আমাদের অর্জনগুলোকে ধরে রাখতে হবে

| শনিবার , ৬ মার্চ, ২০২১ at ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

আমাদের জনসংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু সম্পদের পরিমাণ সেই হিসেবে বাড়ছে না। বরং কমছে। আমাদের গ্যাস, পানি ও পর্যাপ্ত বিদ্যুতের সংকট রয়েছে। আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, দেশে দ্রুত নগরায়ণ হচ্ছে। আর নগর গড়ে উঠছে অপরিকল্পিতভাবে। ফলে নগরে বৈষম্য ও দারিদ্র্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু উন্নয়নের সুযোগ সবাই পাইনি। নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন হয়েছে। কিন্তু সামাজিক ক্ষমতায়ন তেমনভাবে হয়নি।
ইন্টারনেট বলি, মোবাইল বলি-দেখতে দেখতে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একটা বিপ্লব ঘটে গেছে। দেশের উন্নয়নের জন্য এটা একটা ইতিবাচক দিক। মানুষের যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছে, সেটা বোঝা যায় ক্রয়ক্ষমতা দেখলে।
আমরা সবকিছু বিবেচনা করে আটটি অগ্রাধিকারকে বেছে নিয়েছি। এক. বিশাল তরুণসমাজের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি। আগামী কয়েক বছরে আমরা পাঁচ লাখ যুবসমাজকে প্রশিক্ষণ দেব। তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব। দুই. শহর পরিকল্পনা ও এর দারিদ্র্য দূর করা। তিন. জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা দেওয়া। চার. অতিদারিদ্র্য দূরীকরণ। পাঁচ. নারীর ক্ষমতায়ন। ছয়. মানসম্মত শিক্ষা। সাত. স্বাস্থ্যসেবা। আট. আর্থিক অন্তর্ভুক্তি। যেমন বিদেশগামী মানুষদের আমরা ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।
বলা জরুরি যে, আমাদের অনেক অর্জন আছে। আমরা সমস্যার কথা বলতে বলতে অর্জনের কথা ভুলে যাই। এসডিজিতে ১৭টি লক্ষ্য। ১৬৯টি টার্গেট। এটি একটি বিশাল ক্ষেত্র। এর মধ্যে প্রায় সবকিছু অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটা অর্জন করতে পারলে যেকোনো দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। এমডিজির পরিসর কম ছিল। এটা ছিল অর্জনযোগ্য। এখান থেকে আটটি অগ্রাধিকার বেছে নিয়েছি। বিষয়টি বাংলাদেশের বাস্তবতায় দেখতে হবে। এই দেশের বিশাল একটা জনগোষ্ঠী তরুণ। এটা একদিকে বড় রকমের সুযোগ। একই সঙ্গে হুমকিও হতে পারে, যদি এই তরুণ জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানো না যায়।
এসডিজির বিদ্যমান টার্গেটগুলো সব দেশের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়। এসডিজিতে কয়েকটি বিষয় খুব গুরুত্ব পেয়েছে। যেমন সমতার বিষয়টি এমডিজি থেকে এসডিজিতে অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো টেকসই নগরায়ণ। বাংলাদেশ ধীরে ধীরে নগরায়ণের দিকে যাচ্ছে। টেকসই নগর ও কমিউনিটি একটা নতুন ইস্যু। অনেক বিষয় কম বেশি জানি। টেকসই নগর ও কমিউনিটির এ বিষয়টি আমাদের আগে ছিল না। এখানে অনেক বেশি মেধা ও গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে।
এসডিজির তিন নম্বর লক্ষ্য হলো স্বাস্থ্য। এসডিজির এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। কারণ, অতিরিক্ত স্বাস্থ্য খরচের জন্য প্রতি বছর ৪০ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যের মধ্যে পড়ে যেতে পারে।
খাদ্য সংরক্ষণ, খাদ্যনিরাপত্তা, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হওয়া উচিত। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে খাদ্যনিরাপত্তা বিভাগ থাকা জরুরি। খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়ে যতটা গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন, ততটা কখনো দেওয়া হয়নি। আমাদের নীতিনির্ধারকেরাও এসব বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে ভাবেন না। যখন কৃষির কথা আলোচনা হয় তখন শুধু উৎপাদনের দিকটি ভাবা হয়।
বাংলাদেশে শিক্ষার আকাঙ্ক্ষা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা মানসম্পন্ন শিক্ষা পাচ্ছে না। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর ভারতে নেহরুসহ অন্যরা মাধ্যমিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষার একটি ভিত্তি দাঁড়িয়েছে। কিন্তু মাধ্যমিক শিক্ষা তেমন এগোতে পারেনি।
মাধ্যমিক শিক্ষায় সরকারের পূর্ণ সহযোগিতা নেই, আবার ব্যবস্থাপনা কমিটির মধ্যে সুশাসন নেই। ফলে মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রটি বিভিন্নভাবে সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একজন নবম, দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে আলাদাভাবে বাংলা, ইংরেজি, গণিতের মেধা যাচাই করতে গেলে দেখা যায় তার শিক্ষার মান তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণির মানের। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এক হাজার নতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য এটা কোনো অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক নতুন চিন্তা আনতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে