আমাদের পশু প্রীতি

পান্না আহমেদ | শনিবার , ৫ জুন, ২০২১ at ৬:৪৭ পূর্বাহ্ণ

আমাদের দেশে কুকুর নিধন বা ঝেঁটিয়ে কুকুর বিদায় প্রকল্প চলছে! পুরো ফেসবুক সয়লাব এ ধরনের খবরে। আমি খুব একটা কুকুর প্রেমি নই, বরঞ্চ কুকুর দেখলে আমার ভয়ে হাতপা ঠাণ্ডা হয়ে আসে। তবুও কখনো কোন কুকুরের মৃত্যু কামনা করেছি এটা মনে পড়ে না। আমার আশেপাশে অনেকেই কুকুর বিড়াল ভালোবাসে। অনেক বেশি দায়িত্ববান তারা। তাই এই কুকুর নিধন প্রকল্পের নিষ্ঠুরতার পরিমাণ বিবেচনা করে মন খারাপ হলো।
আমি যে এলাকায় থাকি এখানে এক বিরাট পাউন্ড শপ। চোখে পড়ার মতো বিরাট। চার বছর আগে প্রথম যখন এই এলাকায় আসি, এতবড় শপ দেখে আমার কাছে গিয়ে দেখতে ইচ্ছে হলো। কন্যা আমার মতিগতি বুঝতে পেরে বললো ‘শোন আম্মু এখানে তোমার জন্য কিছু নাই। শুধু শুধু ঢোকার চেষ্টা করোনা প্লিজ। এটা কুত্তাবিলাইর জিনিসপত্রের দোকান। আসলেই কাছে গিয়ে দেখি বড়বড় রঙিন পোস্টার ছবি সম্বলিত দুনিয়ার ঝলমলে জিনিস পত্রের ডিসপ্লে। ভেতরে গিয়ে দেখার ইচ্ছে ছিলো। চেপে গেলাম। একা বের হলে যাবো। একদিন বিকেলে একাই বের হলাম। উদ্দেশ্য ওই পাউন্ড শপ।
আলোকিত এক বিশাল আর অন্যসব ডিপার্টমেন্ট স্টোরের মতোই থরে থরে সাজানো পশরা নিয়ে দোকান। যাই দেখি সব সুন্দর সুন্দর জিনিস। ডগ বেল্ট ক্যাট বেল্ট নানান ডিজাইনের। কত রকমের খাবার! না পড়ে দেখলে হঠাৎ মনে হবে সব মানুষের জন্যই।এতো পেস্ট্রি কেক কুকিজ চকলেট! বলে শেষ করা যাবে না। পোশাক কম্বল জ্যাকেট কত কি। আবার জেন্ডার ভিত্তিকও পোশাকআশাক। কুকুর বেড়াল এদের পরম বন্ধু। খুব কমই দেখেছি ব্রিটিশ যাদের হাতে কুকুর বা বেড়াল নেই। তবে কুকুর বেশিই চোখে পড়েছে। এরা নির্ধারিত সময়ে ওয়াক করতে বের হয়। কুকুরের স্বাস্থ্য রক্ষায় এরা সচেতন। আশেপাশে এইসব দেখি আর ফেসবুকে আমাদের দেশের কুকুর হত্যাযজ্ঞের খবর পড়ি! মর্মাহত হই। যে দেশে মানুষের দাম নেই। স্বামী বাবা ভাইয়ের সামনে মেয়েরা অনিরাপদ সে দেশে কুকুরের চিন্তা করা বিলাসিতা।
একদিন কোন এক মার্কেটের লিফ্‌টে এক চমৎকার সুন্দরী ভদ্র মহিলা উঠলেন, সাথে আরো তাগড়া সুন্দর হ্যান্ডসাম এক কুকুর নিয়ে। মহিলা ঢুকেই বললো হাই। হাসি মুখ। কুকুরের গলায় ভারি বেল্টে নানান চিহ্ন। কন্যা বললো আম্মু ইনি ব্লাইন্ড। কুকুরটা দেখো ব্লাইন্ড কেয়ারের। আমি বুঝতেই পারিনি। এই কুকুর নাকি জীবন থাকতে ওই মহিলার ত্রিসিমানায়ও কাউকে আসতে দিবেনা। কি সুন্দর। আমি তখন কুমিল্লায়। স্কুলে পড়ি। তিতাস গ্যাসের কাজের জন্য কোরিয়ান কোম্পানি ইয়ংওয়ান এলো কুমিল্লায়! আর তারা নাকি কুমিল্লার সব কুকুর সাবাড় করে ফেলেছিল শুনেছিলাম। কুকুরের অসহায়ত্ব ভীষণ আঘাত করেছিল। আমার এমন অনেক পরিচিত আছেন যাদের পশুপ্রেম পূজা করার মতো। বাড়িতে কুকুর বেড়াল প্রতিপালন করা আজকাল আমাদের দেশে প্রচুর।
তারপরও অনেক বেওয়াশির বেড়াল কুকুর পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফুটপাত রেলওয়ে স্টেশনে বেওয়ারিশ মানুষের ভীড়। ক্ষুধা দারিদ্র্যে অসহায় মানুষের আর্তনাদ যেখানে নিষ্ফল সেখানে পশুর জন্য যত্ন আর মানবিকতা আশা করা বাহুল্য। যেখানে এখনো মেয়েশিশুর জীবন আর নিরাপত্তা দুঃখজনক সেখানে কুকুর বেড়ালের নিরাপত্তা? যে দেশে, যেখানে মানুষ অসহায় সেখানে কুকুর বা পশু রক্ষায় আমরা কতটা সচেতন? সন্দেহ আছে। আমি আমার সন্তানের নিরাপত্তা দিতে পারছিনা, পাড়ার কুকুরের নিরাপত্তা? ভাষা নেই কিছু বলার বা অনুভবের। তবুও আমাদের মানবিকতার সমৃদ্ধি ঘটুক, আমার সকল প্রাণীর জন্য বাসযোগ্য একটা পরিবেশ তৈরি করার ইচ্ছার বাস্তবায়ন হোক এটাই মনোবাঞ্ছনা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিপদগ্রস্ত
পরবর্তী নিবন্ধআলোকিত নগর গড়তে মেয়র সমীপে তাগিদনামা