বিএনপির এক দফা ও সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনে এখন থেকে অন্যান্য দলের পাশাপাশি মাঠে থাকবে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এনডিএম প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। যুগপৎ আন্দোলনে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। এই কমিটির সঙ্গে গতকাল জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) প্রতিনিধিদল বৈঠক করে। অবশ্য এর আগে বিএনপি প্রস্তাবিত ‘রাষ্ট্র মেরামতের’ ২৭ দফাকে প্রকৃত কল্যাণমুখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য যথেষ্ট নয় মন্তব্য করেন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। খবর বাংলানিউজের।
তিনি বলেন, আমরা বিএনপির কোনো আন্দোলনে যাব না। তবে হঠাৎ করেই সুর পাল্টে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিলেন তিনি।
আমির খসরু বলেন, এনডিএমের সঙ্গে আমাদের একটি বৈঠক হয়েছে। আমরা সবাই ঐকমত্যে পৌঁছেছি এক দফা আন্দোলনের বিষয়ে। এনডিএম আমাদের এক দফা দাবিকে সমর্থন করেছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনে তারা (এনডিএম) আমাদের সঙ্গে আগামী দিনের যুগপৎ আন্দোলনে যোগ দিচ্ছে। তিনি বলেন, এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত তারা আমাদের সঙ্গে এক হয়ে আন্দোলন করবে। আমরা এক সঙ্গে এই স্বৈরাচারের পতন ঘটাব। আগামীর যুগপৎ আন্দোলনে এনডিএমে কার্যকরী ভূমিকা থাকবে।
অহিংস ও সুশৃঙ্খল আন্দোলনের ফলে বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচি পরিণত হচ্ছে মহাসমাবেশে, এমন মন্তব্য করে আমির খসরু বলেন, এই আন্দোলন কেন গতি পাচ্ছে, কেন জনগণ এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হচ্ছে? আমি মনে করি, সুশৃঙ্খল ও অহিংস আন্দোলন করার জন্য বিএনপির আন্দোলন এত গতি পাচ্ছে এবং এত জনসমর্থন পাচ্ছে। তিনি বলেন, জনগণের সমর্থন নিয়ে আজ আমরা এই অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছি। সুতরাং বিএনপির এখন প্রস্তুতি লাগে না। বিএনপি যখন সমাবেশ ডাকে, তখনই সেটা মহাসমাবেশে পরিণত হয়। বিএনপির এখন সমাবেশ হয় না, প্রতিটি কর্মসূচি মহাসমাবেশে পরিণত হয়।
আমির খসরু বলেন, আজ বিএনপি যে আন্দোলন করছে সেটা জনগণের জন্য মুক্তির আন্দোলন। এই আন্দোলনে আজ বাংলাদেশের সব শ্রেণী–পেশার মানুষ সম্পৃক্ত হয়েছে। আন্দোলনের সবচেয়ে বড় সফলতা হলো এই আন্দোলন সুশৃঙ্খল ও অহিংস।
তিনি বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আর যাদের জনগণের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই, তাদের আন্দোলন সহিংস হবে। বিএনপির সঙ্গে যারা এই যুগপৎ আন্দোলনে আছে, তাদের তো সহিংসতার দিকে যাওযার কোনো প্রয়োজন নেই। পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই জনগণ যাদের সমর্থন দেয়, তারা সহিংসতা করে না।
ভোটচুরির প্রকল্পে যা কিছু আছে, সরকার তাই ব্যবহার করছে– উল্লেখ করে আমির খসরু বলেন, আজ যদি বাংলাদেশে নির্বাচনের পরিবেশ থাকত, তাহলে এতগুলো দেশের ডেলিগেট বাংলাদেশে আসত না। প্রধানমন্ত্রীর অফিসে বসে তারা যদি বলে যেতে পারে, তারা এ দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় এবং আইনের শাসন দেখতে চায়, তাহলে আমি মনে করি, সেদিনই তাদের সুইসাইড করার দরকার ছিল।
গতকাল শুক্রবারের বৈঠক শেষে এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, বিএনপি যে এক দফা আন্দোলনের ডাক দিয়েছে, তার সঙ্গে আমরা একাত্মতা প্রকাশ করে গত ১৫ জুলাই এক দফা আন্দোলনের ডাক দিই। দাবি আমাদের একটাই, বর্তমান সরকারের অধীনে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাব না। আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা এই দেশ ও জাতিকে নতুন একটা নির্বাচন দেব।
তিনি বলেন, নতুন নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হতে পারে, সে বিষয়ে আমাদের প্রস্তাবনাগুলো অফিসিয়ালি বিএনপির কাছে উত্থাপন করেছি। পাশাপাশি বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনে যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করবে, সেগুলো আমরা আমাদের মতো করে পালন করব, আলাদাভাবে। আমাদের একদফা হলো এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন।
ববি হাজ্জাজ বলেন, ১৭ আসনের নির্বাচনে যেভাবে একজন প্রার্থীর ওপর হামলা হয়েছে এবং জাতিসংঘ থেকে শুরু করে ১২টি দূতাবাস আওয়াজ তুলেছে, তাতে পরিষ্কার যে এই সরকার ও নির্বাচন কমিশন সঠিক নির্বাচন দিতে পারে না।
তিনি বলেন, আমরা চাই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দিকে মুক্তি দেওয়া হোক। একইসঙ্গে রাজনৈতিক কারণে বিএনপিসহ যত বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী আছে, তাদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক যেসব মামলা দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো প্রত্যাহার করা হোক।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, এনডিএমের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মমিনুল আমিন, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার শহিদুল আওয়াল, আইনবিষয়ক সম্পাদক নুরুজ্জামান হীরা প্রমুখ।