আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে : খসরু

| শুক্রবার , ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৯:৫২ পূর্বাহ্ণ

বার এবং বেঞ্চ এক সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার কথা থাকলেও এদেশে তা হচ্ছে না। পাশাপাশি দেশের বিচার বিভাগকে সরকার ওয়েপন হিসেবে ব্যবহার করছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটি গণতান্ত্রিক এবং মানবাধিকার ধ্বংস করার অস্ত্র। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানস্থ লেকশোর হোটেলে ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্ট আয়োজিত ‘কারেন্ট স্টেট অব জুডিসিয়ারি : এ টুল টু অপ্রেস অপোজিশান ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। খবর বাংলানিউজের।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে আজকে না আইনের সুরক্ষা আছে, না সংবিধানের সুরক্ষা আছে, না কোড অব কনডাক্ট আছে। বিচারকদের বক্তব্যগুলো আজকে আমাদের কি বলে। শুধু যে সংবিধানের সুরক্ষা নেই এমনটি না, এটি পুরোপুরি কোড অব কন্ডাক্ট। এমন একটি প্রেক্ষাপটে আজকে আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে। সাংবিধানিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে। রাজনৈতিক অধিকার হরণ করা হচ্ছে। এ মুহূর্তে আমার মনে হয় বাংলাদেশের মানুষের মনে একটি প্রশ্ন, দেশের সবচেয়ে বেশি ওয়েপন (অস্ত্র) হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বিচার বিভাগকে। এটি গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার একটি অস্ত্র। এমনকি এটি গণতান্ত্রিক এবং মানবাধিকার অধিকারগুলো ধ্বংস করার অস্ত্র।

ত্রয়োদশ সংশোধনীর পর থেকে দেশে ‘ডাউন হিল’ বা নিম্নমুখী অবস্থা যাচ্ছে এমন মন্তব্য করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যাদের এসব বিষয়গুলো সুরক্ষা দেওয়ার কথা, তারা যদি ওয়েপন হিসেবে ব্যবহৃত হয় তাহলে একটি দেশ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। অনেক বিচারপতি বলেছেন বাংলাদেশের যে ‘ডাউন হিল’ বা নিম্নমুখী অবস্থা যাচ্ছে। যা বড় আকারে শুরু হয়েছে তা ত্রয়োদশ সংশোধনী এবং পরবর্তীতে তা বাতিল করার বিষয়টি থেকে। আমি রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে মনে করি এই ত্রয়োদশ সংশোধনী হয়েছিল জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে। সেখানে কেউ দ্বিমত করার মতো কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। সেদিন দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী এবং সুশীল সমাজ মিলে সংশোধনীটি বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সংসদে পাস হয়েছে।

তিনি বলেন, এমন একটি সংশোধনী যখন সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং পরবর্তীতে এটি যখন কোর্টের কেউ চ্যালেঞ্জ করে। আমি পরিষ্কারভাবে মনে করি সংবিধান প্রণয়ন করা এবং আইন তৈরি করার দায়িত্ব হচ্ছে সংসদের। বিচার বিভাগের নয়। আর যে বিষয়টি বিচার বিভাগের নয় এমন একটি বিষয় নিয়ে দায়িত্বহীনভাবে পরিবর্তন করে সেটি কোনোভাবেই সাংবিধানিক নয়।

সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করার বিষয়টি যথাযথ নিয়ম মেনে করা হয়নি বলে মন্তব্য করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সংবিধান যদি পরিবর্তন করতে হয় তাহলে সেটি সংসদকে করতে হবে। এবং সেটিরও একটি নিয়ম আছে। যে বিষয়টি সংবিধানের পরিবর্তন এসেছে অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সেটি কেউ যদি পরিবর্তন করতে হয় সেখানে দুই থেকে তিনটি বিষয় আছে। এক নম্বরে হচ্ছে সেটিকে আপনার দলীয় ইশতেহারের মাধ্যমে জনগণের কাছে নিয়ে আসতে হবে। এটি ফান্ডামেন্টাল ব্যাপার। আর দ্বিতীয় হচ্ছে যদি নির্বাচন না হয়ে থাকে, তাহলে আপনাকে গণভোটে যেতে হবে। আর তৃতীয় হচ্ছে যেটি আমরা করেছিলাম, সমস্ত রাজনৈতিক দলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে। আর এই তিনটির বাইরে গিয়ে বিচারকেরাও কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না সংসদও কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না।

তিনি আরও বলেন, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিল। সেটি নিয়ে বিচার বিভাগ থেকে রায় এসেছে। মানে তারা সব দায়িত্ব পালন করছে। তারা রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করছে পাশাপাশি ঐতিহাসিক ইতিহাসবিদের দায়িত্ব পালন করছে। জিয়াউর রহমান ঘোষণা করেছে কি করেনি এটি তো ইতিহাসবিদদের কাজ, তারা বলবে। দেশের কোর্টের যে দায়িত্ব আইনকে রক্ষা করা সে কাজ তারা করছে না।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে ব্যারিস্টার কায়সার কামালের সঞ্চালনায় সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি মিফতাহ উদ্দীন চৌধুরী, . শাহদীন মালিক ও ড. বোরহান উদ্দীন খান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসবুজ পাহাড়ে সোনালি রঙ
পরবর্তী নিবন্ধদ্রব্যমূল্য : বৈশ্বিক মূল্যবৃদ্ধি ও সিন্ডিকেটকে দুষলেন বাণিজ্যমন্ত্রী