও বই সংগ্রহের বাতিক ছিলো। আমার বড় ভাই পাণ্ডুলিপি গুছিয়ে রেখেছিলেন। তখন লন্ড্রির সাথে প্লেইন নিউজ পেপার দিতো। সেগুলো জমিয়েও তিনি লিখতেন।
তিনি মারা যাবার পর তাঁর শিশু কিশোর উপযোগী গল্পের বই মুক্তিযোদ্ধার ভাই বের করেন তাঁর বন্ধুরা। অনুপম সেন স্যার ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন। বাবার সাথে দেখাও করতে এসেছিলেন বাসায়। অঙ্গনের সনজীব দাদা, মিলন চৌধুরী দাদারাও দেখা করতে এসেছিলেন। প্রচ্ছদ করেছিলেন পীযূষ দস্তিদার দা। ভূমিকায় তিনি নিজেই সেকথা লিখে গিয়েছিলেন। মুকুল মেলা সংগঠনে লিখতে লিখতে মহিলা সম্পাদক ও ময়ূখের সাহিত্য সম্পাদক হয়ে উঠি পরবর্তীকালে।
আমার জীবসঙ্গীরও কচিহাত নামে একটি সংগঠন ছিলো। যেটা স্কুলে পড়াকালীন গড়ে তুলে ছিলো। পরবর্তীতে রাদিয়া প্রকাশন গড়ে ওঠে।
রাদিয়া প্রকাশনে বই প্রকাশের পাশাপাশি সাহিত্য সভা হতে থাকে মাঝে মাঝে। কবি রাশেদ রউফ ভাইয়ার প্রত্যক্ষ উৎসাহে এখানে সাহিত্য সভাগুলো অনুষ্ঠিত হয়। রাশেদ ভাই সব সময় লেখালেখিতে উৎসাহিত করেন। আমি টিটু ডালিয়া আমরা সবাই তাঁর অবিরল উৎসাহে লিখি। চট্টগ্রাম লেখিকা সংঘে যুক্ত হই আমি। ফাহমিদা আমিন আপা প্রথম বলেছেন যেতে। একবার লেখিকা সংঘের সাহিত্য প্রতিযোগিতায় কবিতায় প্রথম হই আমি। গল্পে প্রথম হয়েছিলেন ফারহানা তেহ্সীন। আরেকজন লেখিকা জিনাত আজম আপাও আমাকে লেখিকা সংঘে যুক্ত হতে উৎসাহিত করেন। সব সময় লিখে যেতে বলেন আপা।
চট্টগ্রাম একাডেমিতেও যুক্ত হই। আরো যুক্ত হই শিশুসাহিত্য একাডেমিতেও। আমার কন্যাও লেখালেখির ব্যাপারে উৎসাহিত করে আমাকে। এসব আলোকিত মানুষের উৎসাহে আমার লেখালেখির পথ চলা। সমস্ত প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে এগিয়ে চলছি আমি, এগিয়ে চলছে আমার লেখালেখি।